—প্রতীকী চিত্র।
বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় দলের নেতাদের মধ্যে ‘কোন্দল’ থামছেই না! অনেক দিন ধরে এখানে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর এবং দলের জেলা সভাপতি দেবদাস মণ্ডলদের সঙ্গে কিছু বিধায়ক, জনপ্রতিনিধি ও মণ্ডল সভাপতিদের ‘দূরত্ব’ আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দলের এক নেতা গ্রেফতার হওয়ার পরে সেই ‘কোন্দল’ আরও এক বার প্রকাশ্যে চলে এল। ওই নেতার নাম লক্ষ্মণ ঘোষ। পুলিশ জানিয়েছে, ১১ মার্চ তাঁকে বনগাঁ থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তিনি এখন জেল হেফাজতে। কয়েক বছর আগে তাঁর বিরুদ্ধে বনগাঁ থানায় চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। ‘পলাতক’ ছিলেন ওই নেতা। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তার ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেফতার করে লক্ষ্মণকে।
এ দিকে, বিজেপি নেতা গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অসংখ্য পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে (আনন্দবাজার তার সত্যতা যাচাই করেনি)। সেখানে লক্ষ্মণের সঙ্গে এক সঙ্গে কোনও ছবিতে দেবদাস আবার কোনও ছবিতে শান্তনুকে দেখা যাচ্ছে। নানা মন্তব্যও করা হচ্ছে। বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সব পোস্ট যত না তৃণমূল ছড়াচ্ছে, তার থেকে বেশি বিজেপির লোকজনই ছড়াচ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, লক্ষ্মণের সঙ্গে দেবদাস বা শান্তনুর ছবি ছড়িয়ে তাঁদের ‘ভাবমূর্তি’ খারাপ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
‘দেবদাস-ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘বনগাঁর বিজেপির শত্রু বিজেপিই। দেবদাসকে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরাতে না পেরে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় কুৎসা করা হচ্ছে। এতে তাঁদের উদ্দেশ্য পূরণ হবে না।’’
বিজেপি ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দেবদাসকে দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদ থেকে সরাতে দলেরই একাংশ অনেক দিন ধরে সক্রিয়। নিজেদের মধ্যে মিটিং করা, ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে দেবদাসকে সরানোর দাবি— সবই করা হয়েছে। কয়েক দিন আগে বিজেপি নেতৃত্ব রাজ্যের ২৫টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতির নামের তালিকা প্রকাশ করেছে। বনগাঁর বিজেপির একাংশ মনে করেছিল, এখানেও নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা করা হবে। তা না হওয়ায় দলের অনেকে হতাশ। এক নেতার কথায়, ‘‘এই হতাশা থেকে কারও কারও মদতে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেবদাসদের জড়িয়ে পোস্ট করা হচ্ছে।’’
বিজেপি একটি অংশের দাবি, লক্ষ্মণ গ্রেফতার হয়েছেন ১১ মার্চ। বিজেপির জেলা সভাপতিদের নামের তালিকা বেরিয়েছে ১৩ মার্চ। অথচ, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টগুলি করা শুরু হয়েছে ১৪ মার্চ থেকে। তা হলেই এর ‘উদ্দেশ্য’ অনুমান করা যায়!
বিজেপি কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, বনগাঁ দলের নেতারা বা তাঁদের অনুগামীদের এখন একটাই কাজ, সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অন্যের বিরুদ্ধে ‘কুৎসা’ ছড়ানো। সামনে বিধানসভা ভোট। তার আগে দলকে শক্তিশালী করার কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট নিয়ে দেবদাস বলেন, ‘‘যাঁরা এই কাজ করছেন, তাঁরা তৃণমূলের দালাল।’’ লক্ষ্মণের বিষয়ে দেবদাসের বক্তব্য, ‘‘লক্ষ্মণ বিজেপির অফিস সেক্রেটারি। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে কোনও মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন। তার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। লক্ষ্মণ বিজেপি করেন, সে কারণে আমার সঙ্গে ছবি থাকতেই পারে।’’
বিষয়টি নিয়ে আসরে নেমে পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘লক্ষ্মণ জেলা বিজেপির কোষাধ্যক্ষ। বিজেপি নেতারা আপাদমস্তক দুর্নীতি, তোলাবাজিতে ডুবে গিয়েছেন, গোষ্ঠীকোন্দলে জেরবার। মানুষের পাশে থাকেন না। তোলাবাজির টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে তাঁরা ব্যস্ত থাকেন।’’