স্বজন-হারা: মৃতের পরিবার। ছবি: শান্তনু হালদার
স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল মঙ্গলবার রাতেও। শরীর খারাপের কথা কিছু বলেননি। তবে স্ত্রীর দাবি, খাটাখাটনি হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন স্বামী। বলেছিলেন, কয়েক মাস বাদেই ফিরবেন। বলেছিলেন, ঢের হয়েছে, ভিনরাজ্যে আর যাবেন না কাজে।
স্বামী তাড়াতাড়িই ফিরবেন বটে। তবে কফিনবন্দি হয়ে।
রাজস্থানের মাটিতে মালদহের আফরাজুল শেখের হত্যা, আলিপুরদুয়ারের মধু সরকারের গুজরাতে অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে আরও এক বাঙালি শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল ভিনরাজ্যে। ঘটনাস্থল, চেন্নাইয়ের মানালি নিউটাউন থানা এলাকা।
বুধবার দুপুরে ওই থানার পুলিশ ঘরের দরজার ছিটকিনি ভেঙে পার্থ সরকার (৩৫) নামে ওই শ্রমিকের দেহ উদ্ধার করেছে। ওই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন পার্থ। প্রাথমিক ভাবে সেখানকার পুলিশের অনুমান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা পর্যন্ত দেহ ময়না-তদন্ত হয়নি।
পার্থর স্ত্রী মৌমিতা বা পরিবারের বাকি পাঁচজন অবশ্য অসুস্থতার কথা মানতে পারছেন না। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চান তাঁরা।
অশোকনগরের কাঁকপুল নয়াসমাজ এলাকার পার্থ জেসিপি চালান। বছর দশেক ধরে রাজ্যের বাইরে নানা জায়গায় কাজ করছেন। ২২ ডিসেম্বর গুজরাত থেকে কর্মসূত্রেই গিয়েছিলেন তামিলনাড়ুতে।
কী হয়েছিল তাঁর?
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে কাজে যাননি পার্থ। যে সংস্থার হয়ে কাজ করেন, সেখান থেকে তাঁর মোবাইলে বার বার ফোন করা হলেও ধরেননি। সে কথা পার্থবাবুর বাড়িতে ফোন করে জানান তাঁরা। যে বাড়িতে পার্থ ভাড়া থাকতেন, সেই বাড়ির মালিককেও ফোন করা হয়।
বাড়ির সদস্যেরা দেখেন, ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। তাঁরা যোগাযোগ করেন মানালি নিউ টাউন থানার সঙ্গে। দুপুরের দিকে পুলিশ এসে কাঠের দরজার ছিটকিনি ভেঙে ঢুকে দেখে, পার্থবাবু মাটিতে পড়ে। দেহে প্রাণ নেই। সংস্থার তরফে পার্থবাবুর বাড়িতে ফোন করে সে কথা জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে পার্থর আত্মীয় দেবাশিস দত্ত ও সুব্রত দে বিমানে চেন্নাই উড়ে গিয়েছেন। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু ঘটেছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তবে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।’’
মাস তিনেক আগে বাবা হয়েছেন পার্থ। এই অবস্থায় স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মৌমিতা। তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। বললেন, ‘‘ছেলেটার বাবাকে নিয়ে কোনও স্মৃতিই থাকবে না।’’