অনুর্বর: বাঁধ ভেঙে জমিতে নোনা জল ঢোকায় বন্ধ চাষ। গোসাবার রাঙাবেলিয়াতে। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা।
আমপানে বাঁধ ভেঙে ভেসে গিয়েছিল সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা। নোনা জল ঢুকে নষ্ট হয়েছিল বিঘের পর বিঘে কৃষি জমি। এখনও অনেক জমিতে চাষের কাজ শুরু করা যায়নি। ঝড়ে নষ্ট হয়েছিল বহু ম্যানগ্রোভও। পরে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ম্যানগ্রোভ রোপণ করে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া হয়। উত্তর ২৪ পরগনার বহু জমিতে চাষ বন্ধ ঝড়ের পর থেকে। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের রূপমারি পঞ্চায়েত এলাকার বায়নারা, বাঁশতলি, কুমিরমারি-সহ বিভিন্ন গ্রামের কয়েকশো বিঘা জমি নোনা জলে ভেসে গিয়েছিল। ধান, পাট, আলু, কুমড়ো, ডাল, সূর্যমুখী, বাদাম সহ বিভিন্ন চাষ হত এই সব এলাকায়। এখন অবশ্য ফাঁকা পড়ে রয়েছে জমি। গ্রামবাসীরা জানান, অনেকে ধান, পাট, কুমড়ো চাষের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু নোনা মাটিতে ফলন হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা বাসুদেব মণ্ডল, গৌরহরি মণ্ডলরা জানান, কৃষিকাজ করেই সংসার চলত। কিন্তু চাষের জমিতে দীর্ঘ দিন ধরে নোনা জল জমে থাকায় এখন আর ফলন হচ্ছে না। ফলে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও জল ঢুকে চাষের জমির ক্ষতি হয়েছে। গোসাবা, কুলতলি-সহ বিভিন্ন এলাকায় গত একবছর চাষ হয়নি। আরও বছর দু’য়েক নোনা জলের প্রভাবে চাষের কাজ করা যাবে না বলেই জানান চাষিরা। কাকদ্বীপ মহকুমায় প্রচুর পান চাষ হয়। ঝড়ে অধিকাংশ পানের বরজ ভেঙে পড়েছিল। বড় ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন পানচাষিরা। পরে সরকার পানচাষিদের ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে। গত এক বছরে পানচাষিরা অবশ্য ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। পুকুর বা ভেড়িতে নোনা জল ঢুকে দুই ২৪ পরগনার মাছ চাষেও ক্ষতি হয়েছিল সেই সময়ে। ঝড়ে নষ্ট হয়েছিল হাজার হাজার ম্যানগ্রোভ। ম্যানগ্রোভের ক্ষতিতে সেই সময় সিঁদুরে মেঘ দেখছিলেন সুন্দরবনবাসী। সুন্দরবনের ‘ঢাল’ পুনরুদ্ধারে গত এক বছরে অবশ্য নতুন করে বহু ম্যানগ্রোভ রোপণ হয়েছে। প্রশাসনের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুন্দরবন জড়ে পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগানোর কর্মসূচি নেন। দুই ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী ১৯টি ব্লকেই তারপর থেকে সরকারি উদ্যোগে প্রচুর ম্যানগ্রোভের চারা লাগানো হয়। বহু বেসরকারি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও ম্যানগ্রোভ লাগায়। পরবর্তীকালে বেআইনি ম্যানগ্রোভ কাটার ক্ষেত্রেও কড়া পদক্ষেপ করতে দেখা গিয়েছে প্রশাসনকে। পুলিশের তৎপরতায় বহু জায়গায় ম্যানগ্রোভ কেটে ভেড়ি বা অন্য নির্মাণ তৈরি বন্ধ হয়ে যায়।