কাদা পায়ে স্কুলের পথে। ছবি: দিলীপ নস্কর।
শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার পথে থকথকে কাদা। টাল সামলাতে না পেরে মাঝে মধ্যেই উল্টে পড়ছে কচিকাঁচার দল। কমে গিয়েছে পড়ুয়াদের দৈনন্দিন উপস্থিতি। কিন্তু প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা শুধু আশ্বাস দিয়েই কাজ সারছেন।
ডায়মন্ড হারবার ২ ব্লকের খোদ পঞ্চায়েতের বামুনতলা শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তা দিয়ে এখন যাতায়াত করাই দায়। রাস্তার কোথাও কোথাও তো হাঁটু সমান কাদা জমে গিয়েছে। কাদার মধ্যে মিশে রয়েছে নানা আবর্জনা। কাঁটা, শামুকের খোলে পা কাটছে খুদে পড়ুয়াদের। বাসিন্দা এবং পড়ুয়াদের অভিভাবকদের ক্ষোভ, বিধানসভা ভোটের আগে বলা হয়েছিল, আপাতত ওই রাস্তায় কয়েক হাজার ইট পেতে দেওয়া হবে। কিন্তু ভোট মেটার পরে কেউ আসেনি।
বিডিও বর্ণমালা রায় বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতি অথবা বিধায়ক তহবিল থেকে রাস্তা তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ অনুমোদন হয়। ওই রাস্তাটি যাতে দ্রুত করা হয়, তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’
প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মিস্ত্রিপাড়া, সর্দারপাড়া ও মুসলিমপাড়া— এই তিন পাড়া নিয়ে বামনতলা গ্রাম। সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। ২০০৫ সালে ওই গ্রামে একটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র তৈরি হয়। বর্তমানে সেখানে ৬৩ জন পড়ুয়া এবং ৪ জন শিক্ষিকা রয়েছেন। গ্রামের ছেলেমেয়েদের প্রায় আধ কিলোমিটার রাস্তা উজিয়ে ওই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে যেতে হয়। কিন্তু দিন কয়েকের বৃষ্টির পরে পুরো রাস্তাটাই কাদায় ভরে গিয়েছে। সেই থকথকে কাদা পার হয়ে বেশিরভাগ পড়ুয়াই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে যেতে চাইছে না। অভিভাবক সুমিত্রা মণ্ডল, সেরিনা বিবিদের ক্ষোভ, ছেলে-মেয়েদের কোলে করে কাদা রাস্তা পেরোতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে পিছলে কাদায় পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আর বাচ্চাদের একা পাঠালে সারা গায়ে কাদা মেখে ফিরছে। অভিভাবকদের কথায়, ‘‘স্কুল থেকে ছেলেমেয়েদের জন্য জুতো দিয়েছে বটে, কিন্তু সেটা তো রাস্তার জন্য পায়েই উঠল না!’’
শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের প্রধান শিক্ষিকা মানসী দাসের আক্ষেপ, ‘‘কচিকাঁচাদের আর কী বলব? আমরাই তো কাদা ঠেলে আসছি। কত বার পিছলে পড়েছি তার হিসাব নেই। ভিজে পোশাকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্লাস নিতে হচ্ছে। খুদে পড়ুয়াদেরও ভিজে পোশাকে থাকতে হয়।’’ একই সঙ্গে তাঁর ক্ষোভ, রাস্তাটির বেহাল দশা সম্পর্কে প্রশাসনকে একাধিকবার বলা হলেও কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। এ দিকে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমছে। বাড়ছে স্কুলছুটের সংখ্যা।
ডায়মন্ড হারবার বিধায়ক দীপক হালদারের আশ্বাস, বর্ষার পরেই ওই রাস্তায় ইট পাতার কাজ শুরু হবে। প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা বরাদ্দও হয়েছে।