Cyclone Amphan

গাছ চাপা পড়ে মৃত ২

বুধবার সকালে বসিরহাটের মহকুমাশাসকের দফতরে আসেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, বিধায়ক সহ আধিকারিকেরা।

Advertisement

নির্মল বসু ও নবেন্দু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২০ ০১:৪৬
Share:

গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু।

যা আশঙ্কা ছিল, সত্যি হল তা-ই। প্রবল ঝড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রাণহানি হয়েছে দু’জনের। হাজার হাজার মাটির বাড়ি, গাছ ভেঙেছে। প্রচুর বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে দুই জেলার বেশির ভাগ অংশ বিদ্যুৎ সংযোগহীন হয়ে পড়েছে। ইন্টারনেট, মোবাইলের সংযোগও নেই বেশিরভাগ এলাকায়।

Advertisement

বুধবার সকালে বসিরহাটের মহকুমাশাসকের দফতরে আসেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, বিধায়ক সহ আধিকারিকেরা। প্রয়োজনীয় নানা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আধিকারিকদের নির্দেশ দেন জ্যোতিপ্রিয়। পরে জানান, মিনাখাঁ থানার ধুতুরদহ পঞ্চায়েতের দক্ষিণ বারগা গ্রামে নূরজাহান বেগম (৫৬) নামে এক মহিলা গাছ চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন। বসিরহাটে গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরের। পুলিশ জানায়, মাটিয়ার রাজেন্দ্রপুর গ্রামের ওই কিশোরের নাম মোহন্ত দাস (১৭) । ইমেলগঞ্জের কানাইঘাটের বাসিন্দা রেখা গায়েন ত্রাণ শিবিরে যাওয়ার সময়ে মাথায় গাছ ভেঙে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন।

প্রশাসন সূত্রের খবর, সন্ধ্যা পর্যন্ত সাড়ে ৫ হাজারের বেশি মাটির বাড়ি এবং প্রচুর পরিমাণে গাছ ভেঙে পড়ার খবর এসেছে। উপড়ে গিয়েছে প্রচুর বিদ্যুতের খুঁটি। হিঙ্গলগঞ্জ এবং সন্দেশখালিতে সান্ডেলেরবিল, সাঁতরা পুটিয়ার চক, সর্দারপাড়া-সহ একাধিক জায়গায় নদীর বাঁধে হয় কোথাও বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। কোথাও ভাঙনও হয়েছে।

Advertisement

হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের স্বরূপকাটি স্লুইসগেট, পারঘুমটি স্লুইসগেট, গোবিন্দকাটি রপতানপাড়া— এই সব জায়গায় বাঁধের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। জোয়ারের সময়ে বাঁধ ভাঙতে পারে বলে সেচ দফতর ও স্থানীয় মানুষের আশঙ্কা। তারই মধ্যে বাঁধ সারাইয়ের কাজ চলছে।

অন্য দিকে, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের রূপমারি পঞ্চায়েতের বেড়েরচক গ্রামে ডাঁসা নদীর বাঁধে সন্ধের দিকে ধস নামে। সেচ দফতরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করেন। ব্লক প্রশাসনের আশঙ্কা জোয়ারের সময়ে ঝড়ের দাপট একই রকম থাকলে বিভিন্ন নদীর বাঁধ ভেঙে বড়সড় বিপর্যয় হতে পারে।

ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর যোগেশগঞ্জ, গোবিন্দকাটি, কালীতলা, দুলদুলি এই সমস্ত এলাকায় অনেক মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। কোনও কোনও বাড়ির অ্যাসবেস্টসের চাল উড়ে গিয়েছে।

মিনাখাঁ ব্লকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ১৮০টি মাটির ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া, আটপুকুর, মোহনপুর এলাকায় নদী বাঁধের অবস্থা উদ্বেগজনক।

ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, হিঙ্গলগঞ্জের ১ নম্বর আমবেড়িয়া গ্রামের নদী বাঁধ আয়লার সময়ে ভেঙে ছিল। তারপরে কিছুটা বাঁধ কংক্রিটের হলেও এখনও প্রায় দেড়শো ফুট নদীবাঁধ অত্যন্ত দুর্বল। সেখানে এ বারও ভাঙার আশঙ্কা প্রবল। অন্য দিকে, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েতের সর্দারপাড়া ঘাটের কাছে প্রায় ৩০০ ফুট নদী বাঁধ আয়লার সময় ভেঙেছিল। এ বারও ভাঙতে পারে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা।

এ দিন সকাল থেকে হিঙ্গলগঞ্জ বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল গোবিন্দকাটি এলাকার বিভিন্ন বাঁধ পরিদর্শনে যান এবং স্থানীয় মানুষদের দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ মেরামতির কাজ করান। দেবেশ বলেন, ‘‘কয়েকটি জায়গায় নদী বাঁধের অবস্থা নিয়ে মানুষের ভয় রয়েছে। আমরা পঞ্চায়েতগত ভাবে এবং সেচ দফতরের তরফ থেকেও যা যা পদক্ষেপ করা যায়, তার চেষ্টা করছি।’’

সন্দেশখালি ২ ব্লকের আতাপুর থেকে তালতলা ঘাট পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার কলাগাছি নদী বাঁধের অবস্থান অত্যন্ত বিপজ্জনক। বেশ কিছুটা জায়গায় ধস নেমেছে। এ বিষয়ে নদীবাঁধের পাশের বাসিন্দা মহাদেব পাত্র, দিবাকর দাস, শঙ্কর মণ্ডলরা বলেন, ‘‘আয়লার সময় এই জায়গায় বাঁধ ভেঙে আমাদের ঘরবাড়ি সব ভেসে গিয়েছিল। বুলবুলে বাঁধ না ভাঙলেও ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ঝড়ে। সেই ঘর মেরামতি করে উঠতে না উঠতেই এ বার আমপানের তাণ্ডব।

স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, আয়লার অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে এখনও কেন বাঁধ কংক্রিটের হল না!

সন্দেশখালি ১ বিডিও সুপ্রতিম আচার্য বলেন, ‘‘নদী বাঁধের অবস্থা নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement