দুর্ঘটনা: যশোর রোডে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
যশোর রোডে পাশের গাছে ট্রাকের ধাক্কা লেগে মৃত্যু হল চালকের। গুরুতর জখম খালাসি-সহ চার জন। তাঁদের বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁর কালুপুর এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সুরেশ ঘোষাল। বাড়ি বাঁকুড়ায়। জখমদের নাম আনোয়ার মণ্ডল, আজিজুল মণ্ডল, ইমন আলি মণ্ডল এবং জিয়াউদ্দিন মণ্ডল। সকলেরই বাড়ি গাইঘাটা থানা এলাকায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গাইঘাটা দিক থেকে ফাঁকা ট্রাকটি বনগাঁর দিকে আসছিল। পথে অন্য একটি গাড়িকে পাশ দিতে গিয়ে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা মারেন। লোকজন ছুটে আসে। তবে দুমড়ে যাওয়ায় ট্রাকের ভিতর থেকে চালক-খালাসিকে বের করা সম্ভব হয়নি। বনগাঁ থানার পুলিশ গিয়ে গেট ভেঙে তাঁদের উদ্ধার করে।
যশোর রোড, ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক দত্তপুকুর থেকে বনগাঁ পর্যন্ত এতটাই সংকীর্ণ, দু’টি বড় ট্রাক পাশাপাশি যাতায়াত করতে পারে না। ফলে সড়কে যানবাহনের গতি কমে গিয়েছে। গভীর রাতে ও ভোরের দিকে রাস্তা তুলনায় ফাঁকা থাকলে যান চালকেরা গতি বাড়িয়ে দেন। সামনে হঠাৎ গাড়ি চলে এলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার মুখেও পড়েন।
সড়কের পাশে থাকা গাছে ট্রাক-সহ বড় যানবাহনের ধাক্কার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। বাসিন্দারা জানালেন, এমন ঘটনাও ঘটে, দু’টি ট্রাক পাশাপাশি যেতে গিয়ে আটকে গিয়েছে। ফলে দীর্ঘ সময় রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। যানজট তৈরি হয়।
সম্প্রতি হাবড়া, অশোকনগর এলাকায় এমন ঘটনায় তিন-চার ঘন্টা সড়ক অবরুদ্ধ ছিল। গাড়ির সঙ্গে ট্রাক বা অন্য গাড়ির ধাক্কার ঘটনায় চালক-খালাসিরা প্রায়ই জখম হচ্ছেন। এমনও দেখা যায়, দূর থেকে বড় কোনও গাড়ি আসতে দেখলে উল্টো দিকে থাকা ট্রাক বা বাস চালক গাড়ি থামিয়ে দেন। রাতে অপরিসর সড়কে ট্রাক চালাতে সমস্যায় পড়েন চালকেরা। বিশেষ করে যাঁরা বাইরের জেলা বা রাজ্য থেকে ট্রাক নিয়ে আসেন।
সংকীর্ণ সড়কে যানজট ও দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। কখনও ট্রাকের সঙ্গে বাইকের ধাক্কা, কখন বড় গাড়ির সঙ্গে অটো, সাইকেলের ধাক্কায় মানুষ মারা যাচ্ছেন, জখম হচ্ছেন। হাবড়া বনগাঁর যানজটে যানবাহন দীর্ঘ সময় আটকে থাকে। যানজট পেরিয়ে চালকেরা গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন, এর ফলেও দুর্ঘটনা ঘটেছে নিয়মিত। গাছের শুকনো মরা ডাল ভেঙে পথে মানুষ মারা যাচ্ছেন। দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সব মিলিয়ে জীবন হাতে নিয়ে মানুষ যানচালক সকলে যশোর রোড দিয়ে যাতায়াত করছেন।
বনগাঁ ও বারাসত মহকুমার মানুষ বহ বছর ধরে যশোর রোড সম্প্রসারণের দাবি তুলেছেন। প্রতিশ্রুতি ছাড়া অবশ্য কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবে ভোট এলেই যশোর রোড সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি মেলে রাজনৈতিক দলগুলির কাছ থেকে। ভোট গেলেই প্রতিশ্রুতির ঝাঁপি পড়ে থাকে বিশ বাঁও জলে, অভিযোগ স্থানীয় মানুষের।
বারাসত ও বনগাঁর কয়েক লক্ষ মানুষের যাতায়াতের প্রধান ভরসা যশোর রোড। কিন্তু বারাসত থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার পথে নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা। যানজটও হয়। অনেকে যশোর রোড এড়িয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কলকাতায় যাতায়াত করেন। যদিও এই পথে দূরত্ব কয়েক কিলোমিটার বেশি।
যশোর রোড সম্প্রসারণ করতে বা বিকল্প সড়ক নির্মাণে কেন্দ্র রাজ্য যে পদক্ষপ করেনি তা নয়। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৫ সালে বারাসত থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত যশোর রোডের বিকল্প রাস্তা ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে মাপজোক ও সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছিল। প্রস্তাবিত সড়কটি চার লেনের, সাড়ে ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৭ মিটার চওড়া হওয়ার কথা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তালিকাভুক্ত ছিল বিকল্প রাস্তাটি। যদিও কিছু চাষির বাধায় ও রাজনৈতিক অসযোগিতায় ওই কাজ এগোয়নি। টাকা ফিরে চলে যায়। হতাশ হন বনগাঁর মানুষ।
সম্প্রতি বারাসত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত পথে যশোর রোডে পাঁচটি রেলসেতু করার পরিকল্পনা করে কেন্দ্র ও রাজ্য। পাঁচটি রেলসেতুর মধ্যে একটি হওয়ার কথা বনগাঁ শহরে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ শহরে যশোর রোডে প্রস্তাবিত রেলসেতুটি লম্বায় ১১১৫ মিটার হওয়ার কথা। ওই কাজের জন্য সড়কের পাশে থাকা ৬৬টি গাছ কাটতে হত। রেলসেতু তৈরির জন্য কেন্দ্রের মিনিস্ট্রি অফ রোড ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড হাইওয়ে বিভাগ থেকে টাকা বরাদ্দও করা হয়েছে। রাস্তার মাপজোক হয়। গাছ কাটার কাজও শুরু হয়। তারপরেই নানা জটিলতায় কাজ থমকে রয়েছে। আদালতের নির্দেশে গাছকাটা আপাতত বন্ধ। বৃক্ষপ্রেমীদের বক্তব্য ছিল, তাঁরা উড়ালপুলের বিপক্ষে নন। কিন্তু চান, প্রাচীন ঐতিহ্যপূর্ণ সব গাছ বাঁচিয়ে উড়ালপুল তৈরি হোক।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের (ডিভিশন ১) এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গাছ কাটা বন্ধ আছে। সে কারণে উড়ালপুল তৈরির কাজ থমকে।’’খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘সম্প্রসারণের জন্য পাঁচটি রেলসেতু তৈরির কাজ থমকে আছে্। সমীক্ষা এবং পরিকল্পনা সব হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না বলে হচ্ছে না।’’বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘কেন্দ্র পদক্ষেপ করেছে। কিন্তু রাজ্য সরকার পুনর্বাসন এবং জমির জন্য কোনও সহযোগিতা করছে না। ফলে কাজ এগোচ্ছে না।’’