মনোনয়ন দাখিল নিয়ে তেমন কোনও গোলমালের অভিযোগ ওঠেনি। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহার নিয়ে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ তুলতে শুরু করল বিরোধীরা। বিজেপি এবং সিপিএমের অভিযোগ, প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মনোনয়ন তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে শাসক দলের দুষ্কৃতীরা।
ভোট প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ আপাতত ঝুলে রয়েছে। তবে এরই মধ্যে পুলিশের কাছে কিছু অভিযোগ জমাও পড়েছে। প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে নালিশ তাদের। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতারা।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে অধিকাংশই পুর এলাকা। পঞ্চায়েতের সংখ্যা হাতে গোনা। অভিযোগ, তা-ও যেন নিজেদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে না থাকে, সে জন্য মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য এমন হুমকি শুরু করেছে তৃণমূল।
ব্যারাকপুর ১ ব্লকে গ্রাম প়ঞ্চায়েতের সংখ্যা ৮টি। ব্যারাকপুর ২ ব্লকে সেই সংখ্যা ৬। অঙ্কের হিসেবে নেহাতই নগণ্য। মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়ে সে ভাবে বাধা দেওয়া বা হুমকির তেমন অভিযোগ নেই। বিজেপি সামান্য অভিযোগের কথা বললেও লিখিত কিছু জমা দেয়নি তারা। ব্যারাকপুর শহর-লাগোয়া দুই পঞ্চায়েত শিউলি এবং মোহনপুর। এ বারের ভোটে এই দুই পঞ্চায়েতকে ‘পাখির চোখ’ করেছে শাসক দল।
এই দুই পঞ্চায়েত নিয়ে ঘাসফুল শিবিরের মাথা ব্যথার কারণও রয়েছে। সম্প্রতি নোয়াপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হয়েছে। কংগ্রেসের হাতে থাকা এই কেন্দ্র তৃণমূলের হাতে এসেছে। জয়ের ব্যবধান ৬০ হাজারেরও বেশি। তারপরেও তাঁদের চিন্তা শিউলি এবং মোহনপুর। কারণ, উপনির্বাচনে এই দুই পঞ্চায়েতে তৃণমূল বিজেপির থেকে পিছিয়ে ছিল।
তৃণমূল সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত ভোটে সেই ব্যবধান মুছে ফেলতে মরিয়া শাসক দল। ফলে সর্বশক্তি দিয়েই লড়তে চাইছে তৃণমূল। ব্যারাকপুর ১ ব্লকে বিজেপি সব আসনে প্রার্থী দিতে না পারলেও, উপনির্বাচনে নিজেদের এগিয়ে থাকা আসনগুলিতে প্রার্থী দিয়েছে তারা। ফলে এই আসনগুলিতে দুই দলের টক্কর ভালই হবে বলে এলাকার বাসিন্দাদের ধারণা। বিজেপির ব্যারাকপুর মণ্ডলের সভাপতি অহীন্দ্র বসু বলছেন, ‘‘ওদের ধারণা ছিল, আমরা ওই আসনগুলিতে প্রার্থীই দিতে পারব না। কিন্তু আমরা প্রার্থী দেওয়াই ওদের হিসেব গুলিয়ে গিয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তা হলে সব ক্ষেত্রে অভিযোগ জানানো হচ্ছে না কেন? অহীন্দ্রের ব্যখ্যা, ‘‘প্রার্থীরা ভয় পাচ্ছেন। অভিযোগ করলে যদি ওঁদের কোনও ক্ষতি হয়? তেমন কিছু ঘটলে পুলিশের সাহায্য মিলবে না বলেও তাঁদের আশঙ্কা।’’
সিপিএম কিন্তু পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছে। দলের নেত্রী গার্গী চট্টোপাধ্যায়ের জানান, তাঁরা বেশিরভাগ আসনেই প্রার্থী দিয়েছেন। সেই প্রার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে বিরোধীদের অভিযোগকে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বলছেন নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওরা কিছু লোককে জোর করে দাঁড় করিয়েছে। লড়াইয়ে হার নিশ্চিত জেনেই ওরা এমন অভিযোগ তুলছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘হুমকি দিলে মনোনয়ন জমা করার আগেই তো দিতে পারতাম।’’