গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগ অশোকনগরে

ওদের বেশি আয়ু নয়, বললেন ডাক্তার

বার বার কাকুতি-মিনতি করছিলেন রোগিণীর বাড়ির লোক। কিন্তু ইঞ্জেকশন, নেবুলাইজার দিয়ে রোগিণীকে ছেড়ে দেন অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক। বলেন, ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

অশোকনগর শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৭ ০০:৪৭
Share:

বসন্তকুমার নায়েক (৫০)

বার বার কাকুতি-মিনতি করছিলেন রোগিণীর বাড়ির লোক। কিন্তু ইঞ্জেকশন, নেবুলাইজার দিয়ে রোগিণীকে ছেড়ে দেন অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক। বলেন, ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।

Advertisement

কিন্তু কিছুই ঠিক হয়নি। বুধবার ভোরে দ্বিতীয়বার হাসপাতালে আনার পরে ভর্তি নেওয়া হয় কামনা দাসকে (৩২)। ভর্তি নেওয়া হলেও কয়েক মিনিটের মধ্যে মারা যান তিনি। অশোকনগর জলকল্যাণপল্লির বাসিন্দা কামনা ছিলেন খর্বাকৃতি (বামন)। তাঁর পরিবারের লোকজন যখন গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগ তুলে ক্রমশ গলার সুর চড়াচ্ছেন, সে সময়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের একটি ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে বোঝান, এ ধরনের মানুষ (বামন) বেশি দিন বাঁচেন না। আয়ু বড়জোর ৩০-৩৫ বছর। ফলে এ নিয়ে এমন বাড়াবাড়ি করার কিছু হয়নি।

চিকিৎসকের এ হেন মন্তব্যে আরও উত্তেজনা ছড়ায়। কামনাদেবীর বাড়ির লোকজন ডেকে আনেন তাঁদের আত্মীয়-পরিচিতের মধ্যে খর্বাকৃতি আরও কয়েকজনকে। যাঁদের বয়স আবার পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে। ‘‘তখন ডাক্তারবাবু স্রেফ আমতা আমতা করছিলেন’’, বললেন কামনার আত্মীয় অমল দাস।

Advertisement

কামনার ভাই আনন্দ দাস পরে হাসপাতাল সুপার, থানায় কর্ত্যবরত চিকিৎসক, নার্সের বিরুদ্ধে গাফিলতির লিখিত অভিযোগ করেছেন। হাসপাতাল সুপার সোমনাথ মণ্ডল জানান, বিষয়টি তাঁরা জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয়কুমার আচার্য বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

আরও পড়ুন:বিচারের খোঁজে ছুটছেন রুবি রায়

কী হয়েছিল কামনাদেবীর?

পরিচারিকার কাজ করেন দরিদ্র পরিবারের মেয়ে কামনা। কিছু দিন ধরেই সর্দি-কাশি ছিল। পরে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। মঙ্গলবার রাত ২টো নাগাদ তাঁকে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান আত্মীয়েরা।

তাঁরা জানিয়েছেন, মিনিট পনেরো ডাকাডাকির পরে ইমার্জেন্সি থেকে বেরিয়ে আসেন ডাক্তারবাবু। কামনাকে দেখে ওষুধ লিখে দেন। ইঞ্জেকশন দেন নার্স। চিকিৎসক আশ্বাস দেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই সুস্থ বোধ করবেন রোগিণী। সামান্য সর্দি-কাশির বেশি কিছু হয়নি। কামনাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। কিন্তু কামনার অবস্থা দেখে তাঁর বাড়ির লোকজন বারবারই চিকিৎসককে অনুরোধ করেন, তাঁকে যেন হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক হাসপাতালেই অপেক্ষা করেন সকলে। কিন্তু তখনও সুস্থ বোধ করছেন না কামনা। ফের ডাক্তারবাবুকে ডাকেন বাড়ির লোকজন। এ বারও বেরিয়ে এসে চিকিৎসক জানিয়ে দেন, সবে ওষুধ পড়েছে। বাড়ি নিয়ে যান। সব ঠিক হয়ে যাবে।

চিকিৎসকের কথা আর ফেলতে পারেননি কামনার বাড়ির লোকজন। তাঁকে ফিরিয়ে আনেন বাড়িতে। কিন্তু ভোরের দিকে অবস্থা খারাপ হতে থাকে। সওয়া ৫টা নাগাদ ফের আনা হয় হাসপাতালে। এ বার রোগিণীকে ভর্তি নেওয়া হয়। ইঞ্জেকশনও দেওয়া হয়। কিন্তু মিনিট কয়েকের বেশি বাঁচেননি কামনা।

অভিযোগ, কামনা মারা যাওয়ার পরে বিষয়টি ‘মিটমাট’ করে নেওয়ার জন্য চাপ দেন ওই চিকিৎসক। কিন্তু উত্তেজনা বাড়তে থাকে। হাসপাতালে পুলিশ আসে। তার মধ্যেই ওই চিকিৎসক বাড়ি চলে যান। পরে অভিযোগ দায়ের হয় নানা মহলে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement