জুলুম: হাসনাবাদ লোকালেও। — নিজস্ব চিত্র
ট্রেন প্রায় ছাড়ে ছাড়ে। বছর পঁয়ষট্টির বৃদ্ধ এক কামরা থেকে নেমে অন্য কামরায় ছোটাছুটি করছিলেন। এক সময়ে হতাশ হয়ে বলেই ফেললেন, ‘‘আর পারছি না। এত ফাঁকা আসন, অথচ বসার জন্য কেউ একটা জায়গা ছাড়ছে না।’’
তাঁকে দেখে ট্রেন থেকে নেমে এলেন এক কলেজ পড়ুয়া। হাত ধরে নিয়ে গিয়ে বসালেন তাঁর নিজের আসনে।
হাসনাবাদ স্টেশনে বৃহস্পতিবার সকালের ঘটনা।
বৃদ্ধের নাম ভূপতি নাথ। বাড়ি হিঙ্গলগঞ্জে। কলকাতায় মেয়ের বাড়ি যাবেন বলে নদী পার হয়ে সাতসকালে হাসনাবাদে ট্রেন ধরতে এসেছিলেন। কিন্তু তাঁর অভিজ্ঞতা মোটেই স্বস্তির হয়নি। কারণটা আর কিছুই নয়— ট্রেনের নিত্যযাত্রীদের দৌরাত্ম্য।
রানাঘাট, হাবড়া, কৃষ্ণনগর, বনগাঁ, ক্যানিংয়ের নিত্যযাত্রীদের দাপটের খবর ইতিমধ্যেই সংবাদপত্রে প্রকাশিত। ছবিটা হাসনাবাদ লাইনেও একই রকম। অভিযোগ, ছাতা, জলের বোতল, রুমাল দিয়ে জায়গা দখল করাটাই এই লাইনে দস্তুর। বৃদ্ধ ভূপতি নাথ একটি ছাতা সরিয়ে বসে পড়ায় তাঁর কপালে জুটেছে গালিগালাজ। অন্য কয়েকটি কামরাতেও সেই একই ছবি। হুমকি জুটেছে, আসন মেলেনি। এমনকী, বৃদ্ধদের জন্য বরাদ্দ আসনও না। সেখানে বসেছিল নিত্যযাত্রীদের তাসের আসর।
যাত্রীদের অভিযোগ, সকালের ট্রেনে নিত্যযাত্রীদের কয়েকজন পালা করে আগে এসে জায়গা দখল করে রাখে। খবরের কাগজ, তাসের প্যাকেট, জলের বোতল দিয়ে আসন দখল করা হয়। কেউ বসতে গেলে জোটে হুমকি। এক যাত্রী জানালেন, একবার ঝামেলায় জড়িয়ে তাঁকে মারও খেতে হয়েছিল। বনগাঁ কিংবা হাবড়ার মতো অতটা হুজ্জতি না হলেও নিত্যযাত্রীদের দ়ৌরাত্ম্যে সাধারণ যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হয় হাসনাবাদ লাইনেও। অন্যান্য লাইনের তুলনায় এই লাইনে যাত্রী সংখ্যা কম হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি।
বৃহস্পতিবার সকালে হাসনাবাদ স্টেশনে দাপট দেখা গেল নিত্যযাত্রীদের। ফাঁকা কামরায় উঠে খালি আসনের দিকে এগোতেই উড়ে এল নির্দেশ, ‘‘ও দিকে যাচ্ছেন যান, সিটে বসবেন না। ওটা আমাদের জায়গা।’’
আপনারা কারা? এ প্রশ্ন করতেই গেটে দাঁড়িয়ে থাকা এক মাঝবয়সীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আমাদের চেনেন না? আমরা ডেলি প্যাসে়ঞ্জার। আর ফাঁকা যে সব আসন দেখছেন, ও সবই আমাদের।’’ কিন্তু যাত্রী কোথায়? উত্তর এল, ‘‘অপেক্ষা করুন, সকলে এসে যাবে।’’
অন্য একটি কামরায় উঠতে ফের একই ঘটনা। এক যাত্রী বললেন, ‘‘ওদের সঙ্গে ঝামেলায় গিয়ে কোনও লাভ হবে না। ওদের দল বড়। পরের স্টেশনে আরও যাত্রী উঠবে। তখন খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারে।’’ তিনিই জানালেন, নিত্যযাত্রীরা সারা ট্রেন তাস খেলতে খেলতে যায়।
রানাঘাট, বনগাঁ লাইনের দুই যাত্রী রেলমন্ত্রকে টুইট করে সিট দখলের এই প্রবণতার কথা জানিয়েছিলেন। দুই জায়গাতেই মন্ত্রকের নির্দেশ পেয়ে নড়ে বসেছে জিআরপি, আরপিএফ। ধরপাকড় শুরু হয়েছে। অভিযান চলছে। সিট দখলের প্রবণতাও কমেছে গত কয়েক দিনে।
হাসনাবাদ লাইনের যাত্রীদের বক্তব্য, এ দিকে কবে নজর পড়বে রেলমন্ত্রকের।