Hive Beetles

মৌমাছি পালকদের কাছে ত্রাস ‘ছোট চাক পোকা’

মৌমাছি পালনের মাধ্যমে অনেকে স্বনির্ভর হয়েছেন। পরাগমিলনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে মৌমাছিরা পরিবেশে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

ক্যানিং  শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪ ০৮:৩০
Share:

মৌপালনের বাক্সে হানা দিয়েছে পোকার দল। নিজস্ব চিত্র  honey bee (1).jpeg

নতুন এক পোকার উপদ্রবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন মৌমাছি প্রতিপালকেরা। পোকার দাপটে অনেকে মৌমাছি প্রতিপালন ছেড়েও দিচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে স্থানীয় সূত্রে।

Advertisement

সম্প্রতি ‘স্মল হাইভ বিটল’ বা ‘ছোট চাক পোকা’র (বিজ্ঞানসম্মত নাম: এথিনা টুমিডা) দাপটে কার্যত ত্রাহি রব পড়েছে। ইতিমধ্যেই এই পোকার আক্রমণের হাত থেকে মুক্তি পেতে গবেষণা শুরু করেছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। তবে এখনও প্রকৃত সমাধান সূত্র মেলেনি বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। আপাতত নানা ধরনের উপায় অবলম্বন করে এই পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে।

মৌমাছি পালনের মাধ্যমে অনেকে স্বনির্ভর হয়েছেন। পরাগমিলনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে মৌমাছিরা পরিবেশে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সারা বিশ্বের মধ্যে ভারতবর্ষ বর্তমানে মধু উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গও মৌমাছি পালন ও মধু উৎপাদনে দেশের মধ্যে প্রথম সারির রাজ্যগুলির মধ্যে পড়ে। জঙ্গলের মধু সংগ্রহের পাশাপাশি, এ রাজ্যে প্রায় ১৫০০০ মৌমাছি পালক রয়েছেন, যাঁরা প্রধানত ইউরোপিয়ান মৌমাছি (এপিস মেলিফেরা) অথবা ভারতীয় মৌমাছি (এপিস সেরানা) প্রতিপালন করেন। এখানে ১০০টি এপিস মেলিফেরা কলোনি থেকে বছরে ৩-৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রোজগার করা সম্ভব। তাই পশ্চিমবঙ্গে মৌমাছি পালন একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবিকা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

Advertisement

তবে মৌমাছি পালনে সমস্যাও কম নেই। টিকটিকি, পাখি, পোকামাকড়ের আক্রমণ যেমন রয়েছে, তেমনই নানা ধরনের ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণও হয়। ১৯৯১-৯২ সালে ‘থাই স্যাক ব্রুড’ রোগের প্রভাবে দক্ষিণ ভারতের প্রায় ৯০ শতাংশ ভারতীয় প্রজাতির মৌমাছির কলোনি নষ্ট হয়ে যায়। তাই মৌমাছিদের রোগ ও শত্রু সম্পর্কে আগাম সচেতন না থাকলে মৌমাছি পালকদের যথেষ্ট লোকসানের আশঙ্কা থেকে যায়। ইদানীং, এই ‘ছোট চাক পোকা’ও মৌমাছি পালকদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলে এই পোকা প্রথম দেখা গেলেও গত দু’দশক ধরে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এর উপস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতি দেখা যাচ্ছে। এ দেশে ২০২২ সালে প্রথম এই পোকার উৎপাত দেখা গিয়েছিল বসিরহাট সংলগ্ন অঞ্চলে। প্রথম দিকে ইউরোপিয়ান মৌমাছির কলোনিতে এই পোকার আক্রমণ চোখে পড়লেও গত বছর থেকে ভারতীয় মৌমাছিতেও এই পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে।

দুই ২৪ পরগনা ছাড়াও মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ সহ দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সমস্ত জেলায় এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। মূলত, মে-জুন থেকে অগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এর আক্রমণ বেশি। এই পোকার আক্রমণে কোনও কোনও জায়গায় মৌপালকদের সমস্ত চাষ নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। দিনের পর দিন এ ভাবে ক্ষতি করলেও এই পোকার হাত থেকে বাঁচার এখনও পর্যন্ত সে রকম কোনও উপায় কৃষিবিজ্ঞানীরা বের করতে পারেননি।

সে কারণেই এই আক্রমণকে প্রতিহত করতে বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বনের জন্য মৌমাছি পালকদের নির্দেশ দিচ্ছেন তাঁরা। যেমন, নতুন কলোনি কেনার সময়ে এই পোকার উপস্থিতি আছে কিনা সেটা দেখে নেওয়া। দুর্বল কলোনিগুলিকে কৃত্রিম খাবারের মাধ্যমে শক্তিশালী করে তোলা, মৌ-বাক্সের ফাটল দ্রুত মেরামত করা, বটম বোর্ড নিয়মিত পরিস্কার করা, সর্বোপরি বাক্সে পূর্ণাঙ্গ পোকা দেখলেই সেগুলিকে মেরে ফেলা সহ নানা ধরনের সাবধানতা অবলম্বনের কথা বলা হচ্ছে।

ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদের অধীনস্থ অল ইন্ডিয়া কো-অর্ডিনেটেড রিসার্চ প্রজেক্ট অন হানিবি অ্যান্ড পলিনেটরসের বিজ্ঞানীরা পরিবেশবান্ধব উপায়ে এই পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য গবেষণা করে চলেছেন।, রামকৃষ্ণ আশ্রম কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র, নিমপীঠের শস্য সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ প্রবীরকুমার গড়াই বলেন, “অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এই পোকার আক্রমণ সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে মৌপালকদের। দ্রুত যাতে এই পোকার হাত থেকে পরিত্রাণের উপায় মেলে, সেই চেষ্টাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষি বিজ্ঞানীরা চালিয়ে যাচ্ছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement