রাস্তা পেরিয়েই পোশাক বদল

২০০৩ সালে ওই রাস্তা একবার মাটি ফেলে সংস্কার করা হয়েছিল। পঞ্চায়েত থেকে রাস্তার দু’ধারে গাছও লাগানো হয়। কিন্তু তারপর থেকে দীর্ঘ দিন ধরে কোনও সংস্কার হয়নি। এক কিলোমিটার রাস্তায় অল্প বৃষ্টিতেও জল জমে। আর ভারী বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। জল পেরিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মথুরাপুর শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৭ ০২:১৪
Share:

ভোগান্তি: মথুরাপুরে ছবিটি তুলেছেন দিলীপ নস্কর

ভিজে গামছা পরে হাতে-পায়ে কাদামাখা এক যুবক পুকুরে হাত পা ধুয়ে চলে গেলেন একটি মুদি দোকানের সামনে। সেখানে লম্বা লাইন। এক এক করে দোকানে ঢুকছেন সকলে। জামা কাপড় বদলে ছুটছেন ট্রেন ধরতে।

Advertisement

মথুরাপুর ১ ব্লকের কৃষ্ণচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের কাটানদিঘি মাদ্রাসার মোড় থেকে সদিয়াল গ্রামের যাতায়াতের রাস্তা জলমগ্ন। কাদায় ভরা। বর্ষার পুরো সময়টাই এই অবস্থা থাকে। ওই রাস্তা ধরে হাঁটাচলা করেন, বাড়ি থেকে কাজে বেরোনোর আগে ব্যাগে অন্য পোশাক নিয়ে নেন। মুদির দোকানে ব্যবস্থা আছে। সেখানেই জামাকাপড় বদলে ফেলেন।

২০০৩ সালে ওই রাস্তা একবার মাটি ফেলে সংস্কার করা হয়েছিল। পঞ্চায়েত থেকে রাস্তার দু’ধারে গাছও লাগানো হয়। কিন্তু তারপর থেকে দীর্ঘ দিন ধরে কোনও সংস্কার হয়নি। এক কিলোমিটার রাস্তায় অল্প বৃষ্টিতেও জল জমে। আর ভারী বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। জল পেরিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

Advertisement

জাফর খাঁয়ের দোকান-সংলগ্ন বাড়ি। তারই একটা ঘর ছেড়ে দিয়েছেন গ্রামের লোককে পোশাক বদলের জন্য। জাফরের কথায়, ‘‘লোকের খুবই সমস্যা হয়। সে জন্যই গ্রামের লোকের পাশে থাকতে চেয়ে ওঁদের পোশাক বদলের সুযোগটুকু করে দিয়েছি। এ আর এমন কী!

কৃষ্ণচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি জসিমুদ্দিন গাজির অভিযোগ, রাস্তাটি সংস্কারের জন্য সব দফতরে জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। জেলা যুব তৃণমূলের সহ সভাপতি ওই এলাকার বাসিন্দা শান্তনু বাপুলি বলেন, ‘‘রাস্তা সারানোর বিষয়ে জেলা পরিষদকে জানাব।’’ রাস্তার অবস্থা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন মথুরাপুর ১ বিডিও মুজিবর রহমান

ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন সদিয়াল, ডাকাতমার, কাটানদিঘি-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁরা নিত্য প্রয়োজনে ওই রাস্তা দিয়ে বাসে, ছোট গাড়িতে করে ডায়মন্ড হারবার, মথুরাপুর স্টেশন বা রায়দিঘি, কাশীনগর বাজারে যান। ছাত্রছাত্রীরা কাদা জল ঠেলেই স্কুলে যায়। জলকাদার জন্য অনেক মায়েরা কোলে করে ছেলেমেয়েদের রাস্তাটুকু পের করে দেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, এর মধ্যে আবার কাটানদিঘি পূর্ব পাড়ায় কোনও নলকূপ নেই। ওই জল কাদা ঠেলে অন্য পাড়া থেকে জল আনতে হচ্ছে মহিলাদের। রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা নেই। সন্ধ্যা নামলে বিপদ বাড়ে। দু’দিকে জঙ্গল থাকায় সাপ ঘুরে বেড়ায় রাস্তার উপরে। জলের নীচে গাছের শিকড়, শামুক, বা ঝিনুকে পা পড়ে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে অনেকের। রোগী নিয়ে রাস্তা পেরোতে সমস্যায় পড়েন আত্মীয়-স্বজনেরা। ঝুড়িতে বসিয়ে অনেককে মাথায় বসিয়ে পার করানো হয়। ওই রাস্তাটি সংস্কারের দাবিতে একাধিকবার কাটানদিঘি মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বাসিন্দারা। প্রশাসন রাস্তা ঠিক করার আশ্বাস দেয়। কিন্তু কাজ হয়নি বলে অভিযোগ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement