খোশ মেজাজে প্রার্থী।—নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘ টালবাহানা, ক্ষোভ-বিক্ষোভ, দল ছাড়ার প্রচ্ছন্ন হুমকি, মান-অভিমানের পালা সাঙ্গ হল। বসিরহাট পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কংগ্রেসের টিকিটেই মনোনয়নপত্র জমা দিলেন প্রবীণ নেতা অসিত মজুমদার।
২০১০ সালে ওই ওয়ার্ড থেকেই জয়ী হয়ে অসিতবাবু স্ত্রী কৃষ্ণাদেবী বসিরহাটের পুরপ্রধান হয়েছিলেন। এ বারও জেলা কংগ্রেসের বারাসাতের সদর কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে অসিতবাবুর ভাই জেলা কংগ্রেসের সভাপতি (গ্রামীণ) অমিত মজুমদার ওই ওয়ার্ডের প্রার্থী হিসাবে বৌদি কৃষ্ণাদেবীর নাম ঘোষণা করেছিলেন। বুধবার অবশ্য মনোয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে ওই আসনে মনোনয়ন দেন অসিতবাবু। পরে তিনি বলেন, “স্ত্রী অসুস্থ থাকায় প্রার্থী হতে চাইছেন না। কর্মীরা জোর করায় প্রার্থী হলাম।” দলের সঙ্গে পুরনো তিক্ততা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাকে সন্মান দিয়ে প্রার্থী করা হয়েছে। এখন সব বাদ দিয়ে শুধু লড়াইয়ের চিন্তা।”
সম্প্রতি বারাসতে এক বৈঠকে দলের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অসিতবাবুর বদলে তাঁর ভাই অমিতকে জেলা কংগ্রেসের সভাপতি (গ্রামীণ) পদে বসান। আটটি পুরসভার কো-অর্ডিনেটর হিসাবেও অমিতের নাম ঘোষণা করেন। তা শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অসিতবাবু। সে সময়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, “অধীর চৌধুরী উল্টো-পাল্টা সিদ্ধান্ত নিয়ে কংগ্রেস দলটাকে শেষ করতে চাইছেন বলে তাঁর পদত্যাগের দাবি করছি।” অসিতবাবু এআইসিসি-র সদস্য হওয়ায় তাঁকে অধীরবাবুর সরানোর ক্ষমতা নেই বলেও ওই দিন মন্তব্য করেছিলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা। আরও এক ধাপ এগিয়ে অসিতবাবু বলেন, “অসম্মান করায় আমাদের পক্ষেও পুরভোটের জন্য প্রার্থী তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।” দল উপযুক্ত সন্মান না দিলে অন্য কোন সিদ্ধান্ত নিতে তিনি প্রস্তুত বলেও জানিয়ে দেন অসিতবাবু। ভোটের আগে তিনি দল ছাড়বেন কিনা, তা নিয়ে জেলার রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়। অসিতবাবুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় (ডাকু) তাঁর কাউন্সিলর ভাইকে (কংগ্রেসেরই) নিয়ে যোগ দেন তৃণমূলে। সব মিলিয়ে অসিতবাবুকে নিয়েও নানা মহলে শুরু হয় আলোচনা। এ দিন সব জল্পনার অবসান হয়েছে। পদ খুইয়েও অসিতবাবু যে দল ছাড়ছেন না, তা-ও স্পষ্ট হয়েছে। তাঁকে ঘিরে আড়ালে যে নানা টিকা-টিপ্পনি চলছে, তা বিলক্ষণ জানেন অসিতবাবু নিজেও। যদিও এ দিন নতুন করে কোনও বেফাঁস মন্তব্য করেননি তিনি। তাঁর অনুগামীদের অবশ্য বক্তব্য, আচমকাই পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে অন্যায় হয়েছে অসিতবাবুর সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে তাঁর দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব না দিয়ে উচিত কাজ হয়নি। বসিরহাট, টাকি এবং বাদুড়িয়ার সব ক’টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে জানিয়ে অমিতবাবু বলেন, ‘‘বৌদি একটু অসুস্থ। তা ছাড়া, ওয়ার্ড কমিটির সদস্যেরা দাদাকে প্রার্থী করতে চাইছেন। তাই শেষ পর্যন্ত ওঁকেই প্রার্থী করা হল।” এ দিন দুপুরে বাদুড়িয়া, টাকি এবং বসিরহাট পুর এলাকা থেকে গাড়ি, বাস, মোটর বাইকে করে প্রার্থীদের হয়ে বিভিন্ন দলের বহু কর্মী-সমর্থক এসেছিলেন বসিরহাটের মহকুমাশাসকের দফতর চত্বরে। বসিরহাটের এসডিপিও-র নেতৃত্বে বাদুড়িয়া, বসিরহাট এবং হাসনাবাদ থানার পুলিশ আধিকারিকেরা উপস্থিত ছিলেন। র্যাফও মোতায়েন করা হয়।
এ দিকে, বিজেপি এবং বামফ্রন্টের পক্ষেও মহকুমার তিনটি পুরসভার জন্য প্রার্থী দেওয়া হয়। বসিরহাটে বিজেপির থেকে টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন রঞ্জিত তালুকদার। তাঁর কথায়, “আমার মতো কয়েক জনকে বিজেপি কথা দিয়েও টিকিট দেয়নি। তাই নির্দল হয়ে মনোনয়ন জমা দিলাম।” বিজেপি নেতা হাজারিলাল সরকার বলেন, “কেউ যদি নিজেকে প্রার্থী বলে ঘোষণা করে বসেন, তাতে আমাদের কী আছে?” তাঁর দাবি, দলে কোনও ক্ষোভ-বিক্ষোভ নেই।
মহকুমাশাসক শেখর সেন জানান, তিনটি পুরসভার সব কটি আসনে তৃণমূল, বিজেপি, বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে। বসিরহাটে ৭টি আসনে নির্দল, ১টি করে আসনে এসইউসি এবং সিপিআইএমএল প্রার্থী দিয়েছে। বাদুড়িয়া ও টাকিতে ৬ জন নির্দলের হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।”