পরিষ্কার নদীতীর, নিরাপদ রাস্তা মিলবে কি, প্রশ্ন নয়া ভোটারদের

একটি বেসরকারি নার্সারি স্কুলে ছোট ছোট ছেলেমেয়ের ক্লাস নিচ্ছিলেন টাকির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পালপাড়ার বাসিন্দা করবী পাল। প্রথম ভোট দেবেন, কেমন লাগছে? প্রশ্ন শুনে টাকি কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীটি বলেন, ‘‘দারুণ একটা ব্যাপার। খুব আনন্দ হচ্ছে। কবে ভোট দিতে যাব, সে জন্য তর সইছে না। ছোট থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে ভোট কেন্দ্রে গেলেও ভোট দিতে না পারায় খুব কষ্ট হত। এ বারে নিজে ভোট দিতে পারব বলে ভাল লাগছে।’’ করবী বলেন, ‘‘ভোটের দিনটা স্মরনীয় করে রাখতে বাগদা চিংড়ির মালাইকারি খেয়ে পছন্দের লাল চুড়িদার পরে সকালে ভোট কেন্দ্রে যাব।’’

Advertisement

নির্মল বসু

টাকি শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:২০
Share:

শুভজিৎ চন্দ, সাদ্দাম হোসেন, কাবেরী পাল।

একটি বেসরকারি নার্সারি স্কুলে ছোট ছোট ছেলেমেয়ের ক্লাস নিচ্ছিলেন টাকির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পালপাড়ার বাসিন্দা করবী পাল। প্রথম ভোট দেবেন, কেমন লাগছে? প্রশ্ন শুনে টাকি কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীটি বলেন, ‘‘দারুণ একটা ব্যাপার। খুব আনন্দ হচ্ছে। কবে ভোট দিতে যাব, সে জন্য তর সইছে না। ছোট থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে ভোট কেন্দ্রে গেলেও ভোট দিতে না পারায় খুব কষ্ট হত। এ বারে নিজে ভোট দিতে পারব বলে ভাল লাগছে।’’ করবী বলেন, ‘‘ভোটের দিনটা স্মরনীয় করে রাখতে বাগদা চিংড়ির মালাইকারি খেয়ে পছন্দের লাল চুড়িদার পরে সকালে ভোট কেন্দ্রে যাব।’’

Advertisement

ইছামতীর পাড়ে টাকি শহরের উন্নয়নের হার নিয়ে খুশি এলাকার বড় অংশের মানুষ। বিশেষ করে পর্যটনকে কেন্দ্র করে সারা বছর যে ভাবে দূর-দূরান্তের মানুষ টাকিকে বেছে নিচ্ছেন, তাতেও গর্বিত বাসিন্দারা। ফলে ভোট নিয়ে অন্য রকমের উচ্ছ্বাস আছে নতুন ভোটারদের মধ্যে। কিন্তু সেই সঙ্গে রয়েছে সতর্কতাও।

‘‘জনপ্রতিনিধিদের কাছে আমার একটাই দাবি, আপনারা স্বচ্ছ্বতার সঙ্গে কাজ করুন,’’ বললেন করবী। তাঁর বক্তব্য, টাকিতে অনেক উন্নতি হয়েছে। আরো প্রয়োজন। রাস্তা, আলো, বিশেষ করে মহিলাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন। কারণ পড়াশোনা সেরে মাঝে মধ্যেই রাস্তা দিয়ে ফিরতে রাত হয়। তখন নিরাপত্তার অভাব বোধ করি। নদীর ধার পরিষ্কার রাখা জরুরি।

Advertisement

টাকির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাসনাবাদ দেবী মোড়ে বাড়ি পায়েল হালদারের কথায়, ‘‘বাবা-মা তো বটেই, দিদিরাও ভোট দেয়। অথচ আমি কেন ভোট দিতে পারব না, তাই ভেবে খুব দুঃখ হত। এ বারে ভোটার হয়ে সেই কষ্ট দূর হয়েছে।’’ পায়েল বলেন, ‘‘আমি চাই, গরিব মানুষের কষ্ট দূর করতে যেন তৎপর হন জয়ী প্রার্থী। বন্ধ হয়ে যাওয়া ইছামতী নদীর উপর সেতু তৈরির উদ্যোগ-সহ বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের পরিষেবা এবং রাস্তার উন্নতি করাও দরকার।’’ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠায় যে ভাবে দিনকে দিন বহিরাগতদের ভিড় বাড়ছে এলাকায়, তাতে নিরাপত্তার দিকটিতেও আরও নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন এই নয়া ভোটার।

১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নজরুল সৈকত এলাকার বাসিন্দা মোহন্ত ঘোষ বলেন, ‘‘ প্রথম ভোটার বলে গর্ব বোধ হচ্ছে। সব দলের পক্ষ থেকে আমার ভোটটার দাবি করা হচ্ছে বলে ভাল লাগছে। তবে এটাও মনে হচ্ছে, আমার ভোটটা যেন ভূল মানুষকে দিয়ে নষ্ট না করি।’’ পছন্দের হাল্কা রঙের জিন্স এবং গেরুয়া জামা পরেই ভোট দিতে যাবেন বলে জানালেন তিনি। এই তরুণের কথায়, ‘‘রাস্তাঘাট, আলো, বস্তি উন্নয়ন, পরিবেশের উন্নতি, নিকাশি ব্যবস্থার জন্য মানুষ ভোট দেয়। অথচ সকলে প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের সময়ে অনেকেই তা ভূলে যান। তেমনটা যেন না হয়’’

টাকি পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কুণ্ডুপাড়ার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন। টাকি কলেজ থেকে বের হওয়ার মুখে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। সাদ্দাম বলেন, ‘‘প্রথম ভোটার হয়ে কাকে ভোট দিলে কাজ হবে, তা ভেবে বেশ টেনশন হচ্ছে। বিশেষ করে রাস্তা, নিকাশি ব্যবস্থা, পানীয় জল, বিদ্যুৎ পরিষেবা চায় মানুষ। কিন্তু বেশির ভাগ দেখা যায় নির্বাচনের সময়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রতিশ্রুতি দেওয়া জন প্রতিনিধিরা একবার জয়ী হলে আর বড় একটা এলাকা মাড়ান না। বড় জোর জিতে একদিন খিচুড়ি খাইয়ে সব প্রতিশ্রুতির কথা ভূলে যান।’’ সেটা যেন না হয়, এটাই তাঁর চাহিদা। সাদ্দামের কথায়, ‘‘ভোট দিতে যাব বেশ সেজেগুজে। বৃষ্টি হলে ছাতা নেব। না হলে সানগ্লাস তো অবশ্যই পরব। আর পোশাক কী পরব, তা ভাবছি ক’দিন ধরে।’’

৪ নম্বর ওয়ার্ডের দেবীবাবুর বাগান এলাকায় বাড়ি জয়ন্ত মণ্ডলের। তাঁর কথায়, ‘‘ছবি দেওয়া পরিচয়পত্র পেয়ে নিজের একটা পরিচয় হয়ে ভাল লাগছে। আরও ভাল লাগছে এটা ভেবে যে, এ বার থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে আমরাও সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’’ জয়ন্ত বলেন, ‘‘যে ভাবে পুকুর ভরাট হচ্ছে, তাতে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। নদীর ধার নোংরা করে রাখা হচ্ছে। তাতেও দূষণ ছড়াচ্ছে। এ সব বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদেরও আরো সচেতন হতে হবে।’’ পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে টাকিকে আরও সাজিয়ে তোলা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

প্রথম ভোট দিতে পারবেন বলে এখন থেকেই রীতিমতো উত্তেজিত চন্দপাড়ার বাসিন্দা শুভজিৎ চন্দ। তাঁর কথায়, ‘‘নির্বাচনের দিনে খাওয়া সেরে দুপুরে মা-বাবার সঙ্গে ভোট দিতে যাব। ’’ কিন্তু তাঁর চিন্তা, ‘‘প্রার্থীরা কেবল প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তা রাখার কথা ভূলে যান। তাঁদের কাছে আমার আবেদন, দয়া করে টাকিকে আরও সুন্দর করে গড়ে তুলতে দলমত ভূলে সকলে মিলে কাজ করুন।’’ এই তরুণ মনে করেন, নিকাশি ব্যবস্থা, বাঁধ মেরামতি জরুরি। টাকির ইছামতীর অন্য পাড়ে বাংলাদেশের সাথক্ষিরা। সীমান্তবর্তী এলাকা বলে হোটেল-লজে কারা আসছেন-থাকছেন সে বিষয়ে পুর কর্তপক্ষ এবং পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। বেকার ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থান জোর দেওয়াও দরকার।

—নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement