পুলিশের সঙ্গে বচসার জেরে এক বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বেড়াচাঁপায়। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
গত কয়েক বছর ধরে বিজেপির ‘শক্ত ঘাঁটি’ হিসাবে রাজ্য রাজনীতিতে আগ্রহের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বনগাঁ মহকুমা। বিজেপির জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল গত পঞ্চায়েত ভোট থেকে। সে বার মহকুমার ৪টি পঞ্চায়েতে বিজেপি জয়ী হয়। লোকসভা ভোটে বনগাঁ কেন্দ্র থেকে জয়ী হন বিজেপির শান্তনু ঠাকুর। বিধানসভা ভোটে মহকুমার চারটি আসনই দখল করে বিজেপি।
স্বাভাবিক ভাবেই মঙ্গলবার বিজেপির নবান্ন অভিযানে বনগাঁ মহকুমা থেকে বহু কর্মী-সমর্থক যাবেন বলে প্রত্যাশা ছিল দলের মধ্যেই। কিন্তু এ দিন সে ভাবে কর্মীদের ভিড় চোখে পড়েনি। হাতেগোনা কিছু বাসে কর্মী-সমর্থকেরা যান কলকাতায়। ট্রেনে অনেকে গিয়েছেন। তবে কামরায় ভিড় তেমন ছিল না বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয় মানুষ। ব্যক্তিগত গাড়িতে কেউ কেউ গিয়েছেন। পুলিশ প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, বনগাঁ মহকুমা থেকে মেরে কেটে ৬০০-৭০০ কর্মী-সমর্থক নবান্নের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন।
যদিও বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি রামপদ দাসের দাবি, “বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ, বাগদা ও গাইঘাটা বিধানসভা এলাকা থেকে প্রায় চার হাজার মানুষ নবান্ন অভিযান কর্মসূচিতে যোগ দিতে পথে বেরোন।” তাঁর কথায়, “এত মানুষ রাস্তায় নেমে আসাটা উল্লেখযোগ্য। কারণ, বিধানসভা ভোটের পর থেকে তৃণমূলের সন্ত্রাসে আক্রান্ত হয়েছেন আমাদের কর্মীরা। মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে অনেককে। এ দিন পুলিশ বাস আটকে দিয়েছে। বাস মালিকদের ভয় দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, বাস ভাঙচুর হলে তারা কোনও নিরাপত্তা দিতে পারবে না। তা ছাড়া, বৃষ্টিও হয়েছে। সেই সব উপেক্ষা করেও অনেক মানুষ পথে ছিলেন।”
বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, মহকুমা থেকে ৫০টি বাস ও ট্রেনে করে কর্মীরা বেরিয়েছিলেন।
তৃণমূলের অবশ্য দাবি করেছে, এ দিনের নবান্ন অভিযানে বনগাঁ থেকে কার্যত কোনও লোকজনই যায়নি। তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “বিজেপির প্রতি বনগাঁ মহকুমার মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে। বিজেপির পাশ থেকে মানুষ সরে গিয়েছেন। মঙ্গলবার মানুষ বিজেপির কর্মসূচিতে না গিয়ে তা প্রমাণ করে দিয়েছেন। একজন সাংসদ ও একাধিক বিধায়ক থাকা সত্ত্বেও বিজেপি নেতৃত্ব লোকজন বের করতে পারেনি।”
স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল এ দিন ভিড় না হওয়ার অন্যতম কারণ। বিধানসভা ভোটের পর মহকুমায় বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল ক্রমশ মাথা চাড়া দিতে থাকে। দল কার্যত বিভক্ত হয়ে যায়। একটা সময়ে দলীয় কর্মসূচিতে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৎকালীন সভাপতিকেই আমন্ত্রণ করা হয়নি। ওই সময়ে কোনও দলীয় কর্মসূচিতে এক পক্ষ উপস্থিত থাকলে অন্য পক্ষকে দেখা যেত না। পরবর্তী সময়ে জেলা সভাপতি পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু নতুন সভাপতিকে নিয়েও বিজেপির একাংশের ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে।
সম্প্রতি বনগাঁ পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে বিজেপি ছাপ্পা, সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল শাসকদলের বিরুদ্ধে। কিন্তু তা প্রতিহত করার মতো সাংগঠনিক শক্তি বিজেপির তরফে দেখা যায়নি বলে দলের একাংশও স্বীকার করেন।
লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল থেকে অনেক নেতা-কর্মী বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। বিজেপির শক্তি বেড়েছিল। কিন্তু বিধানসভা ভোটের পর বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস-সহ অনেকেই তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন। ইদানীং বিজেপির পক্ষ থেকে জোরদার আন্দোলনও দেখা যাচ্ছে না মহকুমায়। তবে নবান্ন অভিযান কর্মসূচি ঘিরে মহকুমায় বিজেপি বেশ কিছু পথসভা করেছিল। তাতে কিছুটা ভিড় দেখা গিয়েছিল।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত। তবে তার মধ্যেও কিছু এলাকায় বিজেপির উল্লেখযোগ্য সংগঠন রয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবার পুরসভা এলাকায় ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টিতেই এগিয়ে ছিল বিজেপি। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ১১টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল তারা। ২০২১ সালে পুর নির্বাচনে অবশ্য ধরাশায়ী হয় বিজেপি। সব ক’টি ওয়ার্ডের দখল নেয় তৃণমূল। বিজেপি নেতারা সে সময়ে অভিযোগ করেন, সন্ত্রাস ও ছাপ্পা ভোটেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। সে কথা মানেনি শাসকশিবির।
এ দিন ডায়মন্ড হারবার থেকে প্রচুর কর্মী-সমর্থক নবান্ন অভিযানে যোগ দিতে বেরিয়েছিলেন বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের। তবে অভিযোগ, তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। ডায়মন্ড হারবারের তিনবারের প্রাক্তন কাউন্সিলর, রাজ্য বিজেপির নেতা কৃষ্ণা বৈদ্যের অভিযোগ, নবান্ন অভিযানে তাঁদের কোনও গাড়ি পুলিশ যেতে দেয়নি। বাস থেকে কর্মীদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে কথা মানেনি পুলিশ।
ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল বিধায়ক পান্নালাল হালদার বলেন, “লোক হয়নি বলে এখন ওরা নানা অজুহাত দেখাচ্ছে। ওরা গঠনমূলক কোনও কাজ করে না। উন্নয়ন করে না। ফলে মানুষ ওদের সঙ্গে নেই।”