—ফাইল চিত্র
বকেয়ার পরিমাণ প্রায় পাহাড় প্রমাণ। ভাটপাড়া পুরসভায় নতুন করে বোর্ড গড়ে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে তৃণমূল। ছ’দিন হল হাতে ক্ষমতা এসেছে। কিন্তু পুরপ্রধানের চেয়ারে বসা ইস্তক পাওনাদার কর্মী এবং উপভোক্তাদের সামলাতেই সময় চলে যাচ্ছে অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
সব মিলিয়ে বিব্রতকর অবস্থা পুরকর্তাদের। এখনও পর্যন্ত উপ পুরপ্রধান ঠিক হয়নি। কোনও বিভাগের চেয়ারম্যান পারিষদ নেই। তা ঠিক করতে আরও দিন দুই সময় লাগবে। তার ফলে ঝড়ঝাপটার অনেকটাই তাঁকে সামলাতে হচ্ছে। তবে দলের অন্যান্য কাউন্সিলরদের সাহায্যও তিনি পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পুরপ্রধান। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। আপাতত অর্থের সন্ধানে রয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
অবস্থা সামাল দিতে গত কয়েকদিনে দফায় দফায় বৈঠকও হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অস্থায়ী কর্মীদের বকেয়া বেতনের অনেকটাই মেটানো যাবে বলে মনে করছেন পুরপ্রধান। গত আট মাস ধরে বেতন না মেলায় সাফাই কর্মীদের সিংহভাগ কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। নতুন বোর্ডের আশ্বাসে ফের কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। তবে বেশিদিন বেতন বকেয়া রাখলে তাঁরা ফের বেঁকে বসতে পারেন।
২০১৫ সালে দ্বিতীয়বার এই পুরসভায় ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। পুরপ্রধান হন ভাটপাড়ার তৎকালীন বিধায়ক অর্জুন সিংহ। গত লোকসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়ে ব্যারাকপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হয়ে যান অর্জুন। তার পরে অনাস্থা এনে তাঁকে পুরপ্রধানের পদ থেকে অপসারিত করে তাঁর পুরনো দল। লোকসভা ভোটের পরে পুরপ্রধান নির্বাচনে পাশা পাল্টে নিজের ভাইপো সৌরভ সিংহকে জিতিয়ে এনে পুরসভা দখল করেন অর্জুন।
তার পর থেকেই শুরু হয় অচলাবস্থা। ভোটের এক মাস আগে থেকেই অস্থায়ী কর্মীদের বেতন বকেয়া পড়েছিল। পুজোর আগে সেই বকেয়া চার মাসে দাঁড়ায়। সেই সময় টানা কর্মবিরতি শুরু করেন অস্থায়ী সাফাই কর্মীরা। পরবর্তীকালে অস্থায়ী অন্যান্য কর্মীরাও সেই আন্দোলনে সামিল হন। শেষ পর্যন্ত দু’মাসের বেতন এবং পুজোর বোনাসের ব্যবস্থা হলে কাজে ফেরেন অস্থায়ী কর্মীরা। তার পর থেকে আর বেতন পাননি তাঁরা।অবসরপ্রাপ্ত পুরকর্মীদের পেনশন সরকার দিলেও তা পুর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই হয়। কিন্তু গত তিন মাসে পুরকর্মীরা পেনশন পাননি। তাঁরাও আন্দোলন করে পুরসভা অচল করেছিলেন। পরে যদিও তাঁরা ধর্না তুলে নেন। কিন্তু ফের আন্দোলন শুরু করেন অস্থায়ী সাফাই কর্মীরা। সেই আন্দোলন তিন দিন আগে পর্যন্ত চলেছে। কিছু অস্থায়ী সাফাই কর্মী কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে তাঁরা সংখ্যায় খুবই কম। মঙ্গলবার পুরপ্রধানের চেয়ারে বসেই অস্থায়ী সাফাই কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অরুণ। তিনি সাফাই কর্মীদের কাজে ফিরতে বলেন। বুধবার থেকেই কাজ শুরু করেছিলেন তাঁরা।অস্থায়ী কর্মীদের বকেয়া বেতনের পুরোটা মেটাতে গেলে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা দরকার। পুরপ্রধান জানান, সরকারের কাছ থেকে চলতি সপ্তাহে তাঁরা দু’কোটি সত্তর লক্ষ টাকা পাবেন। সেই টাকায় অস্থায়ী কর্মীদের বেতনের একাংশ মেটানো হবে। বাকি টাকা উন্নয়ন খাতে খরচ করা হবে। পুরপ্রধান অরুণ বলেন, ‘‘পুরসভা থেকে বিধবা, বার্ধক্য এবং প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হয়। সেই টাকা দীর্ঘদিন ধরেই বকেয়া রয়েছে। সব মিলিয়ে তাঁর পরিমাণ প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এ ছাড়াও প্রাক্তন কর্মীদের পেনশন এবং বিভিন্ন বিল বাবদ আরও কয়েক কোটি টাকা দরকার পুরসভার। সব মিলিয়ে পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি।’’ পুরপ্রধান জানান, রাজ্য সরকারের কাছে আমরা বিভিন্ন খাতে টাকার জন্য আবেদন পাঠাচ্ছি। যে ভাবেই হোক বকেয়া মেটানো হবে।