নিউ ব্যারাকপুরের এই কারখানাতেই আগুন লেগেছিল। ফাইল চিত্র
অনিয়মই নিয়ম এখানে। এমনই বলছেন নিউব্যারাকপুর যুগবেরিয়া এলাকার বাসিন্দারা। এই এলাকাতেই রয়েছে তালবান্দা-বোদাই শিল্পতালুক। প্রায় দু’শো কারখানা চলে এই এলাকায়। তার কোনটির অনুমোদন রয়েছে, কোনটির নেই, তার তথ্য প্রশাসন বা স্থানীয় পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিতে নেই। সম্প্রতি যে কারখানার অগ্নিকাণ্ড পাঁচ জনের প্রাণ কেড়েছে, তারও কোনও ট্রেড লাইসেন্স ছিল না।
অথচ এত দিন দিব্যি চলছিল সেটি। ওই অগ্নিকাণ্ডের পরে প্রশাসনিক মহলে নড়াচড়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রশাসনের নজরে এসেছে যে বেশ কিছু কারখানার কোনও অনুমোদনই নেই। আপাতত একটা কমিটি গড়ে কারাখানাগুলির তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। তার পরে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, কারখানা চালাতে গেলে বিভিন্ন দফতরের অনুমোদন প্রয়োজন। তার ফলে কোন দফতরের অনুমোদন রয়েছে, আর কোন দফতরের নেই তা অনেক সময়েই দেখা সম্ভব হয় না। সেই ফাঁক গলেই দিব্যি কারবার চালিয়ে যাচ্ছে কারখানাগুলি। তবে এ বার কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
এই শিল্পতালুকে প্রায় দু’শোটি ছোট ও মাঝারি কারখানা রয়েছে। তার মধ্যে অনেকগুলিই রাসায়নিকের কারখানা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চাশটিরও বেশি কারখানায় অতিদাহ্য পদার্থ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয় এমন কারখানার সংখ্যা ৭০টিরও বেশি। এ ছাড়া প্রায় সব কারখানাতেই এলপিজি ব্যবহার করা হয়। সেই জন্য প্রায় সব কারখানাতেই গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করা রয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, কারখানার জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয় স্থানীয় বিলকান্দা ১ পঞ্চায়েত থেকে। যে সব কারখানায় দাহ্য বা অতিদাহ্য পদার্থ ব্যবহার হয়, তাদের ব্যারাকপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতি থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এ ছাড়াও কারখানা চালু করার জন্য দমকল, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অনুমোদন দরকার হয়। কিন্তু এ সব মানা হচ্ছে কিনা, তার জন্য কোনও নজরদারি নেই। সেই সুযোগ নিয়ে নিয়ম এড়িয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে কারখানাগুলি।
এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, শুধু তাই নয়, পোশাক রং করার কারখানা এবং রাসায়নিক কারখানা থেকে এলাকায় দূষণ ছড়ায়। কারখানা মালিকদের বারবার বলেও কোনও লাভ হয়নি। তার ফলে এলাকার বাসিন্দারা বেশ কয়েক বার বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। যে চেয়ার কারখানায় আগুন লেগে পাঁচ কর্মী জীবন্ত দগ্ধ হলেন, সেই কারখানাটিতে চার বছর আগে আগুন লেগেছিল। শ্যাম রায়, তুফান সরকারেরা সেই সময় ওই কারখানায় কাজ করতেন। তাঁরা বলেন, ‘‘সে বার কোনও রকমে প্রাণ বাঁচিয়েছিলাম। কারখানায় আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থাই ছিল না। সেই জন্য আগুন লাগার কয়েক দিন পরে ওই কারখানার কাজ ছেড়ে দিই।’’ কারখানার বর্তমান কর্মীরা বলছেন ওই ঘটনার পরেও কোনও সুরক্ষাবিধি চালু হয়নি কারখানায়। প্রাণের বিনিময়ে যার মাসুল গুনতে হল পাঁচ কর্মীকে। আগুন নেভানোর ব্যবস্থা ছাড়াই কী ভাবে চলছিল কারখানা? ঘটনার সময়ে কারখানা চত্বরে দাঁড়িয়ে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু জানিয়েছিলেন, এই ঘটনার পরে সে সব খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক আবুল কালাম ইসলাম আজাদ বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। তারা ওই এলাকার সব কারখানার পরিকাঠামো-ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে আমাদের কাছে রিপোর্ট পাঠাবে। সেই রিপোর্ট জেলাশাসকের কাছে পাঠানো হবে। তার পরেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সোমা ঘোষ বলেন, ‘‘সব দিকই খতিয়ে দেখা হবে। নিয়ম না মানলে কেউ পার পাবে না।’’