বনগাঁ হাসপাতালে রক্তদান করছেন চিকিৎসকেরা। নিজস্ব চিত্র Sourced by the ABP
একে প্রবল গরম। তার সঙ্গে জুড়েছে পঞ্চায়েত ভোট। দুয়ের যাঁতাকলে বনগাঁ মহকুমায় একের পর এক রক্তদান শিবির বাতিল হচ্ছে। ফলে, রক্তসঙ্কটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড সেন্টারে।
এই ব্লাড সেন্টার থেকে রোজ গড়ে ৩০ ইউনিট রক্ত সরবরাহ করা হয়। শনিবার পর্যন্ত ব্লাড সেন্টারে রক্ত ছিল ২৭১ ইউনিট। চাহিদার তুলনায় জোগান কমে যাওয়ায় চিন্তা বাড়ছে কর্তৃপক্ষের। পরিস্থিতি সামলাতে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে রবিবার হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেন। কিন্তু তাতেও ক’দিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে তা নিয়ে তাঁরা সংশয়ে। এ জন্য সমাজমাধ্যমে আবেদনও জানাচ্ছেন তাঁরা।
ব্লাড সেন্টার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৫, ১৭ এবং ১৮ জুন ঠাকুরনগর, হেলেঞ্চা এবং গোবরডাঙায় তিনটি রক্তদান শিবির হওয়ার কথা ছিল। তিনটিই বাতিল হয়। এ ছাড়া, চলতি মাসে যে ১১টি শিবির হয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রক্তদাতার সংখ্যা তুলনায় কম ছিল। একটি শিবিরের উদ্যোক্তারা ব্লাড সেন্টার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন, ৬০ জন মানুষ রক্ত দেবেন। বাস্তবে সেখানে রক্তদান করেন মাত্র ১৭ জন।
কেন এই পরিস্থিতি?
ব্লাড সেন্টারের আধিকারিক তথা মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক গোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘গরমে এমনিতেই শিবির কম হয়। কিন্তু এ বার গরম অনেক বেশি। তা ছাড়া, বিভিন্ন শিবিরের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, ভোট পর্ব না মিটলে তাঁদের পক্ষে শিবিরের আয়োজন করা সম্ভব নয়।’’
গ্রামীণ এলাকার বিভিন্ন রক্তদান শিবিরের উদ্যোক্তারা জানান, পঞ্চায়েত ভোটে রাজনৈতিক দলগুলির হয়ে মাঠে-ময়দানে কর্মী সমর্থকেরা নেমে পড়েছেন। ফলে, এখন শিবিরের আয়েজন করলে রক্তদাতার সংখ্যা খুবই কম হবে। সে কারণে ভোট-পর্ব না মিটলে শিবিরের আয়োজন করা যাচ্ছে না।
ওই ব্লাড সেন্টার সূত্রের খবর, বনগাঁ মহকুমার প্রায় ১১ লক্ষ মানুষ রক্তের প্রয়োজনে সেখানে আসেন। এ ছাড়াও জেলার অন্যত্র এবং পাশের নদিয়া জেলার একাংশের মানুষেরও ভরসা এই ব্লাড সেন্টার। ঘত শনিবার পর্যন্ত ১১টি রক্তদান শিবির থেকে সংগ্রহ হয়েছে ৫৩৪ ইউনিট রক্ত। গত বছর জুনে ১৫টি শিবির হয়েছিল। রক্ত সংগ্রহ হয় ৮৫০ ইউনিট।
রবিবার হাসপাতালের শিবিরে সেখানকার চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা ছাড়াও রক্তদান করেন ব্যবসায়ী সংগঠন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা। সব মিলিয়ে ১২৮ জন রক্তদান করেন। তাঁদের মধ্যে হাসপাতালের চিকিৎসক কুন্তল পাল বলেন, ‘‘ব্লাড সেন্টারে পর্যাপ্ত রক্ত নেই। জীবন বাঁচানোর জন্য এগিয়ে এলাম। আগেও রক্ত দিয়েছি।’’
গোপাল বলেন, ‘‘শিবিরের সংখ্যা না বাড়লে নিজেদের চাহিদা মেটানোই দুষ্কর হবে। বিভিন্ন ক্লাব, সামাজিক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে এ মাসে আরও পাঁচটি শিবির আয়োজন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, ভোটে হিংসার ঘটনা আকছার ঘটে। আহতদের রক্তে প্রয়োজন হতে পারে। রাজনীতির লোকজনও তাঁদের রাজনৈতিক কর্মব্যস্ততার মধ্যে রক্তদান শিবিরের জন্য সময় বের করলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সহজ হবে।