আপত্তি: লোকালয়ের কাছে জঞ্জাল ফেলার প্রতিবাদে বাসিন্দারা। বুধবার, বারাসতের কদম্বগাছিতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ
নষ্ট হচ্ছে ৫০০ বিঘা জমির ফসল। রোগ ছড়াচ্ছে এলাকায়। বুজে গিয়েছে নিকাশি নালাও। বার বার অভিযোগ জানিয়েও কাজ হয়নি। লোকালয়-ঘেঁষা মাঠে দিনের পর দিন জঞ্জাল ফেলছে বারাসত পুরসভা। তারই প্রতিবাদে বুধবার, লকডাউনের দিনে রাস্তায় বাঁশের ব্যারিকেড করে পুরসভার জঞ্জালের গাড়ি আটকে দিলেন এলাকার বাসিন্দারা।
এর ফলে জঞ্জাল না-ফেলেই চলে আসে পুরসভার লরি। জঞ্জাল অপসারণ নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয়। এই অবস্থায় আজ, বৃহস্পতিবার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুর কর্তৃপক্ষ। তাঁরা বলছেন, বাসিন্দারা আপত্তি করলে তাঁদের বিকল্প জায়গার খোঁজ করতে হবে।
এ দিন ভোর থেকেই জঞ্জাল ফেলার মাঠের সামনে হাজির হন কয়েকশো স্থানীয় বাসিন্দা। বড় রাস্তা থেকে মাঠে ঢোকার রাস্তা বাঁশ দিয়ে আটকে দেন তাঁরা। একের পর এক লরি জঞ্জাল নিয়ে এলেও মাঠে ঢুকতে পারেনি। লরিগুলি আটকে শুরু হয় বিক্ষোভ। বেগতিক দেখে পুরসভার আধিকারিকেরা এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু নিজেদের দাবি থেকে একটুও নড়ানো যায়নি তাঁদের। শেষ পর্যন্ত দুপুরে জঞ্জালের গাড়িগুলি ফিরে যায়। জঞ্জাল রয়ে যায় লরিতেই।
বারাসত পুরসভা লাগোয়া কদম্বগাছি এলাকার পিরগাছায় প্রায় ১২ বিঘা জমির উপরে পুরসভার ভাগাড়। বছর দশেক ধরে পুর এলাকার জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে ওই জমিতে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জঞ্জাল উপচে পড়ছে ওই এলাকার জমি থেকে। এক বাসিন্দা মহম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘জমা বর্জ্য পচে তরল রাসায়নিক বেরিয়ে আসছে। সে সব গিয়ে পড়ছে আশপাশের জমিতে। এতে ফসল নষ্ট হচ্ছে। বড় গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। আমার চার বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছিলাম। সব গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’
অন্য চাষিদের অভিযোগ, জমিতে হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে তাঁদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, একাধিক বার এ নিয়ে পুরসভায় জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। বহু আলোচনাতেও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। আরও অভিযোগ, পুরসভা বার বার আশ্বাস দিলেও চাষিদের জন্য কিছুই করেনি। চাষিরা জানান, আজ বৃহস্পতিবার তাঁরা ফের ওই এলাকায় ধর্নায় বসবেন। ওখানে আর জঞ্জাল ফেলতে দেবেন না।
দিনের পর দিন জঞ্জাল অপসারণ না-হলে সমস্যায় পড়বে পুরসভা। সে ক্ষেত্রে শহরের জঞ্জাল সাফাইয়ে তার প্রভাব পড়তে পারে। বারাসত পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা ওই
জমিটি কিনে ভাগাড় তৈরি করেছিলাম। তখন কোনও আপত্তি ওঠেনি। এখন যখন স্থানীয়দের অসুবিধা হচ্ছে, তখন বিকল্প ভাবতে হবে। সেই ব্যবস্থা চালু হওয়ার আগে পর্যন্ত ওখানেই জঞ্জাল ফেলতে হবে। আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিষয়টি মিটিয়ে নেব।’’