ধৃত: ফরকানুর ইসলাম। —নিজস্ব চিত্র।
এ দেশে ঢুকে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে সৌদি আরবে যাওয়ার ছক ছিল। সেই মতো নিজের নামে এ দেশের আধার কার্ড, জন্মের শংসাপত্র, ব্যাঙ্কের পাসবুক তৈরি করে ফেলেছিল এক বাংলাদেশি। পাসপোর্ট তৈরির আবেদনও করেছিল। ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’-এ ধরা পড়েনি কিছু। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দেশে ফেরার সময়ে অভিবাসন দফতরের কর্তাদের তল্লাশির সময়ে ধরা পড়ে যায় সে।
সোমবার সন্ধ্যায় পেট্রাপোল সীমান্তের অভিবাসন দফতরের পক্ষ থেকে ফরকানুর ইসলাম নামে ওই বাংলাদেশিকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। বছর ছাব্বিশের যুবকের বাড়ি বাংলাদেশের বিশালপুরে। তার কাছ থেকে এ দেশের জন্ম শংসাপত্র, আধার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাসবুক এবং পাসপোর্ট তৈরির ‘অ্যাকনলেজমেন্ট কপি’ পাওয়া গিয়েছে।
পুলিশ ও অভিবাসন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ফরকানূর বাংলাদেশের পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে এ দেশে এসেছিল। কলকাতায় দু’দিন ছিল। তারপরে বেঙ্গারুলুতে যায় আমিনূর ইসলাম নামে এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে। ভারতে সব মিলিয়ে ৮৭ দিন কাটিয়েছিল ওই যুবক। বেঙ্গারুলুতে দর্জির কাজও জুটিয়ে নেয়। ওই আত্মীয়ের সাহায্যেই এ দেশের আধার কার্ড এবং বেঙ্গালুরুর ব্যাঙ্কের পাসবুক তৈরি করে। ‘ফুরকান’ নামে হাবরা পুরসভার একটি জন্মের শংসাপত্রও তৈরি করেছিল ফরকানুর। হাবরার পুরপ্রধান নিলীমেশ দাস অবশ্য দাবি করেছেন, গত চার মাসে ফুরকান নামে কারও জন্মের শংসাপত্র দেওয়া হয়নি।
ওই সব শংসাপত্র দিয়ে এ দেশের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছিল। তবে কিছু দিনের জন্য দেশে ফেরার কথা ছিল তার। সেই মতোই সোমবার পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরছিল। সেখানেই ধরা পড়ে যায় ওই যুবক। ধৃতকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে সৌদি আরবে শ্রমিকের কাজ করতে যাবে বলেই এ দেশে এসেছিল ফরকানুর।
কিন্তু কেন এ দেশের পাসপোর্টের প্রয়োজন হল তার? বাংলাদেশ থেকেই তো যেতে পারত। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, আরব দেশগুলিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাজে নেওয়া হয় না। কয়েক বছর ধরে সৌদি আরব বাংলাদেশিদের সে দেশের ওয়ার্কিং ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করেছে। সেখানে ভারতীয় শ্রমিকদের চাহিদা রয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে আরবে যেতে এক জনের খরচ পড়ে বাংলাদেশি ১০ লক্ষ টাকা। কিন্তু ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে আরব দেশগুলিতে যেতে খরচ পড়ে বাংলাদেশি টাকায় মাত্র সাড়ে ৩ লক্ষ। সে কারণেই ভারতীয় পাসপোর্টের চাহিদা বাড়ছে ওই দেশে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, পাসপোর্ট তৈরির চক্র এ দেশে সক্রিয়। পাসপোর্ট তৈরি করে দিতে তারা দু’আড়াই লক্ষ টাকা নেয়। কিছু দিন আগে বারাসত থেকে ওই চক্রের কয়েকজন ধরাও পড়েছিল।