Lychee

বিরূপ আবহাওয়ায় ফলন তলানিতে, বাজারে চড়া দাম লিচুর

চাষিরা জানান, এপ্রিলের গোড়ার তীব্র তাপপ্রবাহই কার্যত শেষ করে দিয়েছে লিচুর ফলন। তা ছাড়া কম শীত ও শীতকালীন বৃষ্টির অভাবও প্রভাব ফেলেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

Advertisement

সমীরণ দাস 

বারুইপুর শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৩ ০৬:৫৮
Share:

গাছে গাছে রয়ে গিয়েছে ঝলসে যাওয়া লিচু। নিজস্ব চিত্র।

পেয়ারার মতোই খ্যাতিতে পিছিয়ে নেই বারুইপুরের লিচুও। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই মহকুমা শহর-সংলগ্ন গ্রামীণ এলাকায় লিচুর চাষ হয়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে, এমনকি, রাজ্যের বাইরেও রফতানি হয় বারুইপুরের লিচু। প্রতি বছরই এপ্রিল-মে মাসে বাজার ছেয়ে থাকে এই ফল। কিন্তু, এ বার ছবিটা একেবারেই আলাদা। কারণ, বারুইপুরে লিচুর ফলন একেবারেই ভাল হয়নি বলে জানাচ্ছেন চাষিরা।

Advertisement

চাষিরা জানান, এপ্রিলের গোড়ার তীব্র তাপপ্রবাহই কার্যত শেষ করে দিয়েছে লিচুর ফলন। তা ছাড়া কম শীত ও শীতকালীন বৃষ্টির অভাবও প্রভাব ফেলেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

বারুইপুরের কল্যাণপুর, শিখরবালি ১-সহ বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচুর লিচুর চাষ হয়। চাষিরা জানান, এখানে দু’ধরনের লিচু চাষ হয়ে থাকে। দেশি এবং বোম্বাই লিচু। গ্রীষ্মের শুরুতেই দেশি লিচুর ফলন শুরু হয়। এর কিছু দিন পর থেকে ফলতে শুরু হয় বোম্বাই লিচু। এ বার দেশি লিচু কিছু মিললেও, বোম্বাই লিচুর ফলন কার্যত নেই বলেই দাবি চাষিদের।

Advertisement

শিখরবালি ১ পঞ্চায়েতের ত্রিপুরানগর গ্রামের চাষি অলোক নস্করের তিন বিঘা জমিতে ৩৯টি লিচু গাছ রয়েছে। অলোক জানাচ্ছেন, গত বছরও প্রায় এক লক্ষ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। এ বার হাজার পাঁচেক টাকারও বিক্রি হয়নি। ফলে চাষের খরচও ওঠেনি। তাঁর কথায়, “চৈত্রের শেষ দিকে যে তাপপ্রবাহটা হল, তাতেই লিচু চাষ শেষ হয়ে গিয়েছে। দেশি লিচু সেই সময় কিছু গাছে ছিল। বেশির ভাগই ঝলসে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বোম্বাই লিচুটা ওই সময়ে তৈরি হয়। তীব্র তাপপ্রবাহে বেশির ভাগ গাছের মুকুল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে বোম্বাই লিচু এ বার প্রায় ফলেইনি। এ রকম আগে দেখিনি।”

বারুইপুরের কাছারি বাজারের ফল বিক্রেতা শাহারুল লস্কর জানান, বারুইপুরের লিচু মিলছে না। বাইরে থেকে কিছু লিচু আসছে। তবে অন্য বারের তুলনায় কম। ফলে লিচুর দাম বেড়েছে। বিক্রেতারা জানান, অন্য বার বারুইপুরের দেশি বা বোম্বাই লিচু এক আঁটি (৫০টা) ৭০-৮০ টাকা হিসেবে বিক্রি হত। বাইরের লিচু মিলত ৮০-১০০ টাকায়। জোগান কম থাকায় সেই দাম এখন ১৫০-১৮০ টাকা।

কেন এই পরিস্থিতি? লিচুর ফলন কমের পিছনে একাধিক কারণ দেখছেন বিশেষজ্ঞেরা। কৃষিবিজ্ঞানী তথা নিমপীঠ রামকৃষ্ণ আশ্রম কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রধান চন্দনকুমার মণ্ডল বলেন, “লিচুর মুকুল আসার জন্য ঠিক মতো শীত পড়া দরকার। শীতটা একটু লম্বা হওয়াও দরকার। এ বার সেটা হয়নি। অন্য বার শীতে সামান্য হলেও বৃষ্টি হয়। নভেম্বরের পর থেকে এ বার প্রায় বৃষ্টিই হয়নি। ফলে মাটি শক্ত থাকায় ফলের বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়েছে। এপ্রিলে তীব্র তাপপ্রবাহের বহু লিচু ঝলসে গাছেই ফেটে যায়। এ সবের জেরেই ফলন খারাপ হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement