লোকসভা নির্বাচনে পদ্মফুলের নীরব আগ্রাসনে তৃণমূলের গড় প্রায় ধূলিসাৎ হয়েছিল। দক্ষিণ শহরতলির বজবজ বিধানসভা কেন্দ্রে গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের ৪৮ হাজারের মার্জিন নেমে এসেছিল সাড়ে চার হাজারে। সংগঠনহীন সেই বিজেপির ভোট এখনও তৃণমূলকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে বলেই দাবি জেলা বিজেপি-র নেতাদের।
তবে বিজেপি-র লোকসভার হাওয়া গায়েব বলে পাল্টা দাবি করছেন বজবজ পুরসভার তৃণমূলের ভাইস চেয়ারম্যান গৌতম দাশগুপ্ত। তিনি অবশ্য স্বীকার করেছেন, সিপিএম বা কংগ্রেস নয়, তৃণমূলের ঘরে নিঃশব্দে হামলা চালিয়ে তাদের অধিকাংশ ভোট কেটেছে বিজেপি-র একাংশ। পাশাপাশি তাঁর দাবি, ওটা ছিল লোকসভা নির্বাচন। এটা স্থানীয় ভোট। এখানে জনগণ কাজের মানুষকে ভোট দেবেন। মোদী হাওয়া পুরসভা নির্বাচনে খাটবে না।
চড়িয়াল তৃণমূল পার্টি অফিসে বসে গৌতমবাবুর বক্তব্য, বাম জমানায় পুর-হাসপাতাল বলতে ছিল এক ভুতুড়ে বাড়ি। গত নির্বাচনে ক্ষমতায় এসে তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট ১১টি ওয়ার্ডে আমূল সংস্কার করে সেটিকে একটি অত্যাধুনিক মিনি হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলেছে। ডিজিটাল এক্স-রে থেকে ইউএসজি, সব ব্যবস্থা রয়েছে। গত পাঁচ বছরে পরিষেবার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ তুলতে পারেনি বিরোধীরা। অতএব, মানুষ এ বার পদ্মফুল ছেড়ে ঘাসফুলেই ফিরে আসবে।
পুরসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টকে আটকাতে বজবজ পুরসভায় তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোট হয়েছিল গত নির্বাচনের পরেই। কারণ, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট করে পুরবোর্ড গঠন করেছিল। মোট ২০টি আসনে তৃণমূল ৮, কংগ্রেস ৪, বামফ্রন্ট ৭ ও জাতীয় কংগ্রেস ১টি আসন পেয়েছিল। নির্বাচন উত্তর জোটে তৃণমূলের সঙ্গে পাঁচ কংগ্রেস প্রার্থীও যোগ দিয়েছিল। তার পরেই জোটের বোর্ড গঠন করা হয়।
কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে বিজেপি এগিয়ে তিনটি আসনে। কয়েকটিতে দ্বিতীয় স্থানে। এ দিকে, বনগাঁ-বসিরহাট উপনির্বাচনে বামেদের রক্তক্ষরণের জন্য দায়ী করা হয়েছে পদ্মফুলকেই। সে ক্ষেত্রে গত লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে বজবজ পুর-এলাকায় অঙ্ক পুরো উল্টো। এখানে তৃণমূলের রক্তক্ষরণের কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে পদ্মফুল। তাই স্বভাবতই রাজ্যজুড়ে বিজেপি-র উত্থানে যখন আতঙ্কিত সিপিএম, তখন বজবজে বেশ ফুরেফুরে মেজাজেই রয়েছেন সিপিএম নেতারা। যদি লোকসভার নিরিখে বিজেপি তৃণমূলের ভোট কাটে, তাহলে সহজ-সরল অঙ্কে সিপিএম লাভবান। বজবজ পুরসভার নির্বাচনের দায়িত্বে রয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের প্রাক্তন সাংসদ শমীক লাহিড়ী। তিনি বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট নিজের ভোট ধরে রেখেছিল। সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোট বিজেপির পকেটে গিয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোট বামেদের দিকে ঝুকল না কেন? শমীকবাবুর বক্তব্য, ওই সময় মোদী হাওয়া ছিল। হয়তো সেই কারণে ওদিকে গিয়েছে। কিন্তু রাজ্য বিজেপির হাল দেখে প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোট বামফ্রন্টের দিকেই আসবে বলে মনে করছি। কারণ, সাধারণ মানুষ তৃণমূলকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আর ওদিকে যাবে না বলেই মনে হচ্ছে। বজবজ নির্বাচনে বিজেপি-র তরফে দায়িত্বে থাকা সুফল খাঁটু বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে নাগরিকেরা নিঃশব্দে কাজ সেরেছেন। প্রচার অভিযানে গিয়ে সাড়া পাচ্ছি। ওই নিঃশব্দ কাজ আরও গতি পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তা জানা যাবে ভোটের ফলাফলের পরে।’’
গত পুর-বোর্ড গঠনের সময়ে কংগ্রেসের জয়ী পাঁচ জন প্রার্থী তৃণমূলের সঙ্গে জোট করেছিল। পরে ওই পাঁচ জনের মধ্যে চার জন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ফলে কংগ্রেসের প্রায় ভাঙা হাট। কিন্তু বোর্ড গঠনে জোট করলেও দল ছাড়েননি এক জন কংগ্রেস প্রার্থী। তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি আত্রেয়ী দত্ত। এ বার তিনি ফের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। কংগ্রেসের ভাঙাহাটে তিনিই এক মাত্র প্রদীপ হয়ে উঠতে পারেন বলে আশাবাদী কংগ্রেসও। ভাইস চেয়ারম্যান, কংগ্রেসের গৌতম দাশগুপ্তও লোকসভা নির্বাচনের আগেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। গত বার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে লড়েছিলেন তিনি। এ বার ওই আসনটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় তিনি লড়ছেন ৪ নম্বরে। লোকসভার নিরিখে ওই আসন তৃণমূলের দখলে। তাই বিজেপি-র হাওয়াতেও নিজেকে সুরক্ষিত বলে মনে করছেন গৌতমবাবু।