পান বাজারে হতাশ চাষিরা। নিজস্ব চিত্র।
শেষ পাতে পান হল বাঙালি বিয়ের ঐতিহ্য। কিন্তু সেই ছবি কী এ বার আদৌও দেখা যাবে? ৫০০ এবং ১০০০ টাকা বাতিল নোটের ধাক্কা এ বার এসে পড়েছে পান বরজগুলিতেও।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ মহকুমা পান চাষের জন্য বিখ্যাত। এই এলাকা থেকেই বাংলার অন্য জেলা, ভিন রাজ্য তো বটেই বিদেশেও পান রফতানি করা হয়। কাকদ্বীপের পান চাষি সংগঠনের নেতা সুশীল গুছাইত জানান, নগদের অভাবে পান চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সার, কীটনাশক কেনা যাচ্ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘সার কিনতে পারছি না। শ্রমিকদের টাকা দিতে পারছি না। আড়তদারেরা একসঙ্গে বেশি পান নিতে অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, ধার দাও অথবা পুরনো নোট নাও।’’
পান চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, নোট বাতিলের ধাক্কায় পানের ব্যবসা অর্ধেকের বেশি কমে গিয়েছে। বাংলা পাতা পান ১৫ দিন অন্তর বরজ থেকে তুলে ফেলতে হয়। মিঠে পাতার পান তুলতে হয় ২৫-২৭ দিন অন্তর। তার থেকে বেশি দিন বরজে পান থাকলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। কিন্তু বিক্রি কমে যাওয়ায় একসঙ্গে বেশি পান বরোজ থেকে তোলা যাচ্ছে না। ফলে গুণমান হারাচ্ছে পান।
পান চাষি নিত্যানন্দ হালদার জানান, নগদ টাকার অভাবে পানের বিক্রি অনেক কমে গিয়েছে। বরজ থেকে পান তুলে কম টাকাতেই বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। তাঁর আশঙ্কা, ‘‘এই অবস্থা চলতে থাকায় নতুন পান বরোজ তৈরির পুঁজি থাকবে না।’’
কাকদ্বীপের পান বাজারে প্রতি সপ্তাহে রবিবার এবং বুধবার বাংলা পাতার পান এবং মঙ্গলবার এবং বৃহস্পতিবার মিঠে পাতার পানের কেনাকাটা হয়। রবিবার পান বাজারে গিয়ে দেখা গেল, পান চাষিদের ভিড় উধাও। কয়েকটি আড়ত বন্ধ। পানের বড় আ়ড়তদার অদ্বৈত মণ্ডল বলেন, ‘‘৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের পরে রপ্তানি প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।’’ তিনি জানান, কাকদ্বীপের পান বাজার থেকে প্রতি সপ্তাহে ২৫-৩০টি লরি ভর্তি বাংলা পাতা এবং ১০ লরি ভর্তি মিঠে পাতার পান রফতানি হত। কিন্তু গত কয়েক দিনে মাত্র ১৫ লরি ভর্তি বাংলা পাতা এবং ৫টি লরি ভর্তি মিঠে পাতার পান রফতানি হয়েছে। পানচাষিদের আশঙ্কা, এই অবস্থা চললে পানের বরজ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কিছু উপায় থাকবে না।