শহিদ দিবস উদযাপনের মধ্যেই দুর্ভোগ

বনগাঁ শহরের বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু পালিত। নাগেরবাজারের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় বনগাঁ স্টেশন থেকে ট্রেন ধরেছিলেন। কোনও রকমে বসার জায়গা পেয়ে যান। জানালেন, ট্রেনটি বনগাঁ ছেড়ে চাঁদপাড়া-ঠাকুরনগর-গোবরডাঙা যখন পৌঁছল, তাতে আর তিলধারণের জায়গা নেই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭ ০৩:২১
Share:

সভার-পথে: সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে নৌকায় করে কলকাতায় যাচ্ছেন মানুষজন। ছবি: নির্মল বসু,

দিনের একটা সময়ে বাস-ট্রেনে থিকথিকে ভিড়। সকাল ১০টার পর থেকে উধাও বাস-ছোট গাড়ি। দু’একটি গাড়ি যা চোখে পড়েছে, তাতে ঠেসেঠুসে উঠেছেন অনেকে। ২১ শে জুলাই পরিচিত এই ছবিই দেখা গেল জেলায় জেলায়।

Advertisement

বনগাঁ শহরের বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু পালিত। নাগেরবাজারের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় বনগাঁ স্টেশন থেকে ট্রেন ধরেছিলেন। কোনও রকমে বসার জায়গা পেয়ে যান। জানালেন, ট্রেনটি বনগাঁ ছেড়ে চাঁদপাড়া-ঠাকুরনগর-গোবরডাঙা যখন পৌঁছল, তাতে আর তিলধারণের জায়গা নেই। ভিড়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে সওয়া ১০টা নাগাদ ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে নামেন কৃষ্ণেন্দুবাবু। প্রতিদিন এখান থেকে অটো ধরে স্কুলে যান। সময় লাগে ১০ মিনিট। কিন্তু এ দিন লাগল প্রায় ৫০ মিনিট। ওই শিক্ষকের কথায়, ‘‘ক্যান্টনমেন্টে নেমে কোনও অটো, বাস পাওয়া যাচ্ছিল না। যাও বা ছিল, তাতে ওঠার জন্য দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হল।’’

ঢাকার বাসিন্দা মহম্মদ বাবুল মিঞা চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যাবেন বলে এ দিন সকালে বনগাঁ স্টেশনে এসেছিলেন। ভিড় দেখে কয়েকটি ট্রেন ছেড়ে দেন। ১০টার পরে ট্রেনে ওঠেন। ডাক্তারের দেখা পাবেন কিনা, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন।

Advertisement

একই চিত্র ছিল ব্যারাকপুর-বারাসত রোডে। বাস কম। কিছু রুটের বাস বারাসত থেকে ছাড়লেও ব্যারাকপুর হয়ে বালি বা অন্য দিকে যাওয়ার বদলে মাঝপথেই যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। যুক্তি, তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে যাওয়ার ভাড়া আছে। এ নিয়ে সকালে বালি–বারাসত রুটের একটি বাসের যাত্রীদের সঙ্গে চালক ও বাসকর্মীর বচসা বেধে যায়। যাত্রীদের চাপে বাসটি ব্যারাকপুর-চিড়িয়ামোড় পর্যন্ত গেলেও ইঞ্জিনে গোলযোগের অজুহাত দেখিয়ে চালক গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেন বলে অভিযোগ। সোদপুর, ব্যারাকপুর, বেলঘরিয়া, নৈহাটি, শ্যামনগরে বাসের অভাবে অটো, কিংবা ট্যাক্সির উপর ভরসা করতে গিয়েও নাকাল হতে হয়েছে যাত্রীদের। রাজীব সেন নামে সোদপুরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘সোদপুর থেকে শ্যামবাজার যেতে সকাল সাড়ে ১০টায় ট্যাক্সি দর হেঁকেছিল ৬০০ টাকা। অটোয় ওঠা নিয়ে রীতিমতো মারামারি করতে হয়েছে। তাতেও ভাড়া বেশি।’’

ভোগান্তি: গাড়ি নেই। বাদুড়ঝোলা হয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন নিত্যযাত্রীরা। মন্দিরবাজারে। ছবি: দিলীপ নস্কর

মন্দিরবাজারে পোলের হাটমোড় থেকে পাথরপ্রতিমার রামগঙ্গায় ভূতল পরিবহ‌ণ বাসে করে যাবেন বলে বেলা সাড়ে ১২টা থেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক দম্পতি। প্রায় তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বাস না পেয়ে তাঁরা ছোট গাড়িতে বাদুরঝোলা হলে রওনা দেন গন্তব্যের দিকে।

ডায়মন্ড হারবার, রায়দিঘি, মন্দিরবাজার, ফলতা, কুলপি এলাকায় বাস যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিভিন্ন মোড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে যাত্রীদের। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ ছোট গাড়িতে করে দু’তিনগুণ বেশি ভাড়া গুনে গন্তব্যে গিয়েছেন। সারা দিন রাস্তায় গাড়ির অভাবে নাজেহাল হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে কাকদ্বীপ মহকুমার মানুষজনকেও।

তবে অন্য চিত্রও দেখা গিয়েছে। সকাল ১০টার পরে বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখায় ডাউন লাইনে ট্রেন ছিল অন্য দিনের তুলনায় বেশ ফাঁকা।

ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল থেকে ধর্মতলাগামী তৃণমূল কর্মীদের যাওয়ার দু’রকমের ব্যবস্থা করেছিল দল। বৃহস্পতিবারই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রতিটি ব্লকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কারা কী ভাবে ধর্মতলা পৌঁছবেন। জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি তথা নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে ঠিক করে দিয়েছিলাম, কারা কী ভাবে আসবেন। যাতে সাধারণ মানুষের হয়রানি কম হয়, তাই এই ব্যবস্থা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement