পোক্ত: বাঘ আটকাতে নাইলনের বেড়া মেরামত করা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।
ইয়াস মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ করছে বন দফতর। দুর্গম এলাকার ক্যাম্প অফিসগুলি থেকে বনকর্মীদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনা হচ্ছে। পাশাপাশি জঙ্গলের সামানায় নাইলনের জাল মেরামত করা হচ্ছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়।
গত বছর আমপানে সুন্দরবনের ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকার বহু জায়গাতেই নাইলনের জাল ছিঁড়ে গিয়েছিল। ফলে অসংরক্ষিত হয়ে পড়েছিল জঙ্গল। অনেক জায়গায় নাইলনের বেড়া না থাকায় জঙ্গল থেকে বাঘ বা অন্য পশুদের গ্রামে ঢুকে পড়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছিল। কিন্তু এবার সেই ঝুঁকি নিতে চায় না বন দফতর। তাই ‘ইয়াস’-এর সতর্কবার্তা আসার সঙ্গে সঙ্গেই সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় নাইলনের বেড়া মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও ২৪ পরগনা বন বিভাগ, দুই দফতরই এই কাজ করছে।
বনকর্মীরা জানান, ঝড়ের সময় যদি নদীতে জোয়ার থাকে তাহলে প্রচুর জলস্ফীতি হয়। জঙ্গলের অনেক গভীর পর্যন্ত জল ঢুকে যেতে পারে। এই পরিবেশ জঙ্গলে থাকা পশুদের কাছে অচেনা। তাই নিরাপদ ও উঁচু জায়গার খোঁজে নাইলন জাল ছিঁড়ে জঙ্গল থেকে নদী সাঁতরে লোকালয়ে চলে আসতে পারে তারা। সেই কারণেই নাইলনের বেড়া মজবুত করার উপরেই বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছে বন দফতর।
ইতিমধ্যেই যে জম্মু দ্বীপ, চুলকাটির জঙ্গলের মতো দুর্গম ক্যাম্প থেকে বন কর্মীদের সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। বন দফতরের সমস্ত বিট অফিস ও রেঞ্জ অফিসগুলিতে ১৫ দিনের রেশন মজুত করা হয়েছে। পাশাপাশি যাবতীয় ওষুধপত্রও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সেখানে। সমস্ত জলযানগুলিকে নিরাপদে নোঙর করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বন আধিকারিকরা। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে ক্যানিং ও নামখানায় বনদফতরের তরফে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। বনকর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় পানীয় জলও মজুত করা হয়েছে। এছাড়া মাস্ক, স্যানিটাইজারও মজুত করা হয়েছে সমস্ত রেঞ্জ অফিস ও বিট অফিসগুলিতে। ঝড়ের পর দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্ত রেঞ্জ অফিসে বৈদ্যুতিক করাত, টর্চ লাইট, নাইলন জাল সারানোর সামগ্রী-সহ নানা সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ঝড়ে জাল ছিঁড়ে গিয়ে যদি বাঘ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পরে, তাহলে দ্রুত সেই বাঘ ধরার জন্য প্রয়োজনীয় ঘুম পাড়ানি গুলি, বন্দুক এবং খাঁচা তৈরি রাখা হচ্ছে।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অতিরিক্ত ফিল্ড ডিরেক্টর সৌমেন মণ্ডল বলেন, “ঝড়ে যাতে নাইলনের বেড়া ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সেই কারণে দুর্বল বেড়াগুলি মেরামত করা হচ্ছে। যদি বেড়া ছিঁড়েও যায়, সেই বেড়া দ্রুত মেরামতের জন্য বেশ কয়েকটি দল গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া ঝড়ের ফলে যদি জঙ্গলের পশুরা বাইরে বেরিয়ে আসে তাঁদেরকে যত দ্রুত সম্ভব পুনরায় জঙ্গলে ফেরত পাঠাবার ব্যবস্থা করা হবে।”