টাকা ফেললেই মিলত গাড়ির ভুয়ো লাইসেন্স

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, রঙিন ছবি কম্পিউটারে ফেলে তারপর কার্ডের উপরে ছবিটা লাগানো হয়। প্রিন্ট আউট বের করে তারপর তা ল্যামিনেশন করা হতো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ০১:১৩
Share:

উদ্ধার: নকল লাইসেন্স। ইনসেটে, ধৃত আশিস। নিজস্ব চিত্র

দু’চাকার জন্য ৩০০-৮০০ টাকা। আর চার চাকার জন্য নেওয়া হয় ১০০০-১৫০০ টাকা।

Advertisement

টাকার সঙ্গে দিতে হচ্ছে নিজের এককপি রঙিন ছবি। ব্যাস, তা হলেই অনায়াসে মিলছে ল্যামিনেশন করা ড্রাইভিং লাইসেন্স!

এ ভাবেই এতদিন ধরে ভুয়ো লাইসেন্সের কারবার চলছিল পেট্রাপোলে। কিন্তু শনিবার তা ভেস্তে দিল পুলিশের অ্যান্টি ক্রাইম টিম। এ দিন ওই টিমের সদস্যেরা পেট্রাপোল বন্দরে হানা দিয়ে চক্রের মাথা দোকান মালিককে গ্রেফতার করে। ওই দোকান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় শ’খানেক ভুয়ো ড্রাইভিং লাইসেন্স। খালি চোখে চট করে দেখলে বোঝা যাবে না যে লাইসেন্সগুলি ভুয়ো। পাশাপাশি আটক করা হয়েছে, ওই দোকানের কম্পিউটার প্রিন্টার ও ল্যামিনেশন মেশিন।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম আশিস ঘোষ। বাড়ি পেট্রাপোল গ্রামে। জেরায় ধৃত পুলিশকে জানিয়েছে, বছর খানেক ধরে সে ওই কারবার করছিল। মানুষ বুঝে দাম ওঠা নামা করে।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, রঙিন ছবি কম্পিউটারে ফেলে তারপর কার্ডের উপরে ছবিটা লাগানো হয়। প্রিন্ট আউট বের করে তারপর তা ল্যামিনেশন করা হতো।

থানার আইসি সতীনাথ চট্টোরাজ জানিয়েছেন, ধৃতকে জেরা করে চক্রের বাকিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, দিন কয়েক আগে একদিন গভীর রাতে বনগাঁ থানার পুলিশ টহল দেওয়ার সময় এক সন্দেহজনক যুবককে আটক করে। সে নিজেকে ট্রাক চালক হিসাবে পরিচয় দেয়। তার কাছ থেকে পুলিশ একটি ভুয়ো ড্রাইভিং লাইসেন্স পায়। সেই সূত্র ধরে তদন্তে নেমে পুলিশ আশিসের সন্ধান পায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে এ দেশে এসে বাংলাদেশিরা টাকার বিনিময়ে এ দেশে নথিপত্র তৈরি করে। তার কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে সহজেই এ দেশের নাগরিক হিসাবে পরিচয় দিয়ে তারা যাতায়াত করতে পারে। ভুয়ো লাইসেন্স দেখিয়ে তাদের গাড়ি চালানোর কাজ পেতেও সহজ হয়। বাংলাদেশিদের কাছে চক্রটি ড্রাইভিং লাইসেন্স বিক্রি করেছে কিনা পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

বনগাঁ মহকুমার অন্যতম প্রধান ব্যবসা পণ্য আমদানি-রফতানি। ওই কাজে ট্রাক চালক প্রয়োজন হয়। লাইসেন্স না থাকলে ট্রাক চালানো যায় না। কিন্তু পরিবহণ দফতরে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে নিয়ম কানুন মেনে লাইসেন্স পাওয়াটা কঠিন কাজ। কিন্তু ওই চক্রের কাছ থেকে সহজেই মিলে যায়। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ’ কর্মসূচির জেরে পুলিশ এখন রাস্তায় ধড়পাকড় করে বেশি। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে বাইক চালক ও যান চালকেরা ভুয়ো লাইসেন্সের দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে বাড়ছে পথ দুর্ঘটনাও।

পুলিশ জানিয়েছে, অপ্রশিক্ষিত হাতে অনেকেই গাড়ি চালাচ্ছে ভুয়ো লাইসেন্স নিয়ে। পুলিশের পক্ষ থেকেও সহজে লাইসেন্সগুলো ধরা সম্ভব হয় না। তাই ভুয়ো লাইসেন্সের চাহিদা প্রচুর। জেরায আশিস জানািয়েছে, জুলাই মাসে সে ৩৫টি ভুয়ো লাইসেন্স বিক্রি করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement