ফাইল চিত্র।
দুয়ারে ত্রাণ প্রকল্পে আবেদন করে এক ব্যক্তি দাবি করেছেন, ইয়াস ও ভরা কাটালে তাঁর কয়েকটি গরু মারা গিয়েছে। প্রশাসনের কর্তারা তদন্ত গিয়ে অবাক। গরু মারা যাওয়া তো দূরের কথা, জানা যায়, সন্দেশখালির ওই ব্যক্তির কোনও দিন কোনও গরুই ছিল না!
ইয়াসে ক্ষতিপূরণের আবেদন খতিয়ে দেখতে গিয়ে এ রকম বহু ভুয়ো আবেদনের খোঁজ মিলছে দুই ২৪ পরগনায়। আমপানের পরে ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতির বহু অভিযোগ উঠেছিল। এ বার সেই অভিযোগ এড়াতে ব্লক প্রশাসনের তরফে দল তৈরি করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরেজমিন তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কোনও কোনও ব্লকে ৭০-৮০ শতাংশই ভুয়ো আবেদন জমা পড়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেছেন ৫১,৭৮৩ জন। আবেদনকারীদের প্রায় ৯৫ শতাংশই বসিরহাট মহকুমার বাসিন্দা। ব্যারাকপুর মহকুমা এবং অশোকনগর-হাবড়া এলাকা থেকেও কিছু আবেদন পড়েছে। ইয়াসের আগের দিন টর্নেডোয় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ব্যারাকপুরের হালিশহর, নৈহাটি ও বীজপুরে। ইয়াসের পর দিন অশোকনগর-হাবড়া এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সেই সব এলাকার মানুষও ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করছেন। আবেদনপত্র খতিয়ে দেখতে ২৭০টি দল গঠন করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর, মৎস্য দফতর এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর থেকে ৪০ জন অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে আবেদনপত্র খতিয়ে দেখার কাজে। জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, “জেলার বেশিরভাগ ব্লকে আবেদনপত্র খতিয়ে দেখার কাজ ৬০-৭০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। ৩০ জুনের আগেই কাজ সম্পূর্ণ করতে পারব বলে আমরা আশা করছি। ভুয়ো আবেদন খতিয়ে দেখে বাদ দেওয়া হচ্ছে।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা ব্লকেই সর্বাধিক প্রায় ৩২ হাজার ক্ষতিপূরণের আবেদন জমা পড়েছে। বাসন্তীতে আবেদন করেছেন প্রায় ১৮ হাজার মানুষ। ক্যানিং ১ ব্লকে ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছেন ৩৪১ জন। কাকদ্বীপ ব্লকে ২১ হাজার ৭০১ জন, পাথরপ্রতিমা ব্লকে ১৪ হাজার ৯৬১ জন, নামখানা ব্লকে ১৩ হাজার ২০০ জন, সাগর ব্লকে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার ও মথুরাপুর ২ ব্লকে ৪ হাজার ৭৪৮ জন ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছেন।
গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্র বলেন, “৩২ হাজার মানুষের বাড়ি পৌঁছনোর জন্য আমরা ৩৪১টি দল গড়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরজমিন তদন্ত করছি। ছবি তুলে সরকারি পোর্টালে আপলোডও করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, ক্ষতি হয়নি এমন মানুষও আবেদন করেছেন।” কাকদ্বীপের বিডিও দিব্যেন্দু সরকার বলেন, “তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, যা আবেদন পড়েছে তার ৮০ শতাংশই ভুয়ো। অনেকেই কোনও ক্ষতি না হওয়া সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছেন। ১ জুলাই পর্যন্ত তদন্তের কাজ চলবে। তারপরেই জেলা প্রশাসনকে সামগ্রিক রিপোর্ট দেওয়া হবে।”
প্রশাসনের তদন্ত নিয়ে অভিযোগ উঠছে কোথাও কোথাও। বসিরহাট মহকুমার কিছু কিছু জায়গায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত অনেকের বাড়িতে প্রশাসনের কর্তারা যাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। আবার বেছে বেছে তৃণমূল সমর্থকদের বাড়িতে তদন্তে যাওয়ারও অভিযোগ উঠছে। সন্দেশখালির আতাপুর গ্রামের বাসিন্দা রাখি দাস বলেন, “আমার ঘর ভেসে গিয়েছে। রাস্তার উপরে তাঁবু খাটিয়ে দিন কাটাচ্ছি। অথচ আমাদের বাড়িতে প্রশাসনের কেউ এলেন না। বেছে বেছে তৃণমূলের সমর্থকদের বাড়িতে তদন্ত করতে যাওয়া হচ্ছে।”
প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে তৃণমূলের লোকজনকে দেখা যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে। বিজেপি নেতা ফিরোজ কামাল গাজি বলেন, “যেখানে সরকারি প্রতিনিধি ছাড়া কারও থাকার কথা নয়, সেখানে তৃণমূলের লোকজন থাকছে কী ভাবে? ওদের দেখে গ্রামের মানুষ ভয়ে কোনও অভিযোগ করতে পারছেন না। বিরোধী দলের মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই সরকারি সুবিধা পাবেন না।”
সন্দেশখালি ১ বিডিও সুপ্রতিম আচার্য বলেন, “এ রকম কোনও ঘটনার কথা আমার জানা নেই। কারও যদি কোনও অভিযোগ থাকে, তা হলে সরাসরি আমাকে জানাতে পারেন। অভিযোগ সত্য হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মিনাখাঁর তৃণমূল নেতা মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল অবশ্য বলেন, “এ সব মিথ্যা অভিযোগ। কোথায় কার বাড়ি সেটা তো আধিকারিকেরা চেনেন না। তাই প্রযোজনে আমাদের কর্মীরা একটু চিনিয়ে দিতে পারেন। তবে কেউ সঙ্গে থাকছেন না।”