মনোনয়ন জমা দিয়ে ফের মেজাজে মদন। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
একজন পোড়খাওয়া। অন্যজন আনকোরা। অকাল ভোটে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁরা।
আনকোরা যিনি, তিনি বলছেন ‘সাজানো বাগানে’ তাঁর জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। আর পোড়খাওয়া প্রার্থীর কথায়, ‘‘কোচ ভাল হলে শুরুর আগেই ম্যাচ পকেটে আসে। এ ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে।’’ দু’জনেই সোমবার ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিলেন। একজন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ মদন মিত্র। অন্যজন পবন সিংহ।
তৃণমূলের টিকিটে জিতে মন্ত্রিত্ব সামলেছেন মদন। গত বিধানসভা ভোটে অবশ্য হারেন কামারহাটি আসনে। ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনে মনোনয়ন সক্রিয় রাজনীতিতে মদনের ‘প্রত্যাবর্তন’ হিসাবেই দেখছেন স্থানীয় কর্মী-সমর্থকেরা। এ দিন প্রচুর লোকজন নিয়ে ব্যারাকপুর মহকুমাশাসকের অফিসে মনোনয়ন জেন তিনি। কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি কলকাতা এবং শহরতলি থেকে কয়েকশো চালক অ্যাপক্যাব নিয়ে তাঁর সমর্থনে হাজির হন ভাটপাড়ায়। সেখান থেকে অ্যাপক্যাবের শোভাযাত্রা আসে ব্যারাকপুরে। ভাটপাড়া, ব্যারাকপুর, টিটাগড় থেকে সমর্থকেরা তো এসেছিলেনই, তাঁর পুরনো কেন্দ্র কামারহাটি থেকেও প্রচুর তৃণমূল সমর্থক এ দিন মহকুমাশাসকের অফিসের বাইরে ভিড় করেন। মদনের নামে স্লোগান ওঠে। সমর্থকদের ভিড়ে এক সময়ে ব্যারাকপুরের প্রশাসনিক ভবনের সামনের রাস্তায় যানবাহন থমকে যায়। সে কারণে বিজেপি প্রার্থী পবন সিংহের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেরিও হয়।
মনোনয়ন দাখিলের পরে মদন বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমি ভাটপাড়ায় জঙ্গলরাজ খতম করার কাজে নেমেছি। তিনিই আমাদের কোচ। এ বার ভাটপাড়ায় গুন্ডারাজ খতম হবে।’’ মদন এ দিন নাম না করে অর্জুনের বিরুদ্ধে চটকল শ্রমিকদের অর্থ লুট-সহ একাধিক অভিযোগ করেন। যার উত্তরে অর্জুন বলেছেন, ‘‘বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তেরাও এখন নানা অভিযোগ করছেন। তবে এর জবাব ভাটপাড়ার মানুষই দেবে।’’
রাজনীতিতে নবাগত হলেও পবনের পারিবারিক ঘরানা পুরোদস্তুর রাজনীতির। দাদু সত্যনারায়ণ সিংহ এক সময়ে ছিলেন ভাটপাড়ার কংগ্রেস বিধায়ক। বাবা অর্জুন সিংহ চার বারের তৃণমূল বিধায়ক। এ বার বিজেপির টিকিটে লোকসভা ভোটের প্রার্থীও হয়েছেন তিনি। বাবার ছেড়ে যাওয়া যাওয়া আসনে প্রার্থী হয়ে পবন বলছেন, ‘‘প্রতিদ্বন্দ্বিরা হিসেবের মধ্যেই নেই।’’
এ দিন জগদ্দলে প্রধানমন্ত্রীর সভা ছিল। ফলে ছেলের সঙ্গে আসতে পারেননি অর্জুন। পবন এসেছিলেন দুই দিদির সঙ্গে। সঙ্গে ছিলেন দলের সমর্থকেরা। ছিলেন অর্জুনের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতা। তাঁরাই মনোনয়ন জমা দেওয়ার খুঁটিনাটি বুঝিয়ে দেন প্রথমবারের প্রার্থীকে।
পবন বলেন, ‘‘অনেকেই আমাকে নতুন ভাবছেন। কিন্তু আমি নতুন নই। আমার রক্তে রাজনীতি। রাজনীতির আবহেই আমি বেড়ে উঠেছি। ফলে ভোটে লড়তে কোনও অসুবিধা হবে না।’’ পবন মনে করছেন, ভাটপাড়ার মানুষ এত দিন বংশ পরম্পরায় তাঁদের উপরে ভরসা করেছে। তাই তাঁর জয়ে কোনও সংশয় নেই।