শান্তি সাহা। নিজস্ব চিত্র
পুলিশি হয়রানির ভয়ে পথেঘাটে অসুস্থ বা জখম ব্যক্তিকে ছুঁতে চান না অনেকে। হাবড়ার জিরাট রোডের বাসিন্দা বছর পঁয়তাল্লিশের শান্তি সাহা অবশ্য সে সবের তোয়াক্কা করেন না। দীর্ঘ দিন ধরে ট্রেনের ধাক্কায় বা পথ দুর্ঘটনায় আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কাজ করে চলেছেন শান্তি। পুলিশি হয়রানি বা ঝামেলার কথা মানতে চান না তিনি। শান্তির কথায়, “জখমকে রক্ষা করে পুলিশি ঝামেলায় পড়তে হয়নি। বরং পুলিশে বা রেলপুলিশ সাহায্যই করে। কিছু মানুষ হয় তো এড়িয়ে যেতে চান বলেই হয়রানির কথা বলেন।”
শান্তি জানান, গত ২০-২৫ বছর ধরেই এই কাজ করছেন। জিরাট রোডে শান্তির বাড়ির কাছেই রেললাইন। ট্রেন থেকে পড়ে বা ট্রেনের ধাক্কায় জখম হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। অনেক ক্ষেত্রে রেলপুলিশ না আসা পর্যন্ত কেউ ছুঁয়ে দেখেন না। তবে খবর পেলেই ছুটে যান শান্তি। জখমকে উদ্ধার করে ভর্তি করেন হাসপাতালে।
হাবড়া স্টেশনে ঢোকার আগে ট্রেনের কামরা থেকে পড়ে যান এক তরুণী। পাথরে ধাক্কা খেয়ে মাথা ফেটে যায়। এলাকার লোকজন তরুণীকে উদ্ধার করতে সাহস পাচ্ছিলেন না। খবর পেয়ে ছুটে আসেন শান্তি। টোটো ডেকে জখম তরুণীকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা জানান, মাথা ফেটে প্রচুর রক্ত বেরিয়েছিল। হাসপাতালে নিয়ে আসতে দেরি হলে বড় বিপদ ঘটতে পারত। বছর কয়েক আগে একবার কালীপুজোর সময়ে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে এক যুবকের
রেলের ধাক্কায় জখম হওয়ার খবর পান শান্তি। ঠাকুর দেখা মুলতুবি রেখে যুবককে হাসপাতালে নিয়ে যান
তিনি।
বাসিন্দারা জানান, শান্তির জন্যেই এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তাঁকে দেখে এলাকার অনেকে জখমদের হাসপাতালে পৌঁছে দিতে এগিয়ে আসছেন ইদানীং।
আদতে নেপালের বাসিন্দা শান্তি দীর্ঘ দিন ধরে আছেন হাবড়ায়। হাবড়া চৈতন্য কলেজে কর্মীদের জন্য ক্যান্টিন চালান। তাঁর কথায়, “অনেকেই জখমদের ধরতে সাহস পান না। তবে আমি ভাবি, আগে মানুষটাকে বাঁচাতে হবে। পরিবারের লোকজন তাঁর বাড়ি ফেরার পথ চেয়ে থাকেন। আমার জন্য যদি কারও জীবন বাঁচে, তার থেকে পুণ্যের আর কী হতে পারে!”
পুলিশের এক কর্তা বলেন, “সাধারণ মানুষ এগিয়ে এলে আমাদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। সকলের বোঝা উচিত, কাউকে উদ্ধার করলে কোনও সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় না। বরং জীবন একটা মানুষের বাঁচানো যায়।”