আগেও দুর্নীতি প্রসঙ্গে সরব হন শোভনদেব। জানান, কোনও দল যদি দেখাতে পারে যে সেখানে কোনও দুর্নীতি নেই, তবে সেই দলের পার্টি অফিসে ঝাঁট দেবেন। —ফাইল চিত্র।
তিনি বিধায়ক। তিনি মন্ত্রী। তিনি তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী। এ সব পরিচয়ের বাইরেও শোভনদেব চট্টাপোধ্যায়ের একটি পরিচয় রয়েছে। তিনি পুরোহিত। ‘চট্টোপাধ্যায়’ শোভনদেবকে বিভিন্ন সময় দলের আচার অনুষ্ঠানেও পুরোহিতের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। সেই শোভনদেব দলের চলমান অস্বস্তি নিয়ে মন্তব্য করতে টেনে আনলেন, মন্দির, দেবতা, পুরোহিত প্রসঙ্গ। বললেন, মন্দিরে পূজারী চোর হতে পারেন কিন্তু দেবতা? নৈব নৈব চ।
নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়াচ্ছে একের পর এক তৃণমূলের নেতার নাম। তাঁদের কেউ গ্রেফতার হচ্ছেন। কেউ মুখোমুখি হচ্ছেন ইডি-সিবিআইয়ের। নাম উঠছে শাসক-ঘনিষ্ঠ একাধিক ‘ব্যবসায়ী’রও। তার উপর কয়লা পাচার, গরু পাচার মামলা তো রয়েইছে। অন্য দিকে সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। এই আবহে দলের ভাবমূর্তি পরিষ্কারের একাধিক পদক্ষেপ করেছে তৃণমূল। দলের বিধায়ক তাপস রায় তো সাফ বলে দিয়েছেন, কয়েক জন ‘বদমাশ’ তৃণমূলে ঢুকে পড়েছে। তাই এমন ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে দল। এ বার দুর্নীতি ইস্যুতে মন্তব্য করলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। সেখানে তিনি টানলেন দেবতা এবং পূজারীর উদাহরণ। শনিবার খড়দহের একটি সভায় পরিষদীয় মন্ত্রী স্বীকার করেন নেন দুর্নীতিপরায়ণ কিছু মানুষ সব জায়গায় আছে। কিন্তু তার জন্য তাঁদের দলের সবাইকে দোষী করা সমীচীন নয়। এ কথা বলতে গিয়ে শোভনদেবের উক্তি, ‘‘সমাজের মধ্যে ভাল-খারাপ দুই-ই রয়েছে। ‘সৎ’ এবং ‘অসৎ’ দুটো শব্দও রয়েছে। অসৎ লোক নিশ্চয়ই আছে। তার জন্য তো গোটা দল নষ্ট হয়ে যায় না।’’ মন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘একটা মন্দিরে পুরোহিত চোর হতে পারেন। দেবতা কি চোর হয়ে যান? না কি অপবিত্র হয়ে যান? যাঁকে আমরা দেবতা বলে মনে করি, সত্যিই শ্রদ্ধা করি, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন চোর হবেন? আমি চোর হতে পারি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন চোর হবেন?’’
দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহের মতো শোভনদেবও নিশানা করেন বাম জমানাকে। উদয়ন তাঁর প্রয়াত বাবা কমল গুহের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ‘‘দলের স্বার্থে দুর্নীতি করেছেন বাবা।’’ আর শোভনদেব বাম আমলে সুপারিশে চাকরি হয়েছে এই দাবি করে বলেছেন, ‘‘বামফ্রন্টের জমানায় পলিটেকনিক কলেজে অন্তত ২০০ অধ্যাপককে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে।’’ মন্ত্রী একটি কাগজ পড়তে পড়তে বলেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হতে গেলে মাধ্যমিক থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পর্যন্ত ৫০ শতাংশ নম্বর থাকা প্রয়োজন। কিন্তু রজত বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়োগ করা হলেও তাঁর কোনও স্তরেই ওই নম্বর ছিল না। এমন অনেক নজির রয়েছে। দুর্নীতির সব তথ্য আমার কাছে রয়েছে। দু’শো অধ্যাপককে নিয়োগ করেছিল ওরা (বামফ্রন্ট সরকার)। অধ্যাপক নিয়োগ তখন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা ছাড়া হতো না। তাঁদের ৬৫ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। কিন্তু যাঁরা নিযুক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের একজনেরও সেই নম্বর ছিল না। এখন আমরা যদি বলি, সিপিএমের আমলে কারা চাকরি পেয়েছিল, তাঁদের তাড়িয়ে দাও, সেটা হয় না।’’