ইটভাটায় শ্রমিকেরা। ফাইল চিত্র।
মদের দোকানে খাতা খুলেছেন ইটভাটার শ্রমিকেরা। সেখান থেকে ধারে চলছে মদ কেনা।
ইটভাটার শ্রমিককে বাজারে গিয়ে কমপক্ষে ৩০০ টাকার বাজার করতে হচ্ছে। কারণ তার থেকে কমে কিনলে দোকানি পুরনো ৫০০ টাকা খুচরো করে দিচ্ছে না। ইটভাটায় ইট তৈরি বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায়।
সব কটির কারণ খুচরো সঙ্কট।
ঝাড়খন্ডের বিনয় টুডু, লাল ধারিরা কুলপির ইটভাটাতে কাজ করতে এসেছেন। ইটভাটা চত্বরেই ছোট গুমটি করে তাঁরা সপরিবারে থাকেন। তাঁদের মাইনে হয় প্রতি সপ্তাহে। নোট বাতিলের বাজারে মাইনে এখনও হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সবই বাতিল ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোটে। সেই টাকা খুচরো করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন শ্রমিকেরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডায়মন্ড হারবার এবং কুলপি মিলিয়ে প্রায় ৬০টি ছোটবড় ইটভাটা রয়েছে। প্রতিটি ভাটায় ৫০ থেকে ৬০ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের অনেকেই ভিন রাজ্যের। খুচরোর সমস্যায় ডায়মন্ড হারবারের হুগলি নদী লাগোয়া রামরামপুর, আব্দালপুর ও কুলপির মশামারি, দুর্গানগর এলাকার ইটভাটাগুলিতে উৎপাদন এখন প্রায় বন্ধ। কুলপির একটি ইটভাটার ম্যানেজার দেবাশিস মণ্ডল জানান, বর্তমানে ইট তৈরির মরশুম শুরু হয়ে গেলেও নগদ টাকার সঙ্কটে এখন ইটভাটাগুলিকে উৎপাদন প্রায় বন্ধ। কারন খুচরোর অভাবে শ্রমিকদের মজুরির দেওয়া যাচ্ছে না।
ইটভাটায় মাটি কাটার ঠিকাদার কুলতলির কুন্দখালি গ্রামের শঙ্কর সর্দারের অধীনে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের প্রতি দিন সন্ধ্যা টিফিন খরচ হিসেবে ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা দিতে হয়। কিন্তু তাঁর কাছে খুচরো নেই। তাই বাধ্য হয়ে তিনিও বিভিন্ন দোকানে বাকির খাতা খুলেছেন। শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘শ্রমিকদের খুশি রাখতে মুড়ি, ঘুগনি, চা, বিস্কুট, বিড়ি, সিগারেট থেকে শুরু করে দেশি মদের দোকানেও খাতা খোলা হয়েছে।’’
ডায়মন্ড হারবার ব্রিক ফিল্ড অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক চণ্ডীচরন জানা বলেন, ‘‘পুরানো ৫০০ ও ১০০০ টাকা বাতিলের পরে খুচরো সমস্যায় ইটভাটাগুলিতে উৎপাদন প্রায় বন্ধ। শ্রমিকদের মজুরি দিতে সমস্যা হচ্ছে। খুচরোর অভাবে বাধ্য হয়ে ৩-৪ জন শ্রমিককে এক সঙ্গে একটি ২০০০ হাজার টাকার নোট দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা একসঙ্গে বাজার করে সেই টাকা খুচরো করছেন।’’ তিনি জানান, যে সব ভিন রাজ্যের শ্রমিক ইটভাটা চত্বরে থাকেন তাঁদের বাকিতে চাল, ডাল, সব্জি, মাছ দেওয়ার জন্য কয়েকটি দোকানে বলে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে।