ইদে হারানো শিশুকে মায়ের কাছে ফেরাল দেগঙ্গার ছাত্রী

মেয়েটির নাম রাজিয়া খাতুন। দেগঙ্গার ইয়াজপুর হাই মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী। ইদের পরব থাকায় বসিরহাটে দিদির বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে ফিরছিল সে। রাজিয়া জানায়, বারাসত-টাকি রোড থেকে অটোয় উঠতে গিয়ে সে দেখে, একটি বাচ্চা তার জামা ধরে টানছে। বাচ্চাটির সঙ্গে কেউ নেই।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৭ ১২:৫০
Share:

পুলিশের সঙ্গে রাজিয়া খাতুন। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

খুশির ইদের দিন বাড়িতে আত্মীয়-পরিজনেদের ভিড়। নতুন জামাকাপড়, নমাজও পড়তে হবে। তাই একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরছিল ১৪ বছরের মেয়েটি। সোমবার সকালে বারাসত-টাকি রোডের মতো ব্যস্ত রাস্তায় তার জামা টেনে ধরে বছর তিনেকের এক শিশু। টলমল পায়ে সবে হাঁটতে শিখেছে। নতুন জামা-প্যান্ট পরা। সঙ্গে কেউ নেই। কেঁদে কেঁদে মুখ-চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। হারিয়ে যাওয়া সেই শিশুটিকে থানায় নিয়ে বাবা-মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিল মেয়েটি। তার আর নমাজ পড়া হয়নি। কিন্তু একমাত্র পুত্র সন্তানকে ফিরে পেয়ে আল্লাহর কাছে মেয়েটির জন্য দোয়া করেছেন শিশুটির মা-বাবা।

Advertisement

মেয়েটির নাম রাজিয়া খাতুন। দেগঙ্গার ইয়াজপুর হাই মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী। ইদের পরব থাকায় বসিরহাটে দিদির বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে ফিরছিল সে। রাজিয়া জানায়, বারাসত-টাকি রোড থেকে অটোয় উঠতে গিয়ে সে দেখে, একটি বাচ্চা তার জামা ধরে টানছে। বাচ্চাটির সঙ্গে কেউ নেই। খোঁজ করলে স্থানীয় লোকজন কিছুই জানাতে পারেননি। অটোটি ছেড়ে দেয় রাজিয়া। বহুক্ষণ শিশুটিকে নিয়ে আশপাশে খোঁজ করে। কিন্তু কেউই কিছু বলতে পারেননি।

বারাসত-টাকি রোডে সব সময়ে তীব্র গতিতে গাড়ি চলে। বাচ্চাটাকে ফেলে রেখে গেলেও বিপদ। এ দিকে, রাজিয়ারও বাড়ি ফেরার তাড়া। বাচ্চাটির মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া হয় মেয়েটির। মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে শিশুটিকে নিয়ে সে হাজির হয় দেগঙ্গা থানায়। পুরো ঘটনা পুলিশ কাকুদের জানিয়ে বলে, ‘‘আপনারা খোঁজ শুরু করুন।’’ শিশুটিও তখন ভয়ে আঁকড়ে বসেছে রাজিয়ার কোলে। পুলিশকে রাজিয়া বলে, ‘‘ওর বাবা-মায়ের খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত আমি ওর সঙ্গেই থাকব।’’

Advertisement

বাচ্চাটির ঠিকানা জানতে আশপাশের বিভিন্ন থানায় ফোন করে পুলিশ। শুরু হয় পঞ্চায়েত প্রধান ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও যোগাযোগ। অন্য দিকে, ওই শিশুটি হারিয়ে গিয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে তার গ্রামেও। শেষে বসিরহাট থানার বেগমপুর-বিবিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গরিফুল্লা মণ্ডলের মাধ্যমে খোঁজ মেলে পরিবারের। থানায় ছুটে আসে শিশুটির পরিবার।

শিশুটির দাদু শাহাজান সরলা বলেন, ‘‘আমরা সকাল ৯টা নাগাদ ইদগাহে গিয়েছিলাম। তিন বছরের নাতি মনিরুলকেও নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।’’ মনিরুলের মা সালেমা বলেন, ‘‘আমার এই একটিই বাচ্চা। ওকে নতুন জামা-প্যান্ট ও জুতো পরিয়ে রান্নার কাজ করছিলাম। ও যে গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে এত দূর চলে যাবে, ভাবতে পারিনি।’’

পুলিশ জানিয়েছে, সম্ভবত বাড়ি থেকে বেরিয়ে কারও পিছু পিছু ২ কিলোমিটার দূরে সদর রাস্তায় উঠে এসেছিল ছোট্ট মনিরুল।

রাজিয়ার বাবা মহম্মদ সাক্কের আলি পেশায় দিনমজুর। পাঁচ ছেলেমেয়ের সবার ছোট রাজিয়া। মেয়ে ওই একরত্তি শিশুকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে জেনে খুশি সাক্কেরও। তিনি বলেন, ‘‘ইদের দিনে এর চেয়ে ভাল কাজ হয় না। আল্লা ওকে রহম করুক।’’

দেগঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক লিটন রক্ষিত বলেন, ‘‘মেয়েটিও তো ছোট। কিন্তু ভয় পেয়ে বাচ্চাটাকে না নিয়ে এলে কী যে হতো, বলা মুশকিল।’’

কী হতো, তা ভাবতে গিয়ে আতঙ্কে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন মনিরুলের মা। রাজিয়াকে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছিলেন। আর এত ঘটনা যাকে নিয়ে, সেই মনিরুলও যেন বুঝতে পেরেছে অনেক কিছু। কিছুতেই ছাড়তে চাইছিল না রাজিয়াকে। থানা থেকে মায়ের কোলে বাড়ি ফেরার সময়ে ফিরে ফিরে দেখছিল তাকে। সে সময়ে বাবাকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে রাজিয়াও। যা দেখে চোখের জল চাপতে পারেননি পুলিশ অফিসারেরাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement