জল ঢুকছে সাগরের গ্রামে। ছবি: দিলীপ নস্কর
আমপানের ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেননি অনেকেই। তার মধ্যেই অমাবস্যার কটালে নদী ও সমুদ্র বাঁধ ভেঙে ফের ভাসল সাগর, নামখানা, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমার বহু এলাকা। বাসিন্দারা বলছেন, আমপানের পরে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলি মেরামতে আরও জোর দেওয়া হলেই অনেকটা ক্ষতি এড়ানো যেত। এই পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী কাঠগড়ায় তুলছেন প্রশাসনকে। শুক্রবার প্রশাসনের লোকজন প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে গেলে বিক্ষোভও দেখান স্থানীয় মানুষ।
অমাবস্যার কটালের জেরে বুধবার থেকেই নদী এবং সমুদ্রে জল বাড়তে শুরু করে। তার জেরে একে একে বাঁধ ভাঙে বহু জায়গায়। নোনা জলের তলায় চলে গিয়েছে হাজার হাজার বিঘা কৃষি জমি, মাছের পুকুর, পানের বরজ ও ঘরবাড়ি। অনেকেই জলে ডুবে থাকা ঘরবাড়ি ফেলে রেখে এখন আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু বাঁধের উপরে বা ত্রাণ শিবিরে। সেখানে ত্রাণের খাবার নিয়েও শুরু হয়েছে হাহাকার। এ দিকে বাড়িতে যা চাল গম মজুত ছিল জলের তোড়ে তা-ও শেষ।
জলের তোড়ে ফের বাঁধ ভাঙল মিনাখাঁয়। অমাবস্যার কটালে বিদ্যাধরী নদীর জল বাড়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে মিনাখাঁর মোহনপুর অঞ্চলে চণ্ডীবাড়ি এবং মল্লিকঘেরিতে নদী বাঁধ ভেঙে এলাকায় জল ঢোকে। তবে গ্রামের মানুষ ও স্থানীয় প্রশাসন মিলে বাঁধ মেরামত করেন। রাতে ফের ওই বাঁধ ভেঙে গ্রামে নোনা জল ঢুকে পড়ে। শতাধিক বাড়ি, ধানের জমি, পুকুর, মাছের ভেড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। শুক্রবার প্লাবিত এলাকা ঘুরে দেখেন মিনাখাঁর বিধায়ক উষারানি মণ্ডল এবং মিনাখাঁ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপেশ পাত্র। সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের ডেকে শুক্রবার বিকেল থেকেই যাতে ঠিকাদার সংস্থার পক্ষে বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হয়, তার ব্যবস্থা করেন তাঁরা। স্থানীয় মানুষকে আশ্বস্ত করে বিধায়ক বলেন, ‘‘দু’চার দিনের মধ্যেই যাতে বাঁধ মেরামতের কাজ শেষ হয়, তা দেখা হচ্ছে। বাঁধ মেরামতি হয়ে যাওয়ার পরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’
বিদ্যাধরী নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত মিনাখাঁর কিছু এলাকা। ছবি: নির্মল বসু
আমপানে বিদ্যাধরী ও বেতনি নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত সন্দেশখালি ১ ব্লকের ন্যাজাট ১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকায় আবার জল ঢুকেছে। কোথাও বাঁধের গা চুঁইয়ে, কোথাও বাঁধ উপচে জল ঢুকেছে গ্রামে। তবে এখনও সে ভাবে বাঁধ ভাঙেনি। বিডিও সুপ্রতিম আচার্য বলেন, “আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। সেচ দফতরকে গোটা বিষয়টা জানিয়েছি। বাঁধের কাজ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।”
শুক্রবার দুপুরে বসিরহাটের নলকোড়া গ্রামে ইছামতী নদীর বাঁধ ভাঙে। বসিরহাট পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ডের নলকোড়ার পাশেই বসিরহাট ১ ব্লকের শাঁকচুড়ো, বাগুন্ডি পঞ্চায়েত। ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি ইটভাটা রয়েছে। ইট তৈরির জন্য পলিমাটি জরুরি। সে কারণে নোনা জলে পড়া পলির জন্য ভাটা মালিকেরা ইছামতী নদী থেকে খাল কেটে এনেছে। এ দিন দুপুরে জোয়ারের জল বাড়ায় ওই খালের প্রায় একশো ফুট ভেঙে নলকোড়া, ধলতিথা, শাঁকচুড়ো, বাগুন্ডি এলাকায় জল ঢুকে পড়ে। তা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। জেলা পরিষদের সদস্য সাহানুর মণ্ডল বলেন, ‘‘এলাকার ইটভাটা মালিকেরা নদী থেকে খাল কেটে ভাটায় জল ঢোকালেও খালের বাঁধের বিষয়ে গুরুত্ব না দেওয়ায় এলাকা প্লাবিত হল। নলকোড়া এবং ধলতিথা গ্রামের বহু বাড়িতে নোনা জল ঢুকে পড়েছে। অথচ একটি বারের জন্য ইটভাটা মালিকদের দেখা মেলেনি।’’
হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের সাহেবখালি পঞ্চায়েতের পুকুরিয়া, চাঁড়ালখালি এলাকায় কালিন্দী নদী বাঁধের অবস্থা খারাপ। এ ছাড়া, দুলদুলি পঞ্চায়েতের কেদারচক গ্রামে নদী বাঁধ ছাপিয়ে জল ঢুকছে। সেই সঙ্গে সান্ডেলেরবিল পঞ্চায়েতের ১৩ নম্বর স্লুইস গেট, রূপমারি পঞ্চায়েতের খেজুরবেড়িয়া গ্রামের স্লুইস গেটের অবস্থাও খারাপ। স্লুইস গেটের পাশ দিয়ে নদীর জল ঢুকছে। যে কোনও মুহূর্তে স্লুইস গেট ভেঙে বিপর্যয় হতে পারে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
সন্দেশখালি ১ ব্লকের বেড়মজুর ১ পঞ্চায়েতের ধুলিয়া স্লুইস গেট ও ভাঙাপোল পাড়ার স্লুইস গেটের অবস্থাও বিপজ্জনক। হাসনাবাদ ব্লকের মাখালগাছা পঞ্চায়েতের সায়ন ভাটার কাছে এবং পাটলি খানপুর পঞ্চায়েতের ঘেরিপাড়া এলাকায় বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের।
এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ ভাঙার খবর পাওয়া গিয়েছে।
সাগর
• ধসপাড়া সুমতিনগর ১ ও ২ পঞ্চায়েতে প্রায় ১ কিলোমিটার
• মন্দিরতলার কাছে ৫০ মিটার
• কসতলার কাছে ৫০০ মিটার
• চিমাগুড়ি মনসা মন্দিরের কাছে ১০০ মিটার
• বেগুয়াখালি চণ্ডীপুরের কাছে ১০০ মিটার
• ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতে ১০০ মিটার
নামখানা
• হেলেনখালের কাছে ৭০০ মিটার
• মৌসুনি পয়লা ঘেরির কাছে ৮০০ মিটার
• পাতিবুনিয়া গ্রামের কাছে ৫০০ মিটার
• দ্বারিকনগরের কাছে ৪০০ মিটার
• ফ্রেজারগঞ্জের দাসকন্যা ও হাতিকন্যা গ্রামের কাছে ২০০ মিটার
পাথরপ্রতিমা
• টুকরো গোপালনগরে প্রায় ২৫ মিটার
• জি প্লট পঞ্চায়েতের গোবর্ধনপুরে প্রায় ৭০০ মিটার
মিনাখাঁ
• মোহনপুরের কাছে প্রায় ৩০ মিটার
বসিরহাট
• নলকোড়া গ্রামের কাছে ৩০ মিটার