সবুজ দ্বীপ। —নিজস্ব চিত্র।
কাশ্মীরের ডাল লেকের শিকারার আমেজ এ বার গঙ্গাতেও!
হাউজবোটে প্রাচীন হালিশহরের স্মৃতির শরিক হয়ে সাধক রামপ্রসাদ, রানি রাসমনি, টেরাকোটা স্থাপত্যের শহরকে ফিরে পাবেন পর্যটকেরা। রঙ-বেরঙের স্টিমারও ভাসবে হালিশহরের গঙ্গায়।
মাঝ গঙ্গায় চর জেগেছিল অনেক আগেই। সেই চর এখন সবুজ দ্বীপ নামে পরিচিত। গাছ-গাছালি, পাখি সবই আছে। অনেকেই সেখানে চাষবাসও শুরু করেছেন। কিন্তু এ বার হালিশহর পুরসভার উদ্যোগে নতুন কলেবরে সাজতে চলেছে এই সবুজ দ্বীপ। আপাতত ছোট ছোট স্টিমারে দ্বীপ ভ্রমণ দিয়েই ইকো ট্যুরিজমের প্রথম অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। বাংলার হস্তশিল্পের হাটও বসবে ওই দ্বীপে। ইচ্ছেমতো কেনাকাটির পর ক্লান্ত লাগলে বিশ্রামও নিতে পারবেন পর্যটকেরা। পরের ধাপে হাউজবোট ও পান্থশালা তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে।
বছর কয়েক আগেই হালিশহর ও হুগলির মধ্যে ওই দ্বীপটিতে রোপওয়ে চালানোর পরিকল্পনা হয়েছিল। সেইমতো সব প্রস্তুতিও সারা হয়েছিল। কিন্তু মাটি পরীক্ষার পর রোপওয়ের জন্য গঙ্গার মধ্যে টাওয়ার বসানো কতটা নিরাপদ হবে তা নিয়ে বাস্তুকারেরা প্রশ্ন তোলেন। মাটি পরীক্ষার রিপোর্টও টাওয়ারের উপযোগী নয় বলে তাঁরা জানান। এরপরে প্রকল্পটি বাতিল হয়। অবশেষে রোপওয়ের বদলে শিকারা ও স্টিমারের পরিকল্পনায় সিলমোহর পড়েছে। হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যান অংশুমান রায় বলেন, ‘‘ইতিহাস সমৃদ্ধ জনপদ হালিশহর। কিন্তু মফস্বল হওয়ায় তেমন ভাবে পর্যটক পাই না। এই প্রকল্প কলকাতার মানুষকে সপ্তাহান্তে হালিশহরমুখী করবে বলে আমাদের আশা।’’ ইতিমধ্যেই হালিশহরে একটি সংগ্রহশালা আছে। হালিশহরের অনেক ছবিই এই সংগ্রহশালায় নজর কাড়ে ঠিকই। কিন্তু দর্শনার্থী নেই বললেই চলে। সারাদিন আলো জ্বালিয়ে বসে থাকেন পুরসভার কর্মীরা মাত্র। অংশুমানবাবু বলেন, ‘‘মানুষ এখন বড় ইতিহাস বিমুখ। বাইরে থেকে এসে হালিশহরকে জানার আগ্রহ আছে এমন মনের মানুষ ক’জন? কিন্তু জলভ্রমণের মধ্যে দিয়েই যদি হালিশহরের ইতিহাসকে চেনানো যায় তার চেষ্টাই করব আমরা।’’ শিকারা, হাউজবোট, স্টিমার এ সব কিছুর খসড়া তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। দ্বীপটি সাজাতে পরিকল্পনামাফিক গাছ লাগানোও হচ্ছে। পাড় ধরে রাখতে নানারকম উন্নত মানের গাছ লাগানো হচ্ছে। দ্বীপের মধ্যে বসার জন্য তৈরি হচ্ছে নরম ঘাসের লন। জেটি ঘাট থেকে দ্বীপের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্বে হালিশহরের জন্ম থেকে এই সময়ের হালিশহরের ছবি তুলে ধরা হবে পর্যটকদের সামনে। তার মধ্যেই চলবে মাটির পুতুল থেকে খেসের শাড়ি কিংবা ডোকরার গয়না বা বাঁশ-বেতের জিনিসপত্রের বিকিকিনি। স্টিমারগুলিতে বিভিন্ন রকমের খাওয়ারের রেঁস্তোরাও থাকবে। বীজপুরের বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় এবং পাশেই নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘এই প্রকল্প অনেক বেশি পর্যটক টানবে। কারণ গঙ্গায় ভ্রমণের চাহিদা থাকলেও এখনও অবধি ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই।’’
এখন অপেক্ষা একদিনের ভ্রমণের পর্যটকদের কাছে হালিশহরের পাখির চোখ হয়ে ওঠার।