প্রতীকী ছবি।
রাস্তার পাশে কোথাও সিগন্যালের স্তম্ভ গোড়া থেকে ভেঙে পড়ে আছে। কোথাও মরচে ধরা সিগন্যাল স্তম্ভ সড়কের পাশে তুলে রাখা হয়েছে। দীর্ঘ দিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে স্তম্ভগুলি অকেজো হয়ে গিয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে এটি পরিচিত দৃশ্য। সরকারি সম্পত্তি এ ভাবে পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ায় ক্ষুব্ধ শহরের মানুষ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে কয়েক বছর আগে ঘটা করে অশোকনগর–কল্যাণগড় পুরসভার চৌরঙ্গী, ৮ নম্বর কালীবাড়ি মোড়, কচুয়া মোড়, কল্যাণগড় মোড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বসানো হয়েছিল স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল। উদ্দেশ্য ছিল, পথ দুর্ঘটনা কমিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা ও আধুনিক ট্র্যাফিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। কিন্তু তার কোনওটাই হয়নি বলে অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, পুর এলাকায় একাধিক রাস্তা থাকায় যানজটের সমস্যা তেমন নেই। কিন্তু সেই সুযোগে বহু গাড়ি চলে বেপরোয়া গতিতে। সিগন্যাল ব্যবস্থায় সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু তেমন কিছু ঘটেনি।
সিগন্যাল লাগানোর পরে তাতে লাল-সবুজ আলো জ্বলত ঠিকই। কিন্তু চালকদের কেউই সেই নিয়ম মানেননি বলে অভিযোগ। পুলিশও কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে জানালেন শহরের অনেক বাসিন্দা। আরও অভিযোগ, পরবর্তী সময়ে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণেও গোলযোগ দেখা দেয়। ফলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সিগন্যালের আলো লাল-সবুজ হচ্ছিল না।
বর্তমানে সিগন্যাল ব্যবস্থা পুরোপুরি অকেজো হয়ে গিয়েছে। যদিও বিষয়টিকে ‘মন্দের ভাল’ তকমা দিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কারণ, কিছু দিন আগেও যখন তখন সিগন্যালে সবুজ বা লাল আলো জ্বলে থাকত। যান চালকেরা তাতে বেশি সমস্যায় পড়তেন। বিশেষ করে যাঁরা গাড়ি নিয়ে বাইরে থেকে আসতেন, তাঁরা রাস্তার নিয়ম বুঝে উঠতে পারতেন না।
অশোকনগরে রয়েছে মিলেনিয়াম সায়েন্স পার্ক। সারা বছর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ গাড়ি নিয়ে বেড়াতে আসেন। ‘ভূতুড়ে সিগন্যাল’ ব্যবস্থার জেরে তাঁরা লাল আলো দেখে দাঁড়িয়ে পড়তেন। অন্য গাড়ি এসে সেই গাড়িকে ধাক্কা মারত, এমন ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে বলে অভিযোগ। এখন অবশ্য সিগন্যালে আর কোনও আলোই জ্বলে না।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবহণ দফতরের টাকায় পুরসভার তরফে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার সেটির উদ্বোধন করেছিলেন। অশোকনগরের প্রাক্তন বিধায়ক সত্যসেবী করের অভিযোগ, ‘‘পুরো টাকাটাই জলে গেল। শহরে সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করেও তা কার্যকর করতে কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করেননি। এলাকার মানুষও সিগন্যাল ব্যবস্থা মানেননি।’’ তিনি আরও জানান, চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় সিগন্যাল অপারেটরের ঘর করা হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেখানে কেউ বসেননি। পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার অবশ্য বলেন, ‘‘ওই সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করতে দ্রুত পদক্ষেপ করা হচ্ছে। পুরসভায় বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, পরিবহণ দফতরের অনুমতি নিয়ে পুরসভা সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করবে।’’ তাঁর দাবি, এখন শহরের যান নিয়ন্ত্রণ করতে পুরসভার তরফে ট্রাফিক কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সিভিক ভলান্টিয়ারেরাও রাস্তায় থাকেন।