হাবড়ার পাড়ুইপাড়ায় তৈরি হচ্ছে ফুচকা। ছবি: সুজিত দুয়ারি।
এখানে অধিকাংশ বাড়িতেই ফুচকা তৈরি ও বিক্রি হয়।
কোনও বাড়িতেই মেয়ে-বউরাও বসে থাকেন না। পুরুষদের সঙ্গে কাজে হাত লাগান। উপার্জন করেন সকলে মিলে। কাজের খোঁজে বাইরে যেতে হয় না।
লোকের মুখে মুখে হাবড়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আয়রা পাড়ুইপাড়া কবেই ‘ফুচকাপাড়া’ হয়ে গিয়েছে! পাড়ায় দেড়শোর কিছু বেশি পরিবারের বাস। ফুচকা বিক্রি করেই এখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দা আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হয়েছেন। আগে দু’একটি বাড়িতে ফুচকা তৈরি হত। দেখাদেখি এখন বেশিরভাগ বাড়িতেই হয়। হাতে টাকা থাকায় বাড়ির মহিলারাও পরিবারের প্রয়োজনে খরচ করেন। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, পোশাক কেনা বা চিকিৎসার খরচ চালাতে তাঁদের কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না। বাড়ির পুরুষেরাও নেশা করে টাকা নষ্ট করেন না।
কেন তাঁরা এই পেশা বেছে নিলেন?
বাসিন্দারা জানান, ব্যবসাটি লাভজনক। হাজার পাঁচেক টাকা পুঁজিতেই শুরু করা যায়। বিয়েবাড়ি থেকে জন্মদিন, অন্নপ্রাশন-সহ যে কোনও অনুষ্ঠানে ফুচকার চাহিদা বেড়েছে। দোকানেও ফুচকা প্যাকেটে করে বিক্রি হয়। বিকেল থেকেই রাস্তাঘাটে ফুচকার দোকান বসে যায়।
এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘এখন পড়াশোনা করেও সহজে চাকরি মেলে না। তাই বিকল্প কাজের আশায় বসে না থেকে ফুচকার ব্যবসায় যুক্ত হই। যা আয় হয়, তাতে সুখেই সংসার চলে যায়।’’
কাজের অভাবে জেলার বহু মানুষ ভিন রাজ্যে বা ভিন দেশে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে চলে যান। তবে, এখানকার বাসিন্দারা সে পথ মাড়ান না। এমনকি, অতিমারি-পর্বে যাঁরা ভিন রাজ্য থেকে ফিরেছিলেন, তাঁরাও আর ফেরত যাননি। ঘরে বসেই অর্থনৈতিক ভাবে স্বনির্ভর হয়েছেন। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘কাজ জানলে ভাতের অভাব হবে কেন? তা হলে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।’’
এলাকায় বেশ কিছু পাকাবাড়ি আছে। কয়েক বছর আগেও অনেকেরই পেশা ছিল মাছ ধরা। কিন্তু খাল-বিল-নদী সংস্কারের অভাবে মাছ মেলে না। সে কারণেও তাঁরা এই পেশায় চলে আসেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে ফুচকা তৈরি। কেউ ফুচকা তৈরি করে বিকেলে ভ্যানে করে বিক্রি করতে বেরিয়ে যান, কেউ আবার তৈরি করে পাইকারি বিক্রি করেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে তাঁদের কাছ থেকে ফুচকা নিয়ে যান।
৩৩ বছর ধরে ফুচকার ব্যবসা করছেন এই পাড়ার দুলাল সর্দার। তাঁর কথায়, ‘‘ফুচকা ব্যবসায় অর্ধেকই লাভ। আমার সঙ্গে ছেলে-বৌমাও এই কাজে যুক্ত। সংসার চালাতে কোনও অসুবিধা হয় না।’’ রমা প্রমাণিক নামে এক মহিলার কথায়, ‘‘সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শাশুড়ির সঙ্গে রোজ ৩-৪ হাজার ফুচকা তৈরি করি। নিজে স্বনির্ভর হয়েছি।’’ রাজকুমার প্রামাণিক নামে আর এক জন ২৫ বছর ধরে ফুচকার ব্যবসা করছেন। পাইকারি ও খুচরো— দু’ভাবেই বিক্রি করেন। তিনি জানান, বাড়ির মহিলারা মূলত আটা মাখা, বেলা, ভাজার কাজ করেন। বিকাশ সর্দার নামে এক যুবক বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগেও এলাকায় আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল ছিল না। এখন ফুচকার কারবার করে সকলেই ভাল আছি।’’