Hingalganj

ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতির নালিশ, তদন্তে প্রশাসন

প্রধান নিজের ছেলেকে পঞ্চায়েতের ঠিকাদারির বরাত পাইয়ে দিয়েছেন বলেও লিখিত অভিযোগে জানানো হয়েছে মহকুমাশাসককে।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ

হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২০ ০৭:১১
Share:

প্রতীকী ছবি।

হেমনগর থানার যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে আমপানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতি-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কিছু দিন আগে অভিযোগ করা হয়েছিল বসিরহাটের মহকুমাশাসকের কাছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিডিওকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হল।

Advertisement

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ যোগেশগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চার বাসিন্দা মহকুমাশাসকের দফতরে অভিযোগপত্র জমা দেন। এই পঞ্চায়েতের আরও কয়েকি বুথে কী ভাবে স্বজনপোষণ হয়েছে আমপানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে, তার বিশদ তথ্যও জমা দেওয়া হয়।

হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ি বলেন, ‘‘আমরা চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে তদন্ত করে দেখছি। তদন্তে যা উঠে আসবে, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। এখনও তদন্ত চলছে।” ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, এই পঞ্চায়েত এলাকা থেকে ৬ জন টাকা ফেরত দিয়েছে এখনও পর্যন্ত। এবং সব মিলিয়ে ৩৪ জন গোটা ব্লক জুড়ে টাকা ফেরত দিয়েছেন।

Advertisement

যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েতের প্রধান নগেন্দ্রনাথ বৈদ্য বলেন, ‘‘কিছু সদস্য কিছু উল্টোপাল্টা করে ফেলেছিলেন। আমি তা জানতে পেরেই প্রায় ৭০ জনের টাকা আটকে দিয়েছি।”

প্রধান নিজের ছেলেকে পঞ্চায়েতের ঠিকাদারির বরাত পাইয়ে দিয়েছেন বলেও লিখিত অভিযোগে জানানো হয়েছে মহকুমাশাসককে। প্রধান বলেন, ‘‘আমার ছেলে যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েত এলাকায় কাজ করে না।’’ হিঙ্গলগঞ্জের ব্লক তৃণমূল প্রেসিডেন্ট সইদুল্লা গাজি বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে দল আমপানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতি সহ্য করবে না।” হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অর্চনা মৃধা বলেন, ‘‘আমরা দলগত ভাবে বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধান, বুথ সভাপতি সহ সকলকে নিয়ে বৈঠক করে নির্দেশ দিয়েছিলাম, যে সব বাড়িতে একাধিক মানুষ আমপানের ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়েছেন, তাঁদের থেকে কিছু টাকা নিয়ে সেই এলাকায় যাঁরা একদমই ক্ষতিপূরণ পাননি, তাঁদের দিতে হবে। সেই মতো গোবিন্দকাটি, সাহেবখালিতে অনেক মানুষের থেকে টাকা নিয়ে যাঁরা পাননি, তাঁদের দেওয়া হয়েছে দলগত ভাবে।’’ অন্য পঞ্চায়েতগুলিতেও এমনটা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। অর্চনার বক্তব্য, ‘‘দুর্নীতির কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে এলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”

প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগপত্রের সঙ্গে যে নথি দেওয়া হয়েছে, তাতে নাম আছে পঞ্চায়েতের ২২২/২২৩ নম্বর বুথের পঞ্চায়েত সদস্য বিমল মণ্ডলের। অভিযোগ, তিনি নিজে তো বটেই, সেই সঙ্গে স্ত্রী, ছেলে, মা, ভগ্নীপতি, ভাগ্নে, বোন, ভাই, ভাইপো, বৌমা-সহ পরিচিত আরও কয়েকজনকে বাড়ি ভাঙার ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার টাকা করে পাইয়ে দিয়েছেন।

বিমল বলেন, ‘‘আমার নাম দিয়েছিলাম। অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে। তবে স্ত্রীর নাম আমি দিইনি। আর ছেলের নাম দিয়েছিলাম তবে টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছি।’’ তাঁর দাবি, মায়ের নাম ক্ষতিপূরণের তালিকায় দিয়েছিলেন, কারণ মা আলাদা থাকেন। তবে তাঁর টাকা এখনও আসেনি।

এত আত্মীয়স্বজন কী করে ক্ষতিপূরণ পেলেন? বিমলের যুক্তি, ‘‘আমার আত্মীয় বলে কী ক্ষতিপূরণ পাবেন না ওঁরা? সবার তো বাড়ি আলাদা।’’ কিন্তু সকলের বাড়ির কি সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে? বিমলের সাফাই, ‘‘আমাদের বলা হয়েছিল, ১০ শতাংশ আংশিক ক্ষতি দেখিয়ে সবটাই পূর্ণ ক্ষতি দেখাতে।’’

কে দিলেন এমন পরামর্শ?

তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি বিমল। উল্টে তাঁর দাবি, ‘‘চক্রান্ত করে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’’ ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের তালিকায় আছেন ২৩৩ নম্বর বুথের সদস্য তপতী মণ্ডল। তিনি নিজে, তাঁর স্বামী, মেয়ে, জামাই, শ্বশুর, শাশুড়ি, বাবা, ভাই ২০ হাজার টাকা করে পেয়েছেন। তপতী বলেন, “আমি নতুন রাজনীতিতে এসেছি। চুরি কী জিনিস জানি না। আমি শুধু আমার স্বামী আর শ্বশুরের নাম দিয়েছিলাম। তাঁরা ছাড়া আর কেউ টাকা পাননি এখনও। আমাকে কালিমালিপ্ত করতে বিরোধীরা এ সব অভিযোগ করছেন।” তাঁর আরও দাবি, বিরোধীরা তাঁর আত্মীয়দের নাম, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা প্রয়োজনীয় আরও তথ্য ‘কৌশলে’ বের করেছে। যোগেশগঞ্জের বাসিন্দা বিজেপি নেতা অমল মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা চাই সঠিক তদন্ত হোক। দোষীরা শাস্তি পাক। সেই সঙ্গে যাঁরা দুর্নীতি করে টাকা পেলেন, তাঁদের টাকা ফেরত নেওয়া হোক।” যোগেশগঞ্জের সিপিএম নেতা রবি বিশ্বাসের কথায়, ‘‘আমাদের চেনাজানা যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েতের অনেক বাসিন্দা আছেন, যাঁরা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য। অথচ পাননি এখনও। আর কিছু মানুষকে আংশিক ক্ষতিপূরণ হিসাবে পাঁচ হাজার করে দিয়ে তৃণমূল নিজেদের মুখরক্ষা করেছে। অথচ যাঁরা দোতলা পাকা বাড়িতে থাকেন, তৃণমূল করেন অথবা তৃণমূল নেতার আত্মীয়স্বজন— তাঁরা ২০ হাজার টাকা করে পেয়েছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement