—প্রতীকী চিত্র।
‘‘যে লোকটার বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত আর্থিক প্রতারণা তো দূর, কোনও দুর্নীতির অভিযোগ পর্যন্ত ওঠেনি, আর্থিক প্রতারণার অপবাদে তাঁরই প্রাণ চলে গেল? ১০ বছরের ছেলেটাকে নিয়ে আমি এ বার কোথায় যাব?’’ হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন শাশ্বতী মিত্র সরকার। সামনে তাঁর স্বামী পার্থসারথি মিত্রের (৪৭) নিথর দেহ। পার্থসারথির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শনিবার মধ্যমগ্রামের রানিপার্ক এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে তুমুল ক্ষোভ তৈরি হয়। শাশ্বতী ও স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, মানসিক হেনস্থার কারণেই পার্থসারথির মৃত্যু হয়েছে।
পার্থসারথি ছিলেন রানিপার্কের পুরনো বাসিন্দা। পাড়ায় তাঁর একটি দোকান ছিল। সেই দোকানের ভাড়া চাওয়া ও দেওয়াকে কেন্দ্র করেই ঘটনার সূত্রপাত। এ দিন মধ্যমগ্রাম থানায় জেনারেল ডায়েরিতে শাশ্বতী জানিয়েছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে দোকানটি পার্থসারথি ভাড়া দেন তিন জনকে। অভিযোগ, তিন মাস দেওয়ার পরে আর ভাড়া দিচ্ছিলেন না ভাড়াটেরা। ভাড়া চাওয়ায় উল্টে পার্থসারথির বিরুদ্ধেই সাইবার অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল বলে শাশ্বতীর দাবি। যার জেরে তাঁর অ্যাকাউন্ট লক করে দেয় ব্যাঙ্ক। আটকে যায় পার্থসারথির ছেলের চিকিৎসাও। সামগ্রিক ঘটনায় চরম মানসিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েন তিনি। শুক্রবার রাতে আচমকা বুকে ব্যথা অনুভব করেন পার্থসারথি। গভীর রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। এমনও অভিযোগ উঠেছে, দোকান ছাড়া তো দূর, উল্টে পার্থসারথির জিনিসপত্রও দোকান থেকে নিয়ে গিয়ে দরজায় তালা মেরে চলে যান ভাড়াটেরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানান, বার বারই ব্যবসা হচ্ছে না বলে ভাড়া বাকি থাকার কথা বলছিলেন ভাড়াটেরা। তাই পার্থসারথি তাঁদের দোকান ছাড়তে বলেন। স্থানীয় ক্লাবের সদস্য সাগর দেবের অভিযোগ, ভাড়াটেরা দোকান ছাড়তে রাজি হলেও অগ্রিম-সহ বাড়তি টাকা দাবি করছিলেন। পার্থসারথি বলেছিলেন, বকেয়া ভাড়া কেটে টাকা ফেরত দেবেন। অভিযোগ, এক ভাড়াটের অ্যাকাউন্ট থেকে পাঁচ হাজার টাকা পাঠানো হয়। তার পরে পার্থসারথির বিরুদ্ধে সাইবার থানায় অ্যাকাউন্ট জালিয়াতি করে টাকা তোলার অভিযোগ করা হয়। সাগরের কথায়, ‘‘পুলিশের অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাঙ্ক পার্থসারথির অ্যাকাউন্ট লক করে দেয়। চরম বিপাকে পড়েন তিনি।’’ তাঁর ছোটবেলার বন্ধু বিভাস সাহা বলেন, ‘‘পার্থের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ উঠতে পারে, ভাবতেই পারছি না।’’
এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে সাইবার থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। ভাড়াটে তিন জন হলেও শাশ্বতী ও স্থানীয়দের একাংশ পুরো ঘটনার জন্য নির্দিষ্ট ভাবে দায়ী করেছেন শুধুমাত্র এক জনকে। তিনি পেশায় আইনজীবী। তিনিই পার্থসারথির উপরে মানসিক নির্যাতন করেছিলেন বলে অভিযোগ শাশ্বতীর। সেই ব্যক্তি, আকাশ বোধককে এ দিন একাধিক বার ফোন করা হয় এবং মেসেজ পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজের উত্তর দেননি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, সাইবার ক্রাইম থানায় যখন অ্যাকাউন্ট জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের করা হল, তখন পুলিশ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট লক করিয়ে দিল। কিন্তু মৃত্যুর ৪৮ ঘণ্টা আগে অবধি পার্থসারথিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হল না কেন? এর পিছনে পার্থসারথিকে শুধু হেনস্থা করার উদ্দেশ্যই দেখছে পরিবার ও পরিজনেরা। এ বিষয়ে বারাসত পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্পর্শ নীলাঙ্গি বলেন, ‘‘ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে।’’