প্রতীকী ছবি।
উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক আর্সেনিকপ্রবণ এলাকায় আর্সেনিকমুক্ত জল সরবরাহের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে তিনটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যার ফলে প্রায় ৩৭ লক্ষ মানুষের উপকৃত হওয়ার কথা। কিন্তু সেই প্রকল্পগুলি শেষ করতে রাজ্য সরকারের তরফে যে সময়সীমার উল্লেখ করা হয়েছিল, তা খারিজ করে দিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। পরিবর্তে পরিবেশ আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে আর্সেনিকপ্রবণ অঞ্চলে দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। না-হলে সরকারের উপরে বড় আর্থিক জরিমানা ও অন্য কড়া শাস্তি ধার্য করা হবে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বিভিন্ন সময়ে আর্সেনিক নিয়ে একাধিক নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বছর তিনেক আগেও আর্সেনিকপ্রবণ এলাকাগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখতে পরিবেশ আদালতের নির্দেশে একটি কমিটি তৈরি করেছিল রাজ্য সরকার। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই কমিটি উত্তর ২৪ পরগনার তেঘরিয়া ও গাইঘাটা ব্লকের আর্সেনিক পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট জমা দেয়। কমিটির সুপারিশের উপরে ভিত্তি করে গত জুলাইয়ে সরকারের তরফে পরিবেশ আদালতে একটি হলফনামা জমা দেওয়া হয়। সেখানে জানানো হয় যে, হাবড়া ১ ও ২, গাইঘাটা ও বারাসত ২ নম্বর ব্লকে আর্সেনিকমুক্ত জল সরবরাহের জন্য ‘মেগা সারফেস ওয়াটার বেসড পাইপড ওয়াটার স্কিম’ ইতিমধ্যেই চলছে। ওই প্রকল্পের আংশিক কাজ গত মার্চেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড ১৯ পরিস্থিতির জন্য তা করা যায়নি। তাই ওই প্রকল্পের সময়সীমা বাড়িয়ে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত করা হয়েছে।
ওই প্রকল্প ছাড়াও হাড়োয়া, রাজারহাট, বারাসত ২ নম্বর ব্লক, বাদুড়িয়া, বসিরহাট ১ ও ২ নম্বর ব্লক, দেগঙ্গা, স্বরূপনগর, বাগদা, বনগাঁয় পাইপলাইনের মাধ্যমে
ভূপৃষ্ঠের জল পরিশোধনের পরে সরবরাহের জন্য আরও তিনটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাড়োয়া, রাজারহাট ও বারাসতের প্রকল্পের জন্য সময়সীমা ধরা হয়েছে আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। বাদুড়িয়া-সহ অন্য এলাকা এবং বাগদা, বনগাঁ প্রকল্পের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
তার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ আদালত জানায়, আর্সেনিক দূষণের সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের তরফে কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সরকারের তরফে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলি শেষের জন্য যে সময়সীমার কথা বলা হচ্ছে তা ‘অযৌক্তিক’! তাই আর্সেনিক দূষণ কমাতে রাজ্য সরকার যে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করেছে, সেই অনুযায়ী দ্রুত কাজ করতে হবে। এটুকু বলেই থেমে থাকেনি আদালত। উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রকল্পের জন্য কী সময়সীমা হবে, তা নিজেই এ বার নির্ধারণ করে দিয়েছে পরিবেশ আদালত। আদালতের নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী হাড়োয়া, রাজারহাটের প্রকল্প চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে, বাদুড়িয়া-সহ অন্য এলাকা এবং বাগদা, বনগাঁর প্রকল্প আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করতে হবে। মামলার আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত এ
বিষয়ে বলেন, ‘‘এত লক্ষ মানুষের জীবন যেখানে জড়িত, সেখানে প্রকল্প শেষের জন্য সরকারি তরফে ঢিলেঢালা মনোভাব একেবারেই কাম্য নয়। আর্সেনিকমুক্ত, পরিস্রুত জল পাওয়া মানুষের অধিকার। সেই অধিকার রাজ্য সরকারকেই সুনিশ্চিত করতে হবে।’’