এই হাল হয়েছে রাস্তার।—নিজস্ব চিত্র।
দৃশ্য ১: সকাল সাড়ে ৮টা। মায়ের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে শিশুটি। বেশ কিছু ক্ষণ দাঁড়ানোর পরেও একটি রিকশা পাওয়া গেল না। শিশুটিকে কোলে নিয়ে মা হাঁটতে শুরু করলেন। তার মধ্যে আবার বৃষ্টি হয়েছে। জল-কাদার মধ্যেই পায়ে হেঁটে স্কুলের পথে রওনা দিল শিশুটি।
দৃশ্য ২: দুপুর দেড়টা। এক সাইকেল আরোহী ওই রাস্তা দিয়ে তাড়াহুড়ো করে যেতে গিয়ে পিছলে পড়লেন। কাদা মাখা গায়ে, হাত-পা ছড়ে গেল। সেই অবস্থাতেই রওনা দিতে হল গন্তব্যের দিকে।
উত্তর ২৪ পরগনার গাড়ুলিয়া পুরসভার শীতলা পাড়া মেইন রোডের বিবেকানন্দগড় কার্লভার্ট থেকে ফিডাররোড বটতলা পর্যন্ত রাস্তাটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে প্রায়শই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এই দুই কিলোমিটার রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হয় না। একাধিকবার প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। পিচ উঠে গিয়ে রাস্তার মাঝে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। তাতে বৃষ্টির জল পড়ে ছোট পুকুরের আকার নিয়েছে। রাস্তার ইট বেরিয়ে হতশ্রী চেহারা। এলাকায় বয়স্ক লোকজন তো এই রাস্তাতে চলাফেরা করতেই ভয় পান। বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘এলাকা ঢেলে সাজা হচ্ছে। কিন্তু রাস্তাটির দিকে নজর দিচ্ছে না পুরসভা। বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে।
গাড়ুলিয়ার পুরপ্রধান সুনীল সিংহ বলেন, ‘‘এত দিন আমরা অনেক কাজ করেছি। তবে ওই রাস্তার কাজটি করা হয়নি। বোর্ড মিটিংয়ে রাস্তার কাজ করানোর কথা বলেছি। ভোটের পর খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০০০ সালে এই রাস্তা একবার সংস্কার করা হয়েছিল। তারপর থেকে রাস্তার কোনও সংস্কার হয়নি। অথচ এই রাস্তা দিয়ে ট্যাক্সি, গাড়ি সব সময়ে চলছে। মাঝে মধ্যে ছোট ট্রাক চলতেও দেখা যায় বলে জানান এলাকাবাসী। কিন্তু এখন রাস্তা খারাপ হওয়ায় রিকশা চালাতেও ভয় পান চালকেরা। কারণ, রিকশা থেকে বহু বার যাত্রীরা পড়ে গিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এই ভাঙাচোরা রাস্তায় রিকশার ক্ষতি হয় বিস্তর, এমনই অভিযোগ চালকদের। রাস্তা দিয়ে যাতায়াত কমে যাচ্ছে দেখে রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা দোকানগুলির ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষই ঘুরপথ ধরছেন।
অথচ, এই রাস্তার পাশে রয়েছে প্রাইমারি স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র। অমল মজুমদার, বৈশাখী হাজরারা বলেন, ‘‘এই রাস্তাটি যথেষ্ট প্রয়োজনীয়। কিন্তু এখন রাস্তা দিয়ে যেতে গেলেই পড়ে গিয়ে কারও মাথা ফাটছে, আবার কারও হাত-পা ভাঙছে। বিপদের আশঙ্কা মাথায় নিয়েই রাস্তায় বেরোতে হয়।’’
ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাপস চৌধুরী বলেন, ‘‘রাস্তা সংস্কারের কাজ করতে খরচ পড়বে প্রায় ২২ লক্ষ টাকা। আমি কাজ শুরু করতে পারেনি, কারণ আমার কাছে এত টাকার ফান্ড নেই।’’