Test Examinations

মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে, ছেলেরা বেরোচ্ছে কাজের খোঁজে, দশম-দ্বাদশ শ্রেণির টেস্টে অনেক পড়ুয়াই অনুপস্থিত

কাকদ্বীপ দক্ষিণ কাশিয়াবাদ শিক্ষানিকেতন হাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে ১২০ জন ছাত্রছাত্রী রেজিস্ট্রেশন করেছে। কিন্ত দশম শ্রেণির টেস্টে বসেছে মাত্র ৯৫ জন।

Advertisement

সমরেশ মণ্ডল

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৭
Share:

সাগরের ধবলাট লক্ষ্মণ পরবেশ হাই স্কুলে টেস্ট দিচ্ছে পরীক্ষার্থীরা। —নিজস্ব চিত্র।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা চলছে স্কুলে। খবর আসছে, খাতায়-কলমে নাম থাকলেও অনেকেই পরীক্ষায় বসেনি। কাকদ্বীপ মহকুমার বেশিরভাগ স্কুলে এই পরিস্থিতি।

Advertisement

কাকদ্বীপ দক্ষিণ কাশিয়াবাদ শিক্ষানিকেতন হাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে ১২০ জন ছাত্রছাত্রী রেজিস্ট্রেশন করেছে। কিন্ত দশম শ্রেণির টেস্টে বসেছে মাত্র ৯৫ জন। প্রধান শিক্ষক সঞ্জীব দাস বলেন, ‘‘দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির টেস্টে প্রায় ৪৪ জন ছাত্রছাত্রী অনুপস্থিত। এদের মধ্যে বেশ কিছু ছাত্রী আছে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, তাদের সকলের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আর ছেলেরা ভিন্‌ রাজ্যে কাজে যোগ দিয়েছে। স্কুল থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝানো হলেও এরা কেউ ফিরে আসেনি।’’

নামখানা ব্লকের মৌসুনি দ্বীপ এলাকায় বালিয়াড়া কিশোর হাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে ১১০ জন। দশম শ্রেণির টেস্টে উপস্থিত ৮৯ জন। একাদশ শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে ৮২ জন। টেস্টে উপস্থিত ৫৩ জন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরিন্দম মাইতি বলেন, ‘‘মূলত লকডাউনের পর থেকে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। আর্থিক অনটনের কথা ভেবে ছেলেরা ভিন্‌ রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পরিবারও কিছু বলছে না, হাতে টাকা আসছে দেখে।’’

Advertisement

সাগরের কোম্পানিচর মহেশ্বরী হাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে ১৪২ জন। দশম শ্রেণির টেস্টে উপস্থিত ১৩৬ জন। অন্য দিকে একাদশ শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে ১১১ জন। টেস্টে বসেছে ৮৮ জন। প্রধান শিক্ষক সুজিত বেরা বলেন, ‘‘আমরা ছেলেমেয়েদের বোঝালেও শুনছে না। কারণ, ওদের অভিভাবকেরা চায় না, ওরা আর পড়াশোনা করুক।’’

একই পরিস্থিতি ধবলাট লক্ষ্মণ পরবেশ হাই স্কুলে। মাধ্যমিকে ২৭৭ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে টেস্টে বসেছে ২৬৩ জন। উচ্চ মাধ্যমিকে ১৮৩ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে টেস্টে বসেছে ১৭৯ জন।

গঙ্গাসাগর শ্রীধাম হাই স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ১১৩ জনের মধ্যে টেস্ট দিচ্ছে ৮৫ জন। উচ্চ মাধ্যমিকে ৬৭ জনের মধ্যে টেস্ট দিচ্ছে ৫৭ জন।

এলাকার অন্যান্য স্কুলগুলিরও পরিস্থিতি প্রায় একই। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, করোনার সময় থেকে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমেছে। গত কয়েক বছর ধরেই চলছে এই পরিস্থিতি। হাতে হাতে মোবাইল ফোন ঘুরছে। পড়াশোনার সময় তাতে আরও কমছে। অমনযোগী হয়ে পড়ছে। ফলে উঁচু ক্লাসের পড়া সামাল দিতে পারেনি অনেকে। অধিকাংশ স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, সারা বছর ধরে স্কুলগুলিতে উপস্থিত হার ৭০-৭৮ শতাংশের বেশি বাড়েনি।

অভিভাবকদের একাংশ জানালেন, তাঁরা চান ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করুক। কিন্তু বহু বাড়ির ছেলেমেয়েরা প্রতি দিন বাড়ি থেকে স্কুলের নাম করে বেরিয়ে যায়। কিন্তু স্কুলে পৌঁছয় না। বিভিন্ন জায়গায় বসে আড্ডা মারে। পরীক্ষার সময়ে উপস্থিতির হার কম থাকলে স্কুল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষায় বসতে দেন না। তখন জানা যায়, ছেলেমেয়েরা বাড়ি থেকে স্কুলে যায় না।

শিক্ষারত্নপ্রাপ্ত খানসাহেব আবাদ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেব দাস বলেন, ‘‘শিক্ষা সামাজিক সচেতনতা বাড়ায়। ছেলেরা মোবাইলের প্রতি বেশি আসক্ত হওয়ার ফলে অল্প বয়সে শিক্ষা থেকে সরে যাচ্ছে। অপরিণত অবস্থায় মেয়েরা মা হচ্ছে। অনেকে বেশিরভাগ সময় স্কুলে উপস্থিত হচ্ছে না। শিশুদের জীবনে তার প্রথম শিক্ষক হলেন তার মা-বাবা। তাঁরাই শিক্ষা সম্পূর্ণ করছেন না। এর ফলে ভুগতে হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement