সুন্দরবনের কুড়েখালি নদীতে মাছ, কাঁকড়া ধরছেন এক মহিলা। নিজস্ব চিত্র।
জঙ্গলের গভীরে নদী-খাঁড়িতে গিয়ে তবেই কাঁকড়ার সন্ধান মেলে। সেই কাঁকড়া আড়তে এনে বিক্রি করে যে-ক’টা টাকা মেলে, তা দিয়ে সংসার চলে। উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের কালীতলা পঞ্চায়েত এলাকার কয়েকশো মানুষ এই জীবিকার সঙ্গে জড়িয়ে। তবে করোনা-কালে বিক্রি কম হওয়ার কারণে কাঁকড়া শিকারিদের রোজগারেও টান পড়েছে।
হিঙ্গলগঞ্জের সুন্দরবন লাগোয়া কুড়েখালি নদীর একদিকে কালীতলা পঞ্চায়েতের সামসেরনগর, অন্য দিকে আড়বেঁশে ১ জঙ্গল। কাছেই ঝিঙাখালি বন দফতর। ব্লক প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, ৪ নম্বর সামসেরনগর থেকে প্রায় চারশোর মতো পুরুষ-মহিলা রোজ জঙ্গলে যান কাঁকড়া সংগ্রহ করতে। এঁদের মধ্যে অবশ্য সকলের বন দফতরের অনুমতিপত্র নেই। যাঁদের কাছে তা নেই, তাঁরা জঙ্গলঘেরা জালের তলা দিয়ে সুন্দরবনের ভিতরে খাঁড়িপথে ঢুকে কাঁকড়া ধরেন।
বিষ্ণুপদ মণ্ডল, ফজের আলি, রত্না সর্দার, দুলাল মুন্ডারা জানালেন, পর্যটকদের দেখা নেই। ফলে কাঁকড়ার বাজারদর খুবই কম। তা সত্ত্বেও সংসারের অভাব মেটাতে জঙ্গলে যেতে হয় কাঁকড়া ধরতে। নৌকোয় আলকাতরা লাগাতে লাগাতে ফরিদ গাজি বলেন, “আমাদের মধ্যে যাদের কাছে জঙ্গলে যাওয়ার বন দফতরের অনুমতিপত্র আছে, তারা কাঁকড়া ধরার জন্য বনের মধ্যে চার-পাঁচদিন থাকি। এক, দেড় কুইন্টালের মতো কাঁকড়া ধরে তবেই ফিরি। যাঁদের পাস নেই, তাঁরা বনকর্মীদের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে একদিনের বেশি থাকে না জঙ্গলে।’’
জঙ্গলে বাঘের আক্রমণের ভয় আছে। কুমিরের ভয় আছে। কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা করলে খাবার জুটবে না। তাই বিপদকে সঙ্গী করেই জঙ্গলে যান ওঁরা। পূর্ণিমা মণ্ডল বলেন, “ভয় পেলে তো আর পেট শুনবে না। তাই স্বামীর সঙ্গে জঙ্গলে যাই কাঁকড়া ধরতে। কাঁকড়া বিক্রি করে আমরা যা পাই, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি লাভ করে আড়ত ব্যবসায়ীরা।”
স্থানীয় ভাবে অনেকে পাইকারি দরে কাঁকড়া কেনেন। সেই কাঁকড়া বাছাই করে নদী পথে ধামাখালি হয়ে কলকাতার বাজারে যায়। সেখানে দু’তিনশো টাকা কেজি বিক্রি হলেও জঙ্গল থেকে যাঁরা কাঁকড়া ধরেন, তাঁদের কেজি প্রতি বড় জোর ৪৫-৫০ টাকা জোটে। কাঁকড়া শিকারিদের কথায়, শীতের মরসুমে দাম বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু পর্যটক না এলে কাঁকড়ার তেমন দাম পাওয়া যায় না।
ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজের কী বিকল্প নেই কিছু? হিঙ্গগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ি বলেন, ‘‘মূলত সামসেরনগর এলাকা থেকে যাঁরা জঙ্গলে মাছ ধরতে যান, তাঁদের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সুন্দরবনের জঙ্গলে ঢোকা এড়াতে ওই মৎস্যজীবীদের নিয়ে মধুচাষের মাধ্যমে আয়ের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’