গৃহশিক্ষকের কাছে ছেলেকে পড়তে নিয়ে যাচ্ছিলেন মা। রাস্তায় হঠাৎ বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে ওই শিশুর মাথায়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় সে। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে তড়িদাহত হন মা-ও। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে হিঙ্গলগঞ্জের বাঁকড়া গ্রামে। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম অষ্টমী মণ্ডল (৩৫)।
এ দিকে, ঘটনার পরে ছেঁড়া তার সারাতে গেলে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় বিদ্যুৎকর্মীদের। পুলিশ গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে শান্ত করে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঝড়-বৃষ্টি হলেই বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে। বিদ্যুৎকর্মীদের খবর দেওয়া হলেও তাঁরা ঠিক সময়ে আসেন না। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এর আগেও মৃত্যু হয়েছে। তা ছাড়া, ছোটখাট দুর্ঘটনাও ঘটে।
ঝড়-বৃষ্টি হলেই বিদ্যুতের তার যত্রতত্র ছিঁড়ে পড়ে থাকার অভিযোগ আছে গ্রামাঞ্চলের বহু এলাকায়। যার দুর্ঘটনাও ঘটেছে অতীতে। মাস দু’য়েক আগে হিঙ্গলগঞ্জেরই কাটাখালিতে বিদ্যুতের ছেঁড়া তারের সংস্পর্শে এসে মারা যান এক যুবক। সম্প্রতি ফলতায় তালান্দা গ্রামে বৃষ্টিতে ইলেকট্রিক তার ছিঁড়ে পড়ে। এক বাসিন্দা ওই তার ঠিক করতে যাওয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। মাসখানেক আগে বাসন্তীর কেষ্টবাবুরচক এলাকায় সফিক সর্দার নামে এক যুবক রাস্তার ছেঁড়া তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। বিদ্যুৎকর্মীরা দেরিতে আসার জন্যই এ ধরনের ঘটনা বার বার ঘটছে বলে অভিযোগ। তা ছাড়া, বিদ্যুতের তার, খুঁটি পুরনো হয়ে গেলেও সময় মতো বদলানো হয় না বলে অভিযোগ। তা ছাড়া, জমা জলে তার ছিঁড়ে পড়ে থাকলে তা বাইরে থেকে বোঝাও যায় না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।
হিঙ্গলগঞ্জের ঘটনায় পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সান্ডেলরবিল পঞ্চায়েতের বাঁকড়া ডোবর গ্রামে বাড়ি সুশান্ত মণ্ডলের। কর্মসূত্রে তিনি বেঙ্গালুরুতে থাকেন। সুশান্তবাবুর দুই সন্তানের মধ্যে ছোট ছেলে সুদীপ পড়ে প্রথম শ্রেণিতে। এ দিন সকালে বছর পাঁচেকের সেই ছেলেকে অষ্টমীদেবী পড়াতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, হঠাৎই তার ছিঁড়ে পড়ে সুদীপের মাথায়। অষ্টমীদেবী ছেলের গা থেকে তার ছাড়াতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। ইসাক গাজি এবং পিয়ার গাজি ছিলেন ঘটনাস্থলে। মা-ছেলেকে উদ্ধার করতে গিয়ে তাঁরাও ওই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পড়েন। তা দেখে গ্রামের একটি ছোট্ট মেয়ে চিৎকার করে। তখন সকলে বেরিয়ে আসে। গ্রামের একজন ট্রান্সফর্মার থেকে বিদ্যুতের সুইচ বন্ধ করে দেন। প্রত্যেককে সান্ডেলেরবিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক অষ্টমীদেবীকে মৃত ঘোষণা করেন।
চিকিৎসকেরা জানান, পেটের বেশ খানিকটা পুড়ে গিয়েছে সুদীপের। তাকে আরজিকর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বাকিদের চিকিৎসা চলছে স্থানীয় হাসপাতালেই।
স্থানীয় মানুষের দাবি, মা-ছেলের সামনেই ছিঁড়ে পড়েছিল তার। যদিও বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্মীদের দাবি, শুক্রবার রাতে ঝড়-বৃষ্টিতে তার ছিঁড়েছিল। সে খবর তাঁদের দেওয়া হয়নি। সংস্থার হিঙ্গলগঞ্জের স্টেশন সুপার জ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা শনিবার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করি। বর্ষা-বৃষ্টির সময়ে তারের অবস্থা খতিয়ে দেখা হয়। কোনও তার বদলানোর দরকার থাকলে তা-ও করা হয়।’’ তাঁর দাবি, এ ক্ষেত্রে ওই এলাকায় একটি বড় গাছ আছে। যার গুঁড়ি খুব মোটাসোটা হওয়ায় সেটি কাটা সম্ভব হচ্ছে না। ওই গাছের জন্যই তার ছিঁড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।