জখম আইনজীবী।
আদালতের নথিতে কারচুপির অভিযোগকে কেন্দ্র করে সোমবার তুলকালাম বাধল বসিরহাট আদালত চত্বরে। দু’দল আইনজীবীর মধ্যে মারপিট বাধে। জখম হয়েছেন দু’জন। ভাঙচুর, লুঠেরও অভিযোগ উঠেছে।
নজিরবিহীন এই ঘটনায় সরগরম বসিরহাট। জরুরি নথিতে কারচুপি করার অভিযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে পুলিশ-প্রশাসনও। মহকুমাশাসক শেখর সেন বলেন, ‘‘জরুরি নথি বাইরে বের করার একটা অভিযোগ পেয়েছি। প্রকৃত ঘটনা জানতে বসিরহাট থানার আইসি-কে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’’ বসিরহাট থানার আইসি গৌতম মিত্র বলেন, ‘‘আদালতের নথি বাইরে বের করা এবং আইনজীবীদের মারধরের বিষয়ে মহকুমাশাসকের নির্দেশে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
পুলিশ ও আইনজীবী মহলের একাংশ জানিয়েছে, মহকুমাশাসকের দফতরের এক্সিকিউটিভ কোর্টের আসল কেস রেকর্ড আদালতের বাইরে বের করে বিচারকের রায় পরিবর্তন করার একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠছিল কিছু দিন ধরেই। সোমবার বিকেলে তেমনই একটি অভিযোগ পেয়ে ফৌজদারি আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়-সহ কয়েক জন হাজির হন এক্সিকিউটিভ কোর্টের সরকারি আইনজীবী জগন্নাথ নাথের চেম্বারে। সেখানে একটি ম্যাজিস্ট্রেটের অর্ডার-সিট নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বচসা বাধে। ওই নথিতে কারচুপি করা হয়েছে বলে দাবি করেন বিশ্বজিৎবাবুরা। বাদানুবাদ গড়ায় হাতাহাতি, মারপিটে। জগন্নাথবাবুর দফতরে ভাঙচুরও চলে বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পরে বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে জগন্নাথবাবু-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। বিষয়টি জানানো হয় পুলিশকেও। মঙ্গলবার বিকেলে বার কাউন্সিলের পক্ষে এসডিপিও-র সঙ্গে দেখা করা হয়। এরপরেই মহকুমাশাসকের কাছে দায়ের করা আগের অভিযোগটিকেই এফআইআর হিসাবে গণ্য করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই বিচারকের পরিবর্তে কে বা কারা সুবিধা মতো রায় লিখে নিচ্ছে বলে একটা অভিযাগ আসছিল। এ দিন আদালতের নথি অবৈধ ভাবে আইনজীবী জগন্নাথ নাথের ঘরে এসেছে বলে আমাদের কাছে খবর আসে। তা উদ্ধার করতে গেলে জগন্নাথবাবু এবং তাঁর ছেলেরা আমাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ওই নথি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য জগন্নাথবাবু একটি লোহার রড বের করে আমাকে মারেন। অল্পের জন্য রড পেটে না ঢুকে হাতে বিঁধে যাওয়ায় প্রাণ বেঁচেছে।’’ জগন্নাথবাবু আইনজীবী দীপেশ গায়েনকেও লাথি মারেন বলে অভিযোগ বিশ্বজিৎবাবুর। জগন্নাথবাবু এবং তার ছেলেদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জন্য লিখিত অভিযোগ-সহ আসল যে কেস রেকর্ডটির অর্ডার-সিট আদালতের বাইরে বের করে নিজের ইচ্ছা মতো লেখা হচ্ছিল, তা মহকুমাশাসকের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিশ্বজিৎবাবু।
এই ঘটনার পরে আদালত চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, জগন্নাথবাবুর চেম্বারে তালা ঝোলানো। মোবাইলও বন্ধ। বাড়িতে গেলে জগন্নাথবাবু বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আসলে আমার কেসের আসামীদের শাস্তি হচ্ছে দেখে বিশ্বজিতের নেতৃত্বে আইনজীবীদের একাংশ বিরোধিতায় নেমেছে। তারাই এ দিন আমার উপরে চড়াও হয়ে মারধর করে বেশ কয়েকটি সরকারি নথিপত্র নষ্ট করে দিয়েছে। মোবাইল এবং কয়েক হাজার টাকাও লুঠ করেছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমার কাছ থেকে সরকারি নথি পাওয়া গিয়েছে বলে ওরা যে দাবি করছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’’
উভয় পক্ষের দাবি, বিষয়টি তাঁরা বার কাউন্সিলকে জানিয়েছেন। ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন আইনজীবীরা। বসিরহাটের বর্ষ়ীয়ান এক আইনজীবীর কথায়, ‘‘অভিযোগ যদি কিছু ক্ষেত্রেও প্রমাণিত হয়, তবে তা মারাত্মক। ম্যাজিস্ট্রেটের সই নকল করা হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা দরকার। কী করে মেমো নম্বর-সহ সরকারি নথি বাইরে চলে আসছে, তা ভাববার বিষয়। কারা এই চক্রে জড়িত, তা খতিয়ে দেখুক পুলিশ। বিষয়টির সঙ্গে বহু মানুষের স্বার্থ জড়িত।’’