পানিহাটি পুরসভা।—ফাইল চিত্র।
দোতলা থেকে তির বেগে নামছেন তিন জন। পানিহাটি পুর ভবনের পিছনের দরজা দিয়ে তাঁদের কোনও রকমে বেরিয়ে যেতে দেখলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। তাঁরাও তখন এ দিক-ও দিক পালিয়ে লুকোচ্ছেন। কারণ? তাণ্ডব চলছে পানিহাটি পুরসভায়। একদল লোক ভাঙচুর চালাচ্ছে। অভিযোগ, সকলেই ছিল মত্ত অবস্থায়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার এই ঘটনায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে পানিহাটি পুরসভায়। অভিযোগের তির সেখানকারই প্রাক্তন কাউন্সিলর জয়ন্ত দাসের দিকে। আর এক প্রাক্তন কাউন্সিলর সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাটি নিয়ে বুধবার অভিযোগ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক এবং উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসকের কাছে।
অভিযোগ, এই হামলার মূলে আছে আর্থিক পাওনাগন্ডা। ব্যারাকপুরের মহকুমা শাসক আবুল কালাম আজাদ ইসলাম বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। বুধবার দুপুরের পরে ছুটি হয়ে যাওয়ায় বেশি দূর এগোনো যায়নি। পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসারের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছি। পুরসভায় সিসি ক্যামেরা রয়েছে। তার ফুটেজও চাওয়া হবে।’’ তবে জয়ন্তবাবুর মোবাইল বন্ধ থাকায় তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পানিহাটি পুর বোর্ডের মেয়াদ ফুরিয়েছে কয়েক মাস আগে। বর্তমানে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক। অভিযোগ, পুরনো বোর্ডের অনেক কাউন্সিলরই বিভিন্ন প্রয়োজনে পুর কর্মীদের নির্দেশ পাঠান। নির্দেশ না মানলে ওই কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সন্ময়বাবু বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুরসভার এক কর্মীর থেকে খবর পাই, একদল দুষ্কৃতী পুর ভবনে হামলা চালিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের ঘর ভাঙচুর করছে। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর জয়ন্ত। এর পরেই দুষ্কৃতীরা দোতলায় উঠে পুরসচিব গৌরাঙ্গ দাস, এগজিকিউটিভ অফিসার শ্যামল গুণ এবং ইঞ্জিনিয়ার পিনাকী মজুমদারের নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করেন।’’
সন্ময়বাবুর অভিযোগ, দোতলায় উঠে দুষ্কৃতীরা এক অস্থায়ী মহিলা কর্মীকে মারধর করে। এরই মধ্যে ওই তিন আধিকারিক পিছনের সিঁড়ি দিয়ে পালিয়ে যান। পুরসভার প্রেক্ষাগৃহের শৌচাগারে তাঁরা লুকিয়ে ছিলেন বলে নিরাপত্তারক্ষীরা জানান। তাঁদের খোঁজে দুষ্কৃতীরা সেখানেও পৌঁছে যায়। সেখানে এক ইলেকট্রিশিয়ানকে মারধর করে পালায় তারা।
বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, নতুন বাড়ি তৈরির অনুমোদনে টাকার লেনদেন হয়। কিন্তু নির্বাচিত বোর্ড না থাকায় তাতে কাউন্সিলরদের সইয়ের দরকার হয় না। পুর কর্তৃপক্ষই সেই অনুমোদন দেন। তা নিয়েই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কিছু কাউন্সিলরের গোলমাল চলছে। এমনকি, কিছু ঠিকাদারের বিল ছাড়া নিয়েও পুর আধিকারিকদের উপর অহেতুক চাপ দেওয়া হচ্ছে।
পানিহাটির প্রাক্তন পুরপ্রধান স্বপন ঘোষ বলেন, ‘‘আজ বিশ্বকর্মা ঠাকুর দেখতে পুরসভায় গিয়েছিলাম। তখন শুনলাম, জয়ন্তও গিয়েছিল। কিন্তু আমি যখন যাই, কেউ ছিল না। পরে নাকি ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। এর বাইরে যদি কিছু থাকে, আমরা বসে আলোচনা করব।’’