হয়রান: সাহিদা ও তাঁর পরিবার
জেলা থেকে শহর, একাধিক সরকারি হাসপাতালে দিনভর ঘুরলেন। অভিযোগ, যথাযথ পরিষেবা তো দুর অস্ত্, কোথায় পরিষেবা মিলবে, সেই প্রশ্নের উত্তরও মিলল না। মঙ্গলবার শহরের তিন সরকারি হাসপাতাল ফিরিয়ে দেওয়ার পরে এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বছর বত্রিশের মহিলা।
জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কিংবা স্বাস্থ্যভবন থেকে সরকারি হাসপাতালের ‘রেফার’ রোগ বন্ধ করতে বারবার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতির কতটা বদলাচ্ছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারের সাহিদা বিবির ঘটনা সেই প্রশ্নকেই ফের সামনে আনল।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্দিরবাজারের বাসিন্দা সাহিদা বিবির ১০ এপ্রিল বাড়িতে রক্তচাপ বেড়ে যায়। আট মাসের গর্ভবতী সাহিদাকে পরিজনেরা ওই দিনই নিয়ে যান স্থানীয় নাইয়াহাট গ্রামীণ হাসপাতালে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকায় তাঁকে ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেন। মৃত সন্তান প্রসব হয় মহিলার। কিছুটা সুস্থ হলে তাঁকে বাড়িতে পাঠানো হয়। কিন্তু বাড়িতে আসার পরেই শুরু হয় রক্তক্ষরণ। আবার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মূত্রনালী থেকে কোনও রকম সমস্যা হচ্ছে জানানো হয়। অভিযোগ, চিকিৎসা না করেই জেলা হাসপাতাল তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘রেফার’ করে। সেই থেকে শুরু হয় হয়রানি।
কলকাতায় পৌঁছনোর পরেও হয়রানি কমেনি। বরং গাড়িতে এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতাল ঘুরতে বাধ্য হন রোগীর পরিজনেরা। কখনও এনআরএস হাসপাতালে আবার কখনও শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে গিয়েও লাভ হয়নি। কোথাও গেলে মিলবে সঠিক চিকিৎসা, জানতে পারেননি তা-ও। ফলে রোগিণীকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হন সকলে।
খবর পেয়ে মঙ্গলবার সাহিদাকে দেখতে যান মন্দিরবাজারের বিএমওএইচ দেবব্রত মণ্ডল। তিনি হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্সে করে ফের শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে পাঠান সাহিদাকে। কিন্তু এ দিনও সেই হাসপাতাল থেকে প্রথমে ন্যাশনাল তারপরে শেষবেলায় এনআরএস হাসপাতালে পাঠানো হয়। দিনভর হয়রানির পরে বিকেলে সাহিদাকে এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর স্বামী জাকির পুরকাইত বলেন, ‘‘একাধিক সরকারি হাসপাতালে দিনভর ঘুরলাম। প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু মিলল না। কোথাও গেলে চিকিৎসা মিলবে, তার সদুত্তরও পেলাম না।’’ এনআরএস হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ থাকলে আগের বার কেন ভর্তি করা হল না, প্রশ্ন জাকিরের।
অভিযুক্ত হাসপাতালের কর্তারা এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। এনআরএস হাসপাতালের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘শয্যা খালি না থাকলে কী ভাবে রোগিণীকে ভর্তি করে পরিষেবা দেওয়া হবে?’’ স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, অকারণে ‘রেফার’ ও তার জেরে রোগীর চিকিৎসায় ঘাটতি হলে নির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগ দায়ের করা হোক। রোগিণীর পরিজনদের অভিযোগের ভিত্তিতেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে পদক্ষেপ করবে স্বাস্থ্য দফতর।