দুই জেলায় এখনও তৈরি করা গেল না প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা
Cyclone Yaas

দুয়ারে ত্রাণ প্রকল্পে ভুয়ো আবেদন বাছতে নাকাল উত্তরের প্রশাসন

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমার ১০টি ব্লক এবং তিনটি পুরসভা এলাকা থেকে মোট ৫১,০৮৮টি আবেদনপত্র  জমা পড়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২১ ০৬:৫০
Share:

যাচাই: ইয়াস দুর্গতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তদন্ত করছেন ব্লক প্রশাসনের আধিকারিক। ক্যানিংয়ের ইটখোলা পঞ্চায়েত এলাকায়। ফাইল চিত্র।

দুয়ারে ত্রাণ প্রকল্পে ভুয়ো আবেদন বাছতে কার্যত নাকাল হতে হচ্ছে জেলা ও ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের। প্রশাসন সূত্রে খবর, জমা পড়া আবেদনের বড় একটা অংশ ভুয়ো।

Advertisement

বসিরহাট মহকুমায় ক্ষতিপূরণের আবেদন খতিয়ে দেখার কাজ শেষ হয়েছে। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমার ১০টি ব্লক এবং তিনটি পুরসভা এলাকা থেকে মোট ৫১,০৮৮টি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। তদন্তে দেখা গিয়েছে, ৪৫,৮৩২টি আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া নথি সঠিক। বাকিগুলি ভুয়ো।

জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘‘অনেক আবেদনকারী ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি করে দেখিয়েছিলেন। তদন্তে এমন প্রমাণ মিলেছে। সেগুলি বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ভুয়ো আবেদনের সঠিক সংখ্যা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। আরও কিছুটা সময় লাগবে। প্রচুর ভুয়ো আবেদন জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্লকের বিডিও।

Advertisement

বিডিও (সন্দেশখালি ১) সুপ্রতিম আচার্য বলেন, ‘‘মোট ১০,৩৮৭টি ক্ষতিপূরণের আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে আনুমানিক কমবেশি ৩ হাজার ভুয়ো। সব আবেদন খতিয়ে দেখে তালিকা জেলাতে পাঠাচ্ছি। জেলা প্রশাসন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’’ সন্দেশখালি ২ ব্লক থেকে ৯০৮৮টি আবেদন জমা পড়েছে। বিডিও অর্ণব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রচুর ভুয়ো আবেদন ধরা পড়ছে। এখনও খতিয়ে দেখার কাজ সম্পূর্ণ হয়নি।’’ হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, আবেদন জমা পড়েছে ৯০০৫ টি। তার মধ্যে বহু ‘ভুয়ো’ আবেদনপত্র রয়েছে। ব্লকের যে সব পঞ্চায়েত এলাকায় কোনও ক্ষতি হয়নি, সেখান থেকেও অনেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেছেন। হাসনাবাদ ব্লক থেকে আবেদন জমা পড়েছিল ৯৫১২টি। ব্লক প্রশসানের দাবি, তার মধ্যে ভুয়ো আবেদনের সংখ্যা ৪৪৮।

এ দিকে ক্ষতিপূরণের আবেদনপত্র খতিয়ে দেখতে যাওয়ার কাজে যুক্ত সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোথাও কোথাও তৃণমূলের নেতা, কর্মীদের দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে ক্ষতিপূরণ বিলির প্রক্রিয়া আদৌ পক্ষপাতহীন হবে কিনা, উঠেছে সেই প্রশ্নও। ‘বিব্রত’ প্রশাসনের একাংশ।

বিজেপি নেতা ফিরোজ কামালের অভিযোগ, ‘‘সরকারি প্রতিনিধি ছাড়া তদন্তে কারও থাকার কথা নয়। কিন্তু সেখানে তৃণমূলের লোকজন থাকছেন। ওঁদের দেখে গ্রামের মানুষ ভয়ে কোনও অভিযোগ করতে পারছেন না। ফলে, বিরোধী বলে পরিচিত মানুষ সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’’

তৃণমূল অবশ্য এই অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছে। মিনাখাঁর তৃণমূল নেতা মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল বলেন,‘‘সব অভিযোগ মিথ্যা। সরকারি প্রতিনিধিরা আবেদনকারীদের বাড়ি চেনেন না। আমাদের কর্মীরা তাঁদের বাড়ি চিনিয়ে দিয়ে থাকতে পারেন। এর বেশি কিছু নয়। আমাদের দলের কোনও কর্মী সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে ছিলেন না।’’

প্রশাসনের তরফেও অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। জেলা শাসক বলেন, ‘‘এই ধরনের কোনও অভিযোগ আসেনি। এলে খতিয়ে দেখা হবে।’’

আবার, ক্ষতিপূরণের আবেদন করা সত্ত্বেও প্রশাসনের তরফে কেউ ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখতে আসেননি বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেকে।

বুধবার সন্দেশখালির মনিপুর গ্রামের কাজল মণ্ডল দাবি করেন,‘‘রাস্তার উপরে তাঁবু খাটিয়ে দিন কাটাচ্ছি। অথচ আমাদের বাড়িতে প্রশাসনের কেউ গেলেন না।’’ মিনাখাঁর আটপুকুর অঞ্চলের লাল্টু মণ্ডলের আক্ষেপ, ‘‘ইয়াসের আমার ১০ বিঘা ভেড়ির মাছ সব নদীতে চলে গিয়েছে। দুয়ারে ত্রাণ প্রকল্পে ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কেউ আসেননি। মুখ খুললে মার জুটবে, তাই সাহস করে প্রতিবাদ করতে পারছি না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement