প্রতীকী ছবি।
যানজট সমস্যা এবং পথ দুর্ঘটনা রুখতে পদক্ষেপ করল বনগাঁ পুলিশ-প্রশাসন এবং পুরসভা।
শুক্রবার দুপুরে বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জ এলাকায় যশোর রোডে ট্রাকের ধাক্কায় এক মহিলার মৃত্যু এবং কয়েক জনের জখম হওয়ার ঘটনার পরে শহরবাসী প্রতিবাদে সরব হন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও মানুষ ক্ষোভ উগড়ে দেন। দাবি ওঠে, দিনের বেলা শহরের মধ্যে দিয়ে ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণের। প্রশ্ন তোলা হয়, লাগামহীন টোটো-ভ্যান-অটোর দৌরাত্ম্য নিয়ে। বনগাঁ এখন আলাদা পুলিশ জেলা হয়েছে। যানজট সমস্যা কমাতে এবং পথ দুর্ঘটনা কমাতে ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজছে। ডিএসপি ট্রাফিক, ওসি ট্রাফিক নিয়োগ করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে ট্রাফিক গার্ড। বেড়েছে পুলিশ কর্মীর সংখ্যাও। বনগাঁয় রয়েছে পরিবহণ দফতরের এআরটিও অফিস। শহরবাসী প্রশ্ন, এত কিছুর পরেও শহরের যানজট সমস্যা কমছে না। বরং ঘটছে দুর্ঘটনা। শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে শহরের যানজট সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছিল। ওই দিনই দুর্ঘটনার পরে রাতে জরুরি বৈঠকে বসেন পুলিশ-প্রশাসন-পুরসভা-পরিবহণ দফতরের কর্তারা। কী ভাবে শহরের যানজট সমস্যা কমানো যায়, তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। আলোচনা হয়, দুর্ঘটনা কী ভাবে বন্ধ করা সম্ভব, তা নিয়েও। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ থানার আইসি মানস চৌধুরী, এসডিপিও অশেষবিক্রম দস্তিদার, পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য, জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের সরকারি সদস্য গোপাল শেঠ, ডিএসপি ট্রাফিক-সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দিনের বেলা শহরের মধ্যে ট্রাক বা অন্য পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সকাল ৭টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এবং দুপুর ২টো থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শহরের রাস্তায় ট্রাক বা পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ হয়েছে। দিনের বেলা একমাত্র বেলা ১২টা থেকে ২টো পর্যন্ত শহরে ট্রাক ঢুকতে পারবে। সংকীর্ণ যশোর রোডে দিনের বেলা এমনিতেই যানবাহন, পথচারীদের ভিড় থাকে। ওই ভিড়ের মধ্যে ট্রাক ঢুকে পড়ে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু ও জখমের ঘটনা ঘটেছে। অতীতে দিনের বেলা নির্দিষ্ট সময়ে শহরে ট্রাক চলাচল করার প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বাস্তবে ওই নিয়ম ট্রাক চালকেরা মেনে চলেন না।
শহরবাসীর অভিজ্ঞতায় যানজট ও দুর্ঘটনার কারণগুলি মূলত, সংকীর্ণ সড়কের ফুটপাথ দখল করে অস্থায়ী দোকান। রাস্তা দখল করে অবৈধ পাকিং তৈরি করে যানবাহন রাখা। রাস্তার উপরে অটো-টোটো-বাইক-সাইকেল দাঁড়িয়ে থাকা। লাগামহীন ভ্যান-টোটো-অটোর দৌরাত্ম্য তো আছেই। রাস্তার উপরে কোনও অনুষ্ঠানের জন্য বড় বড় তোরণ তৈরি করা হয়। অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলেও আরও কয়েক দিন তোরণ সড়কে থেকে যায়। তাতেও বাড়ে সমস্যা।
দিনের বেলা ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আরও কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বৈঠকে। শহরের রাস্তায় যত্রতত্র যানবাহন পার্কিং করে রাখা এবং অবৈধ পার্কিংয়ে ট্রাক রাখা যাবে না। ফুটপাত দখল করে বেআইনি ব্যবসা করা যাবে না। শহরের মধ্যে বেআইনি টোটো, ই-রিকশা চলাচল বন্ধ করা। অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তোরণ খুলে নিতে হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। শহরের বাইরে থেকে আসা ভ্যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, ‘‘সিদ্ধান্তগুলি শীঘ্রই কার্যকর করা হবে।’’ শনিবার পুরসভা ও পুলিশের তরফে অটোয় মাইক বেধে সিদ্ধান্তের কথা শহরে প্রচার করা হচ্ছে। পুরপ্রধান শঙ্কর বলেন, ‘‘সোমবার থেকে বৈঠক নেওয়া সিদ্ধান্তগুলি কার্যকর করা হবে।’’
শনিবার দুপুরে শহরে ঘুরে অবশ্য পরিবর্তন কিছু চোখে পড়ল না। যশোর রোডে দিনের বেলা পণ্য নিয়ে ট্রাক বা ভারী যানবাহন চলেছে। সড়ক দখল করে বাইক-ভ্যান-সাইকেল, টোটো-অটো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। বনগাঁ-চাকদা সড়কে ইমারতি মালপত্রও পড়ে ছিল। শহরবাসীর বক্তব্য, যানজট ও দুর্ঘটনা কমাতে অতীতেও পুলিশ-প্রশাসনের তরফে নানা পদক্ষেপ করা হয়েছিল। কয়েক দিন চলার পরে নজরদারির অভাবে পুরনো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ বার যেন তার পুনরাবৃত্তি না হয়।