গোবিন্দকাটির হোমস্টে। —নিজস্ব চিত্র।
দুর্গাপুজোর হইচই ছেড়ে অনেকেই এ ক’টা দিন নিরিবিলিতে কাটাতে চান। ফলে পুজোর সময়ে কলকাতার আশপাশের এলাকায় পর্যটন বাড়ে।
পুজোর প্রায় এক মাস আগে থেকে বুকিং প্রায় শেষ সুন্দরবনের হোম স্টেগুলিতে। টাকির হোটেলেও ভাল বুকিং হচ্ছে। হিঙ্গলগঞ্জের গোবিন্দকাটি গ্রামে ৬টি মাটির ঘরের উপরে খড়ের ছাউনি দেওয়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কটেজ আছে। কটেজের মালিক পার্থ দাস বলেন, "বেশির ভাগই বুকিং হয়ে গিয়েছে। বাদবাকি ঘরও কয়েক দিনের মধ্যে হয়ে যাবে বলে কথা চলছে।" পার্থ আরও জানান, এই এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যুতের ভোল্টেজের সমস্যা। তাই এসি চালাতে সমস্যা হয়। সে কথা পর্যটকদের জানানোয় অনেকে রাজি হচ্ছেন না। এই সমস্যা না থাকলে আরও আগে সব ঘর বুকিং হয়ে যেত। হিঙ্গলগঞ্জের নেবুখালি ও দুলদুলির মাঝে তিন নদীর মোহনায় বিসর্জন দেখতেও পর্যটকেরা অনেকে পুজোর দিনগুলোকে বেছে নেন।
সুন্দরবনের জঙ্গল-লাগোয়া হিঙ্গলগঞ্জের কালীতলা পঞ্চায়েতের ১ নম্বর সামসেরনগর গ্রামে একটি হোম স্টে আছে। দেওয়াল বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি। ছাউনি অ্যাসবেস্টস ও খড়ের। এই হোম স্টেতে ১৩টি ঘর। মালিক সুভাষ বিশ্বাস জানালেন, অক্টোবর মাসের শুরুতেই ৪০ জনের একটি পর্যটকের দল আসতে চলেছে। এর পাশাপাশি পুজোতেও বুকিং ভাল হচ্ছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে সব ক’টি কটেজ বুকিং হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
এই কটেজের পাশেই আছে কালিন্দী নদী ও সুন্দরবনের জঙ্গল। পাশে বাংলাদেশ। এ সবের টানে পর্যটকেরা কলকাতা ও আশপাশের এলাকা থেকে আসেন। অষ্টমী থেকে দশমী পর্যন্ত কাটান। নবমীতে নদী থেকে ধরা টাটকা ভেটকি, পারসে, ভাঙন ও চিংড়ি মাছ খাওয়ানো হয়। থাকা-খাওয়া খরচ মাথা-পিছু প্রতি দিন ১৫০০ টাকা। পর্যটকেরা চাইলে সুন্দরবনের জঙ্গলও ঘুরিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা আছে। সে জন্য আলাদা খরচ ধরা হয়।
টাকিতে ২১টি হোটেল আছে। পুজোর দিনগুলিতে কোনও ঘর ফাঁকা নেই বলে হোটেল মালিক সংগঠন সূত্রের খবর। টাকির এক হোটেল মালিক ফারুক গাজি বলেন, "সব ঘর সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত বুকিং হয়ে গিয়েছে। ঘরের ভাড়া ১২০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত। পুজোর সময়ে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। তবে সপ্তমী থেকে টানা চার দিন যাঁরা ঘরভাড়া নিয়েছেন, তাঁদেরই ঘর দেওয়া হয়েছে।" প্রদ্যোৎ দাস নামে আর এক হোটেল মালিক বলেন, "আমাদের হোটেলে সব ঘর সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত বুকিং হয়ে গিয়েছে। পুজোর দিনগুলিতে আর ঘর ফাঁকা নেই।" তিনি বলেন, ‘‘টাকির দুর্গাপুজোর বিসর্জনের আকর্ষণ ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছে। তাই এখনও পর্যন্ত হোটেল ব্যবসা ভাল চললেও ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চিন্তিত। বিসর্জন ও পর্যটনকে আকর্ষণীয় করতে বিশেষ পদক্ষেপ করা দরকার।’’
টাকির পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায় জানালেন, বিসর্জনের দিন যে রাস্তা দিয়ে প্রতিমা নদীর ঘাট পর্যন্ত আসবে, সেই রাস্তা ফুল ও বিভিন্ন মডেল দিয়ে সাজানো হবে। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকবে। সাধারণত, রাজবাড়ি ঘাট দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন বা নৌকোয় তোলা হয়। ফলে লম্বা লাইন পড়ে। এ বার টাকির আরও তিনটি ঘাট ব্যবহার করা যাবে। প্রতিমা নিয়ে পুজো উদ্যোক্তারা যাতে নদীতে নামেন, সে জন্য তাঁদের সঙ্গে কথা বলা হবে। যাত্রীদের জন্য ও প্রতিমা তোলার জন্য নৌকোর ভাড়া কত হবে, তা নৌকো ইউনিয়নগুলির সঙ্গে কথা বলে নির্ধারণ করা হবে। লাগামছাড়া ভাড়া যেন কেউ নিতে না পারেন, সে জন্য এই ব্যবস্থা। টাকির জমিদার বাড়ির পুজো উদ্যোক্তাদের কাছেও আবেদন করা হয়েছে, প্রতিমা নৌকোয়
তুলতে। এ ছাড়া এ বার ভারত-বাংলাদেশের সঙ্গে বিসর্জন নিয়ে বৈঠক অন্য বারের তুলনায় দ্রুত যাতে হয়, তা-ও দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুরপ্রধান।