Jirengacha Block Hospital

হাসপাতালে যাওয়ার পথে উড়ে আসে কটূক্তি

আর জি কর-কাণ্ডের পর থেকে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জেলার বহু হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক, নার্সরা কেমন পরিবেশে কাজ করেন— তা সরেজমিন দেখতে গিয়ে উঠে এল বহু ক্ষোভ, আশঙ্কা, আতঙ্কের চাপা কাহিনী। আজ, ভাঙড়ের জিরেনগাছা ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালের কথা

Advertisement

সামসুল হুদা

ভাঙড়  শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:০৮
Share:

জিরেনগাছা ব্লক হাসপাতালে যাওয়ার এই আলো-আঁধারি পথেই কয়েক বছর আগে এক মহিলা নার্সকে যৌন হেনস্থা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।

কয়েক বছর আগে ভাঙড়ের জিরেনগাছা ব্লক হাসপাতালে ডিউটিতে যোগ দিতে যাওয়ার সময়ে হাসপাতালের অদূরেই এক মহিলা নার্সকে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছিল অপরিচিত এক যুবকের বিরুদ্ধে। তদন্তে নেমে পুলিশ আজও প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে পারেনি।

Advertisement

আর জি কর-কাণ্ডের পরে উত্তাল রাজ্যের নানা এলাকা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তেও প্রতিবাদ সংগঠিত হচ্ছে। নিজেদের কর্মস্থলে মহিলাদের নিরাপত্তার দাবি উঠেছে সর্বত্র। এমন পরিস্থিতিতে ভাঙড় ২ ব্লকের জিরেনগাছা ব্লক হাসপাতালের নার্স, মহিলা চিকিৎসক ও মহিলা কর্মীরা হাসপাতাল থেকে প্রায় ৩০০ মিটার আলো-আঁধারি রাস্তা পেরোতে আতঙ্কিত থাকেন। জিরেনগাছা ব্লক হাসপাতালে যাওয়ার এটিই প্রধান রাস্তা। হাতিশালা বাজার প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে জিরানগাছা ব্লক হাসপাতাল। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ মিটার রাস্তার দু’পাশে ঘন আমবাগান। অভিযোগ, সেখানে আলো, সিসি ক্যামেরা না থাকায় আলো-আঁধারি রাস্তায় মহিলাদের লক্ষ্য করে নানা ধরনের কটূক্তি উড়ে আসে।

ভাঙড় ২ ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতের কয়েক লক্ষ মানুষ চিকিৎসার জন্য জিরেনগাছা ব্লক হাসপাতালে যান। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩ জন মহিলা চিকিৎসক, ১৪ জন মহিলা নার্স, দু’জন মহিলা সাফাই কর্মী ছাড়াও আশা, এএনএম সহ বহু মহিলা কর্মী রয়েছেন।

Advertisement

তাঁদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভিতরে যখন-তখন বহিরাগত লোকজন ঢুকে পড়ে। হাসপাতালের মধ্যে গাছতলায়, ফাঁকা বাগানে বহিরাগত ছেলেমেয়েরা এসে গল্প করে। অনেকে আবার সন্ধ্যার পরে আড্ডা মারতে হাসপাতালের ভিতরের ফাঁকা জায়গায় চলে আসে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স বলেন, ‘‘আর জি কর হাসপাতালের ঘটনার পর থেকে আমরা খুবই আতঙ্কিত। জিরেনগাছে ব্লক হাসপাতালে আসার পথে প্রায় ৩০০ মিটার আলো-আঁধারি রাস্তায় ভয় করে। অচেনা লোকজন বিভিন্ন ধরনের কটূক্তি করে। ওই রাস্তায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি ক্যামেরা ও আলোর ব্যবস্থা করা হয়, তা হলে কিছুটা নিশ্চিন্ত বোধ করতে পারি। এর আগে ওই রাস্তায় আমাদের মহিলা কর্মীদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করা হয়েছিল। বিষয়টি আমরা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানিয়েছিলাম।’’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক মহিলা কর্মী বলেন, ‘‘ইদানীং অল্পবয়সি ছেলেরা বাইক, সাইকেল চালানোর নাম করে শরীর স্পর্শ করে বেরিয়ে যায়। আমাদের মতো অনেক মেয়েই লজ্জায় অনেক সময়ে কিছু বলতে পারি না। হাসপাতাল ও হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় পুলিশের নজরদারি বাড়ালে ভাল হয়।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানান হয়েছে, আর জি কর-কাণ্ডের পরে স্বাস্থ্যভবনের নির্দেশ অনুযায়ী হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক, নার্স ও মহিলা কর্মীদের জন্য আলাদা রেস্ট রুম, মহিলাদের জন্য আলাদা শৌচালয় তৈরি করা হয়েছে। মহিলাদের শৌচালয়ে যাওয়ার রাস্তায় পুরুষদের যাতায়াত কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া, গোটা হাসপাতাল ও হাসপাতাল চত্বরে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এক জন অফিসারের নেতৃত্বে কয়েক জন সিভিক হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের বিএমওএইচ হিরন্ময় বসু বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যভবনের নির্দেশ অনুযায়ী হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক ও কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আলাদা বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া, হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আলো লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালে আসার পথে কিছু সমস্যা রয়েছে, যা নিয়ে আমি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।’’

ভাঙড় ২ বিডিও পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তায় কিছু সমস্যা নিয়ে অভিযোগ এসেছে। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা কী ভাবে সুনিশ্চিত করা যায়, তা দেখা হচ্ছে। ওই রাস্তাটি সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement