প্রতীকী ছবি।
বৃদ্ধের নাকে অক্সিজেনের নল, কিন্তু অক্সিজেন সিলিন্ডারে প্রাণ বাঁচানোর বায়ু তলানিতে! হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, অক্সিজেন নেই। বাবার প্রাণ বাঁচাতে সন্তানেরা অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার চেষ্টা করছেন। দিন কয়েক আগে বারাসত হাসপাতাল থেকে দুলালচন্দ্র পাল নামে ওই বৃদ্ধকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য যত ক্ষণে অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া গিয়েছিল, তত ক্ষণে মারা যান মধ্যমগ্রামের ওই বাসিন্দা।
কোভিড পরিস্থিতিতে রাজ্যে অক্সিজেনের জন্য কার্যত হাহাকারের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় মানুষকে কী পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, তা হয়তো এই ঘটনা থেকেই স্পষ্ট। যদিও সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেনের ঘাটতি নেই।
ওই বৃদ্ধের ছেলে তাপস পাল জানাচ্ছেন, তাঁর বাবা, বছর ছিয়াশির দুলালবাবু টাইফয়েডে ভুগছিলেন। গত শনিবার সকালে আচমকা শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে প্রথমে মধ্যমগ্রাম পুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা না মেলায় বারাসত জেলা হাসপাতালে বাবাকে নিয়ে যান তাঁরা। সেখানে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। এর পরে দুলালবাবুর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে অক্সিজেন দেওয়া হয়। তাপসবাবু জানান, সেখানে সিলিন্ডারে অক্সিজেন প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছিল। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে এ বিষয়ে জানান তাপসবাবু। তাঁর দাবি, তখন ওই চিকিৎসক তাঁদের বলেন, অক্সিজেন নেই, তাই রোগীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
তাপসবাবু জানান, এর পরে তাঁর দাদাকে বাবার কাছে রেখে তিনি পাশের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো যাবে কি না, তা জানতে গিয়েছিলেন। সেই নার্সিংহোম জানায়, কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট না-থাকলে ভর্তি করানো যাবে না। এর পরে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করেন তিনি। কিন্তু যত ক্ষণে তিনি বাবার কাছে ফিরে গিয়েছেন, তত ক্ষণে চিকিৎসক ওই বৃদ্ধকে পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেছেন।
এই ঘটনা ফের অক্সিজেনের হাহাকারের বিষয়টিকেই উস্কে দিয়েছে। রাজ্যে শুধু কোভিড রোগীদেরই নয়, আরও অনেক রোগীরই অক্সিজেন দরকার হয়। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, এক জন কোভিড রোগী যদিও বা সামান্য অক্সিজেনটুকু পান, অন্য রোগীরা পাবেন কি?
তাপসবাবু অবশ্য বলছেন, বাবা মারা যাওয়ার পরে তাঁকে স্বাস্থ্য ভবন থেকে ফোন করে জানানো হয়েছিল, দুলালবাবু করোনা পজ়িটিভ ছিলেন। যদিও যে করোনা পরীক্ষার যে শংসাপত্র তাঁরা পেয়েছেন, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে।
অক্সিজেনের সমস্যা অবশ্য স্বাস্থ্যকর্তারাও মেনে নিচ্ছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এই সমস্যা মেটাতে কয়েক দফা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের সুপারদের হাতেও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুত এই সমস্যার সুরাহা হবে।